Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙন আতঙ্কে উপকূলবাসী

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

উপক‚লবাসীর দু:খ দুর্দশার যেন কোনো শেষ নেই। বছর জুড়েই প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। একটা দুর্যোগ শেষ হতে না হতে সামনে এসে দাড়ায় আরেকটি দুর্যোগ। এ উপক‚লবাসী অভিশপ্ত জীবনের অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে প্রতি বছর বাঁধ ভাঙন।
ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপক‚লের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫৯৭ কিলোমিটার বাঁধ পানির তোড়ে ভেসে যায়। উপকূলের মানুষের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। ২০০৯ সালে আইলার পর ১০ বছরেও তা নির্মিত হয়নি। জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ সংস্কারে অর্থের অপচয় ও প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী ও ক্ষতিগ্রস্ত উপক‚লবাসী। এদিকে খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গেটের কাছে বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত রোববার গভীর রাত থেকে ভাঙন শুরু হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে উপক‚লবাসী। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছেন।
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পরে ধীরে ধীরে বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। পরে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছে। সময়ের ব্যবধানে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা না নিলে নোনাপানিতে বিস্তৃত এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সেকশন অফিসার মশিউল আবেদীন বলেন, গত রোববার রাতে ভাঙনের কথা জেনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আইলার পর ‘উপক‚লীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ-১’ এর আওতায় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, পটুয়াখালি, বরগুনায় ৬২৫ কিলোমিটার বাঁধ পুননির্মাণে বৃহৎ প্রকল্প নেয়া হয়। এছাড়া ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প (২য় পর্যায়), ২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট জেলার ৩৬/১ পোল্ডারে পুনর্বাসন প্রকল্প, ৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার দাকোপে ৩১নং পোল্ডার এবং বটিয়াঘাটায় ৩০ ও ৩৪/২ পোল্ডারে বাঁধ পুর্নসংস্কারের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে অবকাঠামো পুনর্বাসন (দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল) প্রকল্প, নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়), এফডিআর ২০০৭ (ওয়ামিপ) প্রকল্প। কিন্তু এতসব প্রকল্পের পরও ঘূর্ণিঝড় ফণিতে উপক‚লের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ছিল বেড়িবাঁধের ভাঙন। এই ঘূর্ণিঝড়ে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ধ্বসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়মের কারণে বাঁধ সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যে তা আগের চেহারায় ফিরে যায়।
কয়রার ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল গাফ্ফার ঢালি বলেন, বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনীহা রয়েছে। নামমাত্র বাঁধ সংস্কার হয়, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে তারা কাজটা করে না। যে পয়েন্টে বাঁধ ভাঙে জোড়াতালি দিয়ে সেখানে তা সংস্কার হয়। তখন আবার অন্য অংশ ভাঙন দেখা দেয়। বছরের পর বছর তাদের এই ব্যবসা বন্ধ হয় না।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ খাউলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, চায়না প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে বাঁধ নির্মাণ কাজে ধীরগতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এখানে নদী তীরে চরের মাটি কেটে বাঁধ উঁচু করা হয়েছে। এতে বাঁধের ঢাল না থাকায় বাঁধ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। নকশা না মেনেই অনেক স্থানে বাঁধের ঢালটা ১ থেকে দেড় ফুট কমিয়ে ফেলা হয়েছে। মাটি বিক্রি নিয়ে আর্থিক অনিয়মে জড়িয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও ঠিকাদারের লোকজন।
এদিকে বাঁধ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, উপক‚লের ভরাট হতে থাকা নদী ড্রেজিং করে নদীর তীরে ১০-১৫ ফুট চর তৈরি করা গেলে এবং বাঁধের ভেতরে ও বাইরে পরিকল্পিত বনায়ন করা হলে এই বাঁধ ৫০ বছরেও নড়বে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ