Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কাস্টমস কর্মকর্তাদের সেবার মনোভাব বাড়াতে হবে

আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তাদের সেবার মনোভাব বাড়াতে হবে। তাহলে রাজস্ব আদায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভ‚মিকা রাখবে।
গতকাল রাজধানীর কুড়িলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সহজ করা দরকার। ইংরেজির পরিবর্তে বাংলায় রাজস্ব সংক্রান্ত সব আইন করতে হবে। এর ধারাবাহিকতায় এনবিআরকে পেপারলেস করা হবে। যদি এনবিআরকে পেপারলেস করা যায় তাহলে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি থাকবে না। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বন্দরে স্ক্যানার বসানো হবে। এর মধ্য দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্য স্ক্যান করা হবে। তাহলে দেশে কী পণ্য আসছে তার সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে। এতে পণ্য খালাসের সময় ও সঠিক রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। সেবার মানও উন্নয়ন হবে। পাশাপাশি কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। যেসব জায়গায় মালামাল খালাসে হয়রানির অভিযোগ আছে তা হ্রাস পাবে।
রাজস্ব আদায় সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যের তুলনায় পিছিয়ে আছে। তবে অনেক পিছিয়ে নেই। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। বিভিন্ন কারণে লক্ষ্য অর্জন করতে পারছি না। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সততার ঘাটতি আছে বলে মনে করি না। মুস্তফা কামাল বলেন, গত ৫ বছরে গড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা অনেক বড় ব্যাপার। দেশে যে সম্পদ আছে তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা গেলে রাজস্ব আদায় আরো বাড়ানোর সম্ভব।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ৩৫ বছর আগে যখন ব্যবসা শুরু করি তখন মালামাল বন্দর থেকে খালাস করতে ৪২টি জায়গায় যেতে হতো। এখন পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আরো সহজীকরণ করা দরকার। এক্ষেত্রে কাস্টমস কর্মকর্তারা সিরিয়াস হলে রফতানি খাতে লিড টাইম আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, আমদানি পণ্যের শ্রেণীবিন্যাসকে আরো সহজীকরণ করতে হবে। একটি এইচএস কোডে একাধিক আইটেমের পণ্য থাকে। কাস্টমস কর্মকর্তারা সব সময় রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে সর্বোচ্চ শুল্ক হারে পণ্য খালাস করতে চান। এতে শিল্প উদ্যোক্তা বা আমদানিকারকের মুনাফার যে হিসাব থাকে তা পূরণ হয় না। মুনাফা কমে গেলে উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, শুল্ক প্রশাসনের ক্ষমতা বেশি। এটার কারণে যাতে শিল্প বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের শুধু শুল্ক আদায় হয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে মসিউর রহমান বলেন, যারা বর্ডার পাহারা দেয় তাদের মধ্যে শুধু কাস্টমসেরই অস্ত্র নেই। তারপরও নিষ্ঠার সাথে কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শুল্ক আধুনিকায়নের সদস্য খন্দকার আমিনুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুল্ক নীতির সদস্য গোলাম কিবরিয়া। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আয়কর বিভাগসহ ১৪ কাস্টমস কর্মকর্তাদের সার্টিফিকেট অব মেরিট সনদ দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালিত: এদিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে ১২তম আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস পালন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। গতকাল সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআরের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে রাজমনি সিনেমা হল, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, শিল্পকলা একাডেমি হয়ে দুদকের সামনে দিয়ে রাজস্ব বোর্ড ভবন প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে নানা রঙের ফ্যাস্টুন ও ব্যানার প্রদর্শিত হয়। ছিল বাদক দলও। এছাড়া ঢাকার বাইরে এনবিআরের অধীনস্ত ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজেও পৃথকভাবে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপন করেছে।
আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসের সফলতা কামনা করে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবা গ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাবিøউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশে একযোগে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ