Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতি বিমুখতা ভালো আলামত বহন করে না

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

জনগণ যে কার সঙ্গে আছে আর কার সঙ্গে নেই তা এখন বোঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আগে জনগণ কার সঙ্গে বা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আছে, তার একটা ধারণা প্রতি পাঁচ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পাওয়া যেত। সরকার যারা গঠন করতো স্বাভাবিকভাবে তারা দেশের সব মানুষকেই তার বলে ভাবার সুযোগ পেত। এখন জনগণ কার তা বোঝার উপায় নেই। সরকার থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো করে জনগণকে নিজের বলে দাবি করে যাচ্ছে। সরকার তো নিশ্চিত জনগণ কেবল তার সঙ্গেই আছে, আর কারো সঙ্গে নেই। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরও একই দাবী। অন্যদিকে জনগণের এই সময় ও সুযোগ নেই যে, মাথা তুলে আওয়াজ দিয়ে জিজ্ঞেস করবে, ‘আমি কার?’ যে নিজেই দৌড়ের উপর থাকে, তার অন্য কারো খোঁজ নেয়ার সময় থাকে না। আপন প্রাণ বাঁচিয়ে কোনো রকমে দিন গুজরান করতে পারলেই যেন স্বস্তি। কে তার সঙ্গে আছে, এ নিয়ে ভাবার ফুরসৎ নেই। রাজনীতি নিয়ে যে খোশগল্প করবে বা চায়ের কাপে ঝড় তুলবে, এটা তার কাছে এখন দূর অতীত। রাজনীতি ও রাজনীতির ধারক-বাহকরা তাদেরকে এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছে যে, এ নিয়ে আলাপ করার আগ্রহ এখন তাদের নেই। অথচ ইতিহাস বলে, আমাদের দেশের জনগণ সবচেয়ে বেশি রাজনীতিপ্রিয়। তারা রাজনীতি সচেতন এবং এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পছন্দ করে। ভোটের সময় উৎসবের মেজাজে থাকে। নিজ নিজ সমর্থিত দলের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চর্চা করে। তর্ক-বিতর্ক যাই হোক, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাল-মন্দ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারে। তাদের এই কথা বলার কারণেই আমাদের দেশে একটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সুদীর্ঘকাল ধরেই নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে থমকে গেলেও তাদের কথা বলা ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়েই তা পুনরুদ্ধার হয়েছে। এই যুগে, বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর ধরে ‘রাজনীতি’র প্রতি জনগণের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। রাজনৈতিক দল ও তাদের অনুগত কিছু লোকজনের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি থাকলেও সাধারণ মানুষ এ নিয়ে এখন আর তেমন মাথা ঘামায় না। এর কারণ, সাধারণ মানুষ এখন এমনই পেরেশানির মধ্যে আছে যে, ‘জান বাঁচানো ফরজে’ মনোযোগ দেয়া ছাড়া তার আর কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। সাধারণত আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনীতি নিয়ে তখনই আলাপ-আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়, যখন তাদের জীবনযাপনে টানাপড়েন কম এবং সহনীয় পর্যায়ে থাকে। সকালে কোনো রকমে খেলে রাতে কী খাবো, এ রকম পেরেশানিতে থাকতে না হয়। বর্তমানে তাদের এই চিন্তায় বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, তখন রাজনীতি নিয়ে তাদের আলাপ করার মতো মানসিক অবস্থা থাকে না। এখন বেশিরভাগ মানুষেরই সংসারের চাকা সচল রাখা দায় হয়ে পড়েছে। বাজারে গেলে মাথা গরম হয়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কেবল বাড়ছেই। বাজারে গিয়ে তারা হিসাব মিলাতে পারে না। তার উপর সরকার যখন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়িয়ে দেয় তখন তাদের মাথায় যেন বাজ পড়ে। সাধারণ মানুষ সরকারের এই দামবৃদ্ধি সইতে পারবে কিনা, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবে না। ভর্তুকি নামক অজুহাতে এবং লাভ করার জন্য দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা যে জনবান্ধব কোনো সরকারের কাজ নয়, তা বুঝতে চাইছে না। আবার এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনো বিকার নেই। তারা জনগণের হয়ে জোরালো কোনো প্রতিবাদও করছে না। ফলে জনগণের কি ঠেকা পড়েছে, সরকার ও বিরোধী দলের পক্ষে অবস্থান নেয়ার? রাজনীতি নিয়ে কেন তারা মাথা ঘামাবে?

দুই.
সাধারণ মানুষকে রাজনীতি বিমুখ করে তোলার ফলাফল কি ভালো হয়? এ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হতে পারে। যারা রাজনীতি বিমুখ করে তুলতে চান, তারা নিশ্চিতভাবেই বলবেন, সাধারণ মানুষের রাজনীতি নিয়ে ভাবার দরকার কি! এজন্য তো আমরা আছি। এ ধরনের কথাবার্তা যে কোনো দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না, তা বুঝতে চায় না। এ ধরনের কথা স্বৈরাচারি মনোভাবধারীরা বলে থাকেন। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সাধারণ মানুষকে জোর করে চুপ করিয়ে রাখে। চুপ করিয়ে রাখা জায়েজ করার জন্য উন্নয়নের ধোঁয়া তোলে। তারা মনে করেন, জনগণের সামনে যদি উন্নয়নের সাইনবোর্ড তুলে ধরা যায়, তবে তারা বেজায় খুশি হবে। এ উন্নয়ন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকেই চেপে ধরতে হবে। বিভিন্ন ছুঁতোয় তাদের পকেট থেকে অর্থ বের করে, তা দিয়েই উন্নয়ন করতে হবে। বলা হবে, আমরা নিজেরাই নিজেদের অর্থ দিয়ে উন্নয়ন করতে সক্ষম। কারো কাছে হাত পাততে হয় না। জনগণ যে উন্নয়নের চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে, সেদিকটি উপেক্ষা করে যায়। উন্নয়ন হোক বা না হোক কিংবা ফুটবল খেলায় গোল হোক বা না হোক রেফারির বাঁশি বাজানোর আগেই গোয়ারের মতো ‘আমরা জিতেছি, আমরা জিতেছি’ বলে লাফাতে থাকে। উন্নয়নের এই ফানুস জনগণের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে যে প্রান্তিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, তা মোটেও বিবেচনায় নেয় না। সাধারণ মানুষ কেবল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেখছে, কষ্ট করে যে পয়সা উপার্জন করছে তা উন্নয়ন নামক স্লোগান খেয়ে ফেলছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছে না। সঞ্চিত অর্থ ভেঙে খেতে খেতে নিঃস্ব অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে এক জীবনে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে পেতে তাদেরকে ইহলোক ত্যাগ করতে হবে। যাই হোক, সাধারণ মানুষের রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়া নিয়ে হয়তো মুক্তমনা শ্রেণী বলবে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা শক্তি ভিত্তি দিতে হলে সাধারণ মানুষের রাজনীতি নিয়ে ভাবার খুবই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তা নাহলে, দেশ ও জনগণ ভাল থাকতে পারবে না। সত্যিকার অর্থে তাদের এ কথাই সঠিক। আফসোসের বিষয়, তাদের এসব কথা যতই সঠিক হোক, এখন আর তার কোনো মূল্য নেই। কারণ শাসক শ্রেণী জনগণকে এমনই উন্নয়নের ঘোরের রাজনীতিতে ফেলে দিয়েছে যে, এসব কথা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো সুযোগ নেই। জীবনের তাকিদে তাদের কেবল দৌড়াতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষের এই অস্থিরতার মধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। আবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করবে। এ কথা শুনে সাধারণ মানুষের ঠিক থাকার কথা নয়। তারা বুঝতে পারছে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির নানাবিধ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের সইতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, বাসা ভাড়া বাড়বে, যানবাহনের ভাড়া বাড়বে-আরও কত কি! সুযোগ সন্ধানী বেনিয়ারা তো বসেই থাকে কোনো একটি ছুঁতোর অপেক্ষায়। যেসব পণ্যের সাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সম্পর্ক নেই, সেসব পণ্যের সাথেও টেনেটুনে এসবের দামবৃদ্ধির কারণ জুড়ে দেয়। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির অজুহাতটিও যে জুড়ে দেয়া হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বলা বাহুল্য, যে অপকর্ম করে সেও নানা যুক্তি দিয়ে অপকর্ম জায়েজ করার চেষ্টা করে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়েও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এন্তার যুক্তি উপস্থাপন করেছে। এরপর দেখা যাবে, গ্যাসের দামও বৃদ্ধি করা হবে। বছর তিনেক আগে এক মন্ত্রী গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বলেছিলেন, ‘ভাত-ডাল রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি অপচয়। গ্যাস অতি মূল্যবান, এটা দিয়ে ভাত-তরকারি রান্নার কোনো মানে হয় না।’ তার এ কথার পর জনগণকে মুখবন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাদের নীরবেই মেনে নিতে হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম ঘরানার কিছু দল প্রতিবাদ করেই থেমে গেছে। সরকারও জানে এ নিয়ে কিছুদিন হইচই হবে, তারপর থেমে যাবে। কাজেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা কোনো সমস্যাই নয়। আর জনগণের তো কোনো ভাষাই নেই। তাদের কথা নিঃশব্দেই থেকে যায়।

তিন.
জীবনে যখন অভাব-অনটন লেগে থাকে এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তখন কারো পক্ষে মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব নয়। এই মেজাজ খারাপের কারণ যদি সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে হয়, তখন তা সহাও যায় না কহাও যায় না। মানুষের এই অব্যক্ত বেদনা একসময় ক্ষোভে পরিণত হয়। বহু মানুষের ভেতর যদি ক্ষোভ দানাবেঁধে উঠে, তবে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সমাজে দেখা দিতে বাধ্য। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাসসহ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে সমাজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যাদের ক্ষমতা আছে, তারা অন্যেরটা কেড়ে নিয়ে নিজের অভাব পূরণ করে। এর অসহায় শিকার হয় সাধারণ মানুষ। আবার প্রভাবশালীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। যারা সাধারণ মানুষ তাদের তাদের যখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ দশায় পড়তে হয় বা নিজের সক্ষমতার বাইরে সবকিছু চলে যায়, তখন সংসারে চরম অশান্তি দেখা দেয়। অশান্তি থেকে অনেকে আত্মহননের মতো পথও বেছে নেয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সমাজে বেশির ভাগ আত্মহননের মূল কারণ পারিবারিক অশান্তি। এই অশান্তির পেছনের কারণ অর্থনৈতিক টানাপড়েন। তার পেছনের কারণ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অন্যতম। এর উপর বছর যেতে না যেতেই বাসাভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি তাদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, নগরে যারা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাদের আয়ের সত্তুর ভাগই খরচ হয়ে যায় বাসা ভাড়া দিতে গিয়ে। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ খাওয়া-দাওয়া, সন্তানের পড়ালেখা, আত্মীয়তা ও সামাজিকতা রক্ষা করা কি সম্ভব? বিশেষ করে যার আয় সীমিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠে। অধিকাংশ মানুষের এই সমস্যার কথা সরকার চিন্তা করে বলে মনে হয় না। যদি চিন্তা করত, তবে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণের যেমন ব্যবস্থা করত, তেমনি দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বৃদ্ধির চিন্তা করতো না। এছাড়া প্রায় সবক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের প্রক্রিয়াতো রয়েছেই। মানুষের ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে সমস্যা হতো না, যদি তাদের আয়-রোজগার ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়ার মতো অবস্থা থাকত। এই যে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, এটা যে কত বড় শুভংকরের ফাঁকি, তা ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তারাই বলছেন, যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, এক সময় তা মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ এর সাথে সিংহভাগ সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির যোগসূত্র নেই। ভারতে এখন যেমনটি হচ্ছে। দেশটির জিডিপি সরকার এতটাই উচ্চে দেখিয়েছিল যে এখন তার কঙ্কাল অবস্থা দেখা যাচ্ছে। জিডিপি ৩ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। আমাদের দেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সরকার তার উন্নয়ন দেখানোর জন্য জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি এখন উচ্চ হারে দেখাচ্ছে বটে, তবে একটা সময় তা ভারতের মতোই হতে পারে। নিশ্চিতভাবেই সরকার অর্থনীতিবিদদের এই মতের সাথে একমত পোষণ করবে না। না করাই স্বাভাবিক। কারণ কোনো সরকারই তার দেখানো সাফল্য ম্লান করতে চাইবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের এই সাফল্যের মধ্যে সাধারণ মানুষ ভাল নেই। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুঃখের বিষয়, সরকারের মনোভাব এমন, তার প্রশাসনে যারা চাকরি করছে, তারা ভাল থাকলেই আর কারো ভালো থাকার প্রয়োজন নেই। কাজেই তাদের বেতন বৃদ্ধিসহ যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, তা বাড়ালেই কাজ হয়ে যাবে। তাদের আয় বৃদ্ধি মানে জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি। কোনো সরকার যদি এরকম একদিকদর্শী হয়, তবে সে দেশের সাধারণ মানুষের ভাল থাকতে পারে না।

চার.
সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তোলা কোনো সুশাসকের কাজ হতে পারে না। সুশাসকের কাজ হচ্ছে মানুষের আরাম-আয়েশ ঠিক রেখে দেশ পরিচালনা করা। কোনো সুশাসকের আমলে জিনিসপত্রের দাম যখন-তখন বৃদ্ধি কল্পনাও করা যায় না। দাম বৃদ্ধি হতেই পারে, তবে তা যদি আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হয়, তাতে কারো আপত্তি থাকে না। পৃথিবীর সব দেশেই এ হিসাব করে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করা হয়। আমরা শায়েস্তা খাঁর আমলের কথা স্মরণ করি এ কারণে যে, তিনি প্রজাদের অতি অল্প দামে জিনিসপত্র ভোগ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। জনগণের আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করেছিলেন। এখন আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে অহরহ বলা হচ্ছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তবে এ ক্ষমতা কত বেড়েছে, তার হিসাব দেয়া হয় না। এটা তো স্বাভাবিক কথা, বাঁচতে হলে মানুষকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা প্রয়োজনের তুলনায় কতটা কিনছে? এক কেজির পরিবর্তে আধা কেজি কিনে কোনো রকমে প্রয়োজন মেটাচ্ছে কিনা? জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সাথে একজন মানুষকে যে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে, এ অর্থ সে জোগাড় করবে কী করে, এ বিষয়টি সরকার ভাবছে না। সরকার যদি মনে করে, জিনিসপত্রের দাম বাড়বেই, সাধারণ মানুষ তা কীভাবে কিনবে তা দেখার দায়িত্ব তার নয়, তাহলে বলার কিছু নেই। বলার আছে এটুকুই, এ ধরনের মনোভাব কোনো দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব সরকারের হতে পারে না। সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলে দাবিয়ে রাখার ফল শুভ হয় না।
[email protected]



 

Show all comments
  • M ismail Kabir Ahmed ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১:৩৪ পিএম says : 0
    shorkare jara ace tara choke rongin choshma lagaya cole tai je dike nozor dey shei dike rongin & shondor lage karon poketer obostha khob bhalo jonogon tader dorkar nai ..............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতি

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন