Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে গ্রেপ্তার হলেন এক ছাত্রী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৯:৩৭ পিএম

ভারতের ব্যাঙ্গালোরে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী জনসভায় 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেওয়ায় এক ছাত্রীকে দেশদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ভারতের শহর ব্যাঙ্গালোরের ওই ঘটনার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে। পুলিশ জানিয়েছে, দেশদ্রোহের অভিযোগে অমূল্যা লিয়োনা নামের ওই ছাত্রীকে দুসপ্তাহ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ওই ছাত্রীটির সম্ভবত নকশালপন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।মঞ্চেই ছিলেন ওই সভার স্টার বক্তা, কট্টরপন্থী বলে পরিচিত হায়দ্রাবাদের সংসদ সদস্য আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও। তিনিও ওই ছাত্রীকে থামাতে ছুটে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও দেখা যাচ্ছে লিয়োনাকে বাধা দিতে।
তবে অমূল্যা সবাইকে বলেন, এক মিনিট দাঁড়ান। আমাকে বলতে দিন। আবারও 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' বলার পরেই 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেন কয়েকবার। 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগানে গলা মেলাতে থাকেন সভায় হাজির কিছু মানুষ।
এইসময়ে তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিতে সমর্থ হন আয়োজকরা এবং পুলিশ তাকে টানতে থাকে।
এবার লিয়োনা খালি গলায় বলতে শুরু করেন যে, কেন তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ আর হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান একই সঙ্গে দিচ্ছিলেন। কিন্তু বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে মাইক ছাড়া তার কথা বিশেষ বোঝা যায়নি।এরপরে তাকে পুলিশ টানতে টানতে মঞ্চ থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়।
হায়দ্রাবাদের সংসদ সদস্য ওয়াইসি জানান যে, মাগরিবের নামাজ পড়তে যখন মঞ্চের পিছন দিকে যাচ্ছিলাম, হঠাৎই শুনি ওই মেয়েটি স্লোগান দিচ্ছে। থাকতে না পেরে নামাজ না পড়েই আমি ছুটে আসি। ও যদি মেয়ে না হত, তাহলে যে আমি কী করে ফেলতাম জানি না। এখন বিজেপি একটা সুযোগ পেয়ে গেল। ওরা বলতে থাকবে ওয়াইসির জনসভায় এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে।
তবে ওই ঘটনার কোনও প্রভাব দেশজুড়ে চলতে থাকা এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের ওপরে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন ৪৬ দিন ধরে ধর্নায় বসে থাকা কলকাতার পার্ক সার্কাসের আন্দোলনকারীরা।
ওই লাগাতার ধর্নার অন্যতম উদ্যোক্তা আসমাৎ জামিল বিবিসিকে বলছিলেন, এরকম স্লোগান দেওয়াটা কখনই উচিত হয় নি। আমরা হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ বলছি - আর একই সঙ্গে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলব? আমাদের দেশের সঙ্গে একই স্বরে পাকিস্তানের সমর্থন! এটা কখনই উচিত হয় নি ওই মেয়েটির। তবে একজন বা দুজনের ভুলের প্রভাব আমাদের গোটা আন্দোলনের ওপরে পড়বে না, আমরা পড়তে দেবই না।
ব্যাঙ্গালোরের উপ পুলিশ কমিশনার বি রমেশ বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করেছে এবং ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪-এ ধারায় অভিযোগ এনেছে। পুলিশ বলছে ওই ছাত্রীটি দেশের মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছিল।
তবে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' বলাটা দেশদ্রোহ কী না, তা নিয়েও বিতর্ক আছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্যের কথায়, আইনের চোখে এটা আদৌ দেশদ্রোহ নয়।
প্রথমত মেয়েটি 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' বলার সঙ্গে সঙ্গে 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ'ও তো বলেছে। ভারতের নাগরিক হয়ে অন্য কোনও দেশের নামে জিন্দাবাদ বলাটা অপরাধ নয়, তিনি বলেন।
কেউ যদি ইংল্যান্ড জিন্দাবাদ বা ইউএসএ জিন্দাবাদ বলে, তাহলেও কি দেশদ্রোহের অভিযোগ উঠবে? এই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসছেন, আর তার আগে একজন তার মূর্তি বানিয়ে পুজো করছে - তাকে তো দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে না? মি. ভট্টাচার্য বলেন।
যদি দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সংবিধান ভেঙ্গে দেওয়ার পরিকল্পনা করে, সেটা দেশদ্রোহ। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করা দেশদ্রোহ নয়। আসলে বর্তমান সময়ে যারা আইন প্রয়োগ করছে তারা আইনের অপব্যবহার করছেন, মি. ভট্টাচার্য বলেন।
অমূল্যা ব্যাঙ্গালোরের একটি কলেজে পড়েন। সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী সভাগুলোতে কড়া ভাষণের জন্য তিনি আলোচনায় উঠে আসেন।
যদিও কেন তিনি 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' আর 'হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ' একসঙ্গে বলছিলেন, সেটা মঞ্চ থেকে বোঝাতে না পারলেও নিজের ফেসবুক পাতায় তার ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি লিখেছেন, "হিন্দুস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান, চীন আর ভূটান জিন্দাবাদ। আমি কোনও একটি রাষ্ট্রের নামে জিন্দাবাদ স্লোগান দিলেই আমি সেই রাষ্ট্রের অংশ হয়ে যেতে পারি না। আইন অনুযায়ী আমি ভারতের নাগরিক। নিজের দেশকে সম্মান করা আর দেশের মানুষের জন্য কাজ করা মহৎ কাজ। আমি সেটাই করতে চাই। আমি দেখতে চাই এখন আরএসএসের লোকরা কী বলে! সংঘীরা তো এই পোস্ট দেখে ঘাবড়ে যাবে। আপনারা কমেন্টস করতে থাকুন। আমার যা করার আমি তাই করব।
এই ঘটনার পরেই চিকমাগালুরুতে মিজ. লিয়োনার গ্রামের বাড়িতে তার বাবার ওপরে চড়াও হয় কিছু ব্যক্তি।
তার বাবা ওসওয়াল্ড নোরোনাহ বিবিসিকে জানিয়েছেন, বলতে পারব না কত লোক ছিল। কিন্তু আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরেই হামলা হয়। আমি যদি তখন বাড়িতে থাকতাম, তাহলে বেঁচে থাকা কঠিন হত। হামলার আগে আমাকে গালিগালাজ করেছে ওরা। মেয়ের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসা করছিল। আমি তখনই পুলিশে খবর দিই। কিন্তু রাস্তা খারাপ থাকায় পুলিশের পৌঁছতে দেরি হয়।
মি. নারোনাহ পেশায় কৃষক। বিধানসভা ভোটের সময়ে তিনি বিজেপির হয়ে প্রচারেও সামিল হয়েছিলেন। আর যারা তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তারাও বিজেপির সমর্থক বলেই অভিযোগ তার।
আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুবই ভাল ছিল। কিন্তু যখন থেকে ও নাগরিকত্ব আইন বিরোধী ধর্না-মিছিলে যেতে শুরু করেছে, তখন থেকেই ওর পড়াশোনায় মন বসছে না, বলছিলেন অমূল্যার বাবা।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়ার প্রেক্ষিতে কর্ণাটকের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা শুক্রবার মহীশূরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানান, একজন পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিল - তার প্রতিবাদ জানাচ্ছিল যখন একটি সংগঠন, তার মধ্যে একটি মেয়েকে দেখা গেল একটি পোস্টার নিয়ে বসে আছে : দলিত মুক্তি, কাশ্মীরের মুক্তি, মুসলিমদের মুক্তি'। আমাদের খুঁজে বার করতে হবে যে, এই কম বয়সী ছাত্রীদের কারা মদত দিচ্ছে এসব করতে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ