Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাষানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:২৮ পিএম

হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সাজানো নোয়াখালীর ভাষানচরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট ওই দ্বীপ সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে বসবাস উপযোগী করা হয়েছিল। কিন্তু এতে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে আসছিলো জাতিসংঘসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা। সরকারের তরফে এ নিয়ে বহুবার ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে বলা হয়, সরকার জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাষানচরে পাঠাবে না। এ অবস্থায় গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারে চড়ে ভাষানচর ঘুরে দেখেন। প্রথমবারের মতো ভাষানচর পরিদর্শনে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন ঢাকায় ফিরে জানান, ভাষানচরে রোহিঙ্গা নয়, বিকল্প চিন্তা করছে সরকার। তিনি বলেন, এত সুন্দর জায়গা ভাষানচর।
সেখানে রোহিঙ্গাদের পাঠানো উচিত হবে না বরং দেশের মানুষ যাদের বাড়িঘর নেই সেখানে তাদের পাঠানো উচিত।
ভাষানচরকে সম্ভাবনার জায়গা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সেখানে আপাতত কয়েকশ’ ঘর তৈরি হয়েছে। আরো ঘরবাড়ি তৈরি হবে। আমরা ওই এলাকাকে আরো উন্নত করবো। মন্ত্রী বলেন, আমি সেখানে যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে ওটা সিঙ্গাপুরের মতো সম্ভাবনাময়। আমরা সেভাবেই এটাকে গড়ে তুলতে চাই। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হলে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেন। আর আগে থেকে এখানে অবস্থান করা প্রায় চার লাখসহ ১২ লাখ বাড়তি মানুষ এখন উপজেলা দু’টির শরণার্থী শিবিরে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন। কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে এক লাখের মতো রোহিঙ্গা স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোয়াখালীর ভাষানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর আশ্রয়শিবির নির্মাণের প্রকল্প নেয় সরকার, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়, যেখানে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বসবাসের ব্যবস্থা করাই ছিল টার্গেট। নিরাপত্তার জন্য ভাষানচরে পুলিশ ক্যাম্প, নৌবাহিনীর একটি দপ্তর ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের জন্য ভবনও নির্মাণ করা হয়।
ভাষানচর প্রকল্পের বিস্তারিত: ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের টার্গেটে ১ হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউস, ১২০টি গুচ্ছগ্রাম, ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে। সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ লাইন, পুকুর খনন, স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আয়ের ক্ষেত্র তৈরিতে ছোট দোকান, বিক্রয় কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি মহিষ, হাঁস-মুরগি পালন, কুটিরশিল্প, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হেলিপ্যাডও। সব মিলিয়ে সরকারের দাবি মতে, সম্পূর্ণ বসবাসের উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে ভাষানচরকে। কিন্তু ওই চর পরিদর্শনকারী মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি বলেন, ভাষানচরে সাইক্লোন হলে কি পরিস্থিতি হবে সেটা না দেখে এবং দ্বীপটির সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত যাচাই না করে কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করে রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো উচিত হবে না। গত বছরের মাঝামাঝিতে তিনি চরটি পরিদর্শন করেন। পরবর্তী জাতিসংঘের একটি টেকনিক্যাল টিমের ভাষানচর পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু টার্মস অব রেফারেন্স নিয়ে ভিন্নমতের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ টিম বাংলাদেশ সফর করেনি। ভাষানচর মূলত দুইটি চরের সমন্বয়ে গঠিত। ঠেঙ্গারচর এবং জালিয়ারচর। চর দুটির অবস্থান পাশাপাশি হওয়ায় নাম নিয়ে নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ‘ভাষানচর’ নামকরণে সেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটে।



 

Show all comments
  • sats1971 ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ২:২০ পিএম says : 0
    If Royinghya move to shelter Vasanchar, It is better for Rohingya, They will get better facility than teknaf. Here is a school, hospital,play ground,market and others facility.Life style also city life and man.women,children are safe from Yaba business and trafficking. They have require many things in their life being as a human.UNITED NATION AND HOSTAGE GOVT trying to establish humanitarian in the world.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ