মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেল যুক্তরাজ্য। শুরু হলো ইউরোপের সঙ্গে দেশটির দীর্ঘ ৪৭ বছরের সম্পর্ক ভাঙার দীর্ঘ ও কষ্টকর যাত্রার। ইইউ ছাড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ১১ মাসের এক অন্তর্র্বতী সময়কালে প্রবেশ করেছে যুক্তরাজ্য। এ সময়কালে দেশটি ইইউর বিধিবিধান মেনে চলবে। সদস্য হিসেবে জোটটিতে প্রদেয় অর্থ জোগান দেওয়াও অব্যাহত রাখবে। চুক্তিমতো, দুই পক্ষের মধ্যে ৩১ জানুয়ারির পর থেকে বেশির ভাগ বিষয়ই আগের মতো থাকবে। তবে কিছু পরিবর্তন আসবে।
পরিবর্তনগুলো হবে এ রকম
১. যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যপদ (এমইপি) হারাবেন : যুক্তরাজ্যের ৭৩ জন এমইপির মধ্যে রয়েছেন নাইজেল ফারাজ ও অ্যান উইডিকম্বের মতো ব্রিটিশ রাজনীতির সুপরিচিত মুখ। তারা সবাই ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পদ হারাবেন। নাইজেল ফারাজের প্রতিষ্ঠিত বিচ্ছেদপন্থি ব্রেক্সিট পার্টি ২০১৯ সালের মে-তে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের পক্ষে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছিল। ব্রেক্সিটের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে অন্তর্র্বতী সময়কালে যুক্তরাজ্য ইইউর বিধিবিধান মেনে চলবে। পাশাপাশি আইনগত বিরোধের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসই থাকবে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
২. যুক্তরাজ্য আর ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে থাকবে না : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইইউ কাউন্সিলের ভবিষ্যৎ কোনো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চাইলে তাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরাও এখন থেকে আর ইইউর নিয়মিত বৈঠকগুলোতে অংশ নেবেন না। এসব বৈঠকে সাগরে মাছ ধরার সীমাসহ বিভিন্ন জোট-সংক্রান্ত বিষয় ঠিক হয়।
৩. বাণিজ্য নিয়ে অনেক কথাবার্তা চলবে : যুক্তরাজ্য এখন থেকে বিশ্বজুড়ে সব দেশের সঙ্গে স্বাধীনভাবে পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে নতুন বিধিবিধান ঠিক করার আলোচনা শুরু করতে পারবে। ইইউর সদস্য থাকাকালীন দেশটির যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য আলোচনা করার অধিকার ছিল না। ব্রেক্সিট সমর্থকদের যুক্ত হচ্ছে, নিজস্ব বাণিজ্য নীতি স্থির করার স্বাধীনতা থাকলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। বাণিজ্য বিষয়ে ইইউর সঙ্গেও দেশটির অনেক কিছু আলোচনার আছে। যুক্তরাজ্য ও ইইউ বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে একমত হওয়া হচ্ছে একটি বড় অগ্রাধিকারের বিষয়। অন্তর্র্বতীকালীন পর্যায় শেষ হওয়ার পর পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্য প্রতিবন্ধক এড়ানোর জন্য এটি প্রয়োজন। তবে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হলেও অন্তর্র্বতীকালীন পর্যায় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর করা যাবে না।
৪. বদলে যাবে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টের রং : ৩০ বছরের বেশি সময় পর যুক্তরাজ্যের নীল রঙের পাসপোর্ট ফিরে আসছে। ১৯৮৮ সালে নীল পাসপোর্টের বদলে বারগ্যান্ডি রঙের পাসপোর্ট চালু হয়। ২০১৭ সালেই পুরনো পাসপোর্টে ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন তখনকার অভিবাসনমন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইস। তিনি সেদিন ‘প্রতীকে পরিণত’ নীল-সোনালি নকশার পাসপোর্ট ফিরে আসার বিষয়টির প্রশংসা করেছিলেন। ওই পাসপোর্টটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯২১ সালে। কয়েক মাস ধরে পর্যায়ক্রমে নতুন করে নীলরঙা পাসপোর্ট চালু করা হবে। বছরের মাঝামাঝি নাগাদ সব নতুন পাসপোর্ট নীল রঙে ইস্যু করা সম্ভব হবে। বর্তমান বৈধ বারগ্যান্ডি রঙা পাসপোর্টও আপাতত চালু থাকবে।
৫. নতুন করে ঢালাই হলো ব্রেক্সিট মুদ্রা : ব্রেক্সিট পিছিয়ে যাওয়ায় বিশেষ ব্রেক্সিট স্মারক মুদ্রা নতুন করে তৈরি করতে হয়। শুক্রবার থেকে বাজারে এসেছে পঞ্চাশ পেনি (আধা পাউন্ড) মূল্যমানের প্রায় ৩০ লাখ স্মারক ধাতব মুদ্রা। এই বিশেষ মুদ্রাটির গায়ে খোদাই করা হয়েছে ‘৩১ জানুয়ারি’ এবং ‘সব দেশের সঙ্গে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মৈত্রী’Ñ এ কথাগুলো। মুদ্রাটি নিয়ে ব্রিটিশদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইইউ-জোটে থেকে যাওয়ার পক্ষের কেউ কেউ বলেছেন, তারা লেনদেনের সময় এটি নিতে রাজি হবেন না। ব্রিটিশ সরকার গত ৩১ অক্টোবরই এ মুদ্রাটি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। কারণ, আগে ওই তারিখেই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সময়সীমা বাড়ানো হওয়ায় ওই মুদ্রাগুলো গলিয়ে ফেলে নতুন করে তৈরি করতে হয়।
৬. যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট দপ্তর বন্ধ হয়ে যাবে : ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্য-ইইউ আলোচনা ও চুক্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় নিয়ে কাজ করা দলটি ব্রেক্সিটের দিনই ভেঙে গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ২০১৬ সালে ‘ডিপার্টমেন্ট ফর এক্সিটিং দি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ বিষয়ে আগামী দফা আলোচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আলোচকদের ঘাঁটি হবে ‘ডাউনিং স্ট্রিট’।
৭. জার্মানি তার নাগরিকদের আর যুক্তরাজ্যে প্রত্যর্পণ করবে না : জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া কোনো কোনো সন্দেহভাজন অপরাধীকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব হবে না। জার্মানির সংবিধান অনুযায়ী সে দেশের নাগরিকদের অন্য আরেকটি ইইউ দেশ ছাড়া অন্য কোথাও প্রত্যর্পণ করা যায় না। জার্মানির কেন্দ্রীয় বিচার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে যাওয়ার পর এই ব্যতিক্রমটি আর প্রযোজ্য হবে না।’ এই বিধিনিষেধ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না তা এ মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। যেমন স্লোভেনিয়া বলেছে বিষয়টি জটিল। অন্যদিকে ইউরোপীয় কমিশন কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, অন্তর্র্বতীকালীন ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর হবে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, জার্মানি সে দেশের নাগরিক নয়, এমন ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ করতে পারবে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর আরও বলেছে, কোনো দেশের আইন যদি কাউকে যুক্তরাজ্যে প্রত্যর্পণ করায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে এটা প্রত্যাশা করা হবে যে, ওই দেশটিই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার ও তাকে দণ্ডিত করার দায়িত্ব নেবে।
যে সাতটি বিষয়ের কোনো পরিবর্তন আসবে না
ব্রেক্সিটের পরপরই অন্তর্র্বতীকালীন সময় শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অন্যান্য বিপুলসংখ্যক বিষয়ই একই ধরনের থেকে যাবে অন্তত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত। এগুলো হচ্ছে
১. ভ্রমণ : অন্তর্র্বতীকালে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইইউ জোটভুক্ত নাগরিক হিসেবেই দেখা হবে। দুদিকের মধ্যে বিমানের ফ্লাইট, নৌযান ও ট্রেন এখনকার মতো একইভাবে চলতে থাকবে। পাসপোর্ট কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে অন্তর্র্বতীকালে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা শুধু ‘ইইউ অ্যারাইভাল’-এর জন্য সংরক্ষিত লাইনে দাঁড়াতে পারবে।
২. ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পোষা প্রাণীর পাসপোর্ট : ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পোষা প্রাণীর পাসপোর্ট বৈধ থাকা সাপেক্ষে ইইউ অঞ্চলে গ্রহণ করা অব্যাহত থাকবে।
৩. ইউরোপিয়ান হেল্থ ইন্স্যুরেন্স কার্ড (ইএইচআইসি) : ইউরোপিয়ান হেল্থ ইন্স্যুরেন্স কার্ড অন্তর্র্বতীকালে বৈধ থাকবে। এ কার্ড অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নাগরিকদের রাষ্ট্রের খরচে চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়। এটি যেকোনো ইইউ দেশ এবং সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিখটেনস্টাইনে ব্যবহার করা যায়।
৪. ইইউ অঞ্চলে বসবাস ও কাজ করা : অন্তর্র্বতীকালে ইইউ অঞ্চলজুড়ে চলাফেরার স্বাধীনতা বহাল থাকবে। সুতরাং ব্রিটিশ নাগরিকরা এখনকার মতো করেই ইইউ দেশগুলোতে বসবাস এবং কাজকর্ম করতে পারবেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থান ও কাজ করতে আগ্রহী ইইউ নাগরিকদের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
৫. পেনশন : ইইউ দেশগুলোতে বসবাসরত ব্রিটিশ নাগরিকদের এখনকার মতো রাষ্ট্রীয় পেনশন পাওয়া অব্যাহত থাকবে। বার্ষিক বৃদ্ধিও পাবে তারা।
৬. বাজেটে প্রদেয় অর্থ : অন্তর্র্বতী সময়ে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ বাজেটে নিজেদের প্রদেয় অর্থ দিয়ে যাবে। এর অর্থ হচ্ছে ইইউ মঞ্জুরিপুষ্ট বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন অব্যাহত থাকবে।
৭. বাণিজ্য : যুক্তরাজ্য-ইইউ বাণিজ্য কোনো ধরনের বাড়তি শুল্ক বা নতুন কড়াকড়ি ছাড়াই বহাল থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।