Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড়ের মাটি ইটভাটায়

পুড়ছে বনের কাঠ

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং ও ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সীমানা ঘেঁষে লামার ফাঁসিয়াখালীর বনাঞ্চলের ভেতরে গড়ে উঠেছে অবৈধ ১০ ইটভাটা। এসব ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তরের নবায়নযোগ্য কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। নেই সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের অনুমতি। তারপরও ইটভাটা মালিক ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়ে অনিয়মকে নিয়ম করে গত ৩ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও প্রশাসন নির্বিকার। এসব ইটভাটায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় গাছ কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় ও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে মাটি নিয়ে তৈরি হচ্ছে ইট। ভাটা মালিকরা দাবি করছেন, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, বনবিভাগ, থানা ও ফাঁড়ি পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা ইটভাটায় ইট তৈরি করছে। সরকারকে ইট উৎপাদনের প্রকৃত হিসাবে গরমিল দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে ভাটা মালিকরা। ইটের সাইজেও রয়েছে কারচুপি। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, এসব অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৩ টি ড্রাম সিমনি ও ৭ টি উঁচু চিমনি দিয়ে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও লোকালয়ের ভেতরে। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ভাটা লাগোয়া সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মূল্যবান গাছপালা। ইটভাটাগুলো ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ককে তিন পয়েন্ট থেকে ঘেরাও করে রেখেছে। এসব ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কার্বন ধুলা পড়ে সাফারি পার্ক ও পার্ক লাগোয়া বনাঞ্চলের গাছপালা বিবর্ণ হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য ও বসবাসরত লোকজন।
পাশাপাশি বনবিভাগের পাহাড় কেটে মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ছে ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বনাঞ্চলের ওপর।
বিবর্ণ হয়ে পড়েছে পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে সাফারি পার্কের পশুপাখি ও বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। এ অবস্থার কারণে বনাঞ্চলের বন্যহাতি ও বন্য পশুপাখির প্রাকৃতিক চলাচল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এসব ইটভাটার পরিবেশ বিধ্বংসী বিরূপ প্রভাবে পার্কের বেশ ক’টি বন্যপ্রাণী ও পাশের বনাঞ্চলের ভেতরে অন্ততঃ ৩ টি বন্যহাতির মৃত্যু ঘটেছে। পাশাপাশি ইটভাটার কারণে পরিবেশগত সঙ্কট দেখা দেয়ায় পার্কের দর্শনার্থীদেরও নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মিউনিসিপ্যাল এলাকা ব্যতিত অন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করতে হলে বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তত ১০ মাইল দূরে স্থান নির্ধারণপূর্বক সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু সাফারি পার্কের পাশে ফাসিয়াখালীতে গড়ে তোলা অবৈধ ১০ ইটভাটার ক্ষেত্রে সরকারি কোন ধরণের নিয়ম কানুন মানা হয়নি। শুধু প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অভিযুক্ত ভাটা মালিকরা পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাফারি পার্কের একেবারে পাশে ভাটা স্থাপনপূর্বক সেখানে ইট পোড়ানো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং চুনতি রেঞ্জের আওতাধীন হারবাং বিটের ও ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কটি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বহু প্রজাতির পশুপাখি নির্দিষ্ট বেষ্টনীর ভেতরে মুক্তভাবে বসবাস ও বিচরণ করে থাকে। বাইরের বনাঞ্চল থেকেও বিপন্ন বন্যপ্রাণীরা এ পার্কের বাইরের বনাঞ্চলে গিয়ে অবস্থান নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এ পার্কটির তিনদিকে লামার ফাঁসিয়াখালীতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ১০ ইটভাটা।
এসব ইটভাটা স্থাপনে জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতরের কোন ধরনের অনুমতিপত্র নেই।
ওইসব ইটভাটার কারণে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে সাফারি পার্কের পাশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বন্য জীবজন্তুর যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ইটভাটার জন্য জ্বালানি সংগ্রহ ও মাটি দিয়ে ইট তৈরির জন্য পাহাড় কাটার কারণে বনাঞ্চলে পশুর খাদ্যাভাব দেখা দেয়ায় এ বছর লামা বনাঞ্চলে অন্তত ৫টি বন্যহাতি মারা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ঘেঁষে লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এসব ইটভাটার মধ্যে ফাঁসিয়াখালী সাপেরগাড়া পুলিশ ফাঁড়ির পাশে প্রভাবশালী ব্যক্তি পিয়ারু ও শামসুদ্দিনের একটি ইটভাটা, সাফারি পার্ক ঘেঁষে পিয়ারু ও বশির চেয়ারম্যানের আরও দুটি ইটভাটা, হারগেজা এলাকায় নুর হোসেন চৌধুরীর একটি, সাপেরগাড়ায় ইমরানের একটি ও ইয়াংছায় নাছির উদ্দিনের তিনটি ইটভাটা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়

২০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ