Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যে কোন দেশ ভ্রমণের সতর্কতা আইইডিসিআর’র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

নতুন করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই জিটিল রূপ ধারণ করছে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ পরিস্থিতে যে কোন দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর। জরুরি প্রয়োজন না হলে চীনসহ এবং অন্যান্য দেশে ভ্রমন থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতে দ্রুত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারে পৌঁছেছে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে গত শনিবার। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬১ জনে।

গতকাল রোববার কোভিড-১৯ নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর।
প্রফেসর ফ্লোরা বৈশ্বিকভাবে জটিল পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, চীনের বাইরে হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যাদের চীন ভ্রমনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তারাও এরোগ আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ এই ভাইরাস স্থানীয় ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। নিজ নিজ দেশেই কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণের সোর্স (কিভাবে সংক্রমিত হয়েছে) জানা যাচ্ছে না। এই তিন কারনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনা পরিস্থিতি জটিল হিসাবে উলে¬খ করে এক্ষেত্রে নজরদারী বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, পুরো বিষয় বিশ্লে¬ষণ করে এ পরিস্থিতে আইইডিসিআর মনে করছে, যে কোনও দেশেই ভ্রমনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। অত্যাবশ্যকীয় না হলে এই সময়ে বিদেশ ভ্রমন এড়িয়ে চলাই ভাল। একান্ত ভ্রমন করতে হলে অবশ্যই ভ্রমনকালীন সতর্কতা মেনে চলতে হবে। পাশপাশি কোনও রোগীর শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ রয়েছে কিনা সেদিকে নজর রাখা, তার কাছাকাছি না যাওয়া, হাত মেলানো-কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা এবং জনসমাগম স্থলে না যেতে পরামর্শ প্রদান করেছেন তিনি।
এছাড়া বিদেশ থেকে ফেরার পরে (যে দেশ থেকেই হোক) শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই আইইডিসিআর’র হটলাইনে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো তিনি। আমরা বিশ্লেষন করে যদি নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় তাহলে সেটিও করা হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ব পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, চীনে রোগীর সংখ্যা দ্রুত কমেছে তবে চীনের বাইরে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় লেবানন এবং ইসরাইল নতুন করে আক্রান্ত দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর রোগী সংখ্যার দিক থেকে রয়েছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরে এবং আরবব আমিরাতে পাঁচ জন করে বাংলাদেশি রোগী চিহ্নিত হয়েছে।
এছাড়া আইইডিসিআর’র হটলাইনে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯টি ফোনকল এসেছে। যার মধ্যে ৪৫টি কলই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত। দুজন সরাসারি পরামর্শ নিতে এসছেন। আইইডিসিআর এ পর্যন্ত ৭৭টি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারও নমুনায় করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া যায়নি।
মৃত্যু আড়াই হাজার আক্রান্ত প্রায় ৮০ হাজার : চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতে দ্রæত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজারে পৌছেছে। এ ভাইরাসের সংক্রমণে আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে শনিবার। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬১ জনে। যাদের মধ্যে ১৯ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু ঘটেছে চীনে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের পর দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালি ভাইরাস উপদ্রুত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার দেশটির মূল ভ‚খন্ডে ৬৪৮ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৩৯৭ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৩৬ জনে। আর ২৯টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৮ হাজার ৭২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট। গত শুক্রবার চীনে মোট ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন ভাইরাসে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ৯৬ জন। তাতে চীনের মূল ভ‚খন্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৪২ জনে। এছাড়া চীনের মূল ভ‚খন্ডের বাইরে আরও চারজনের মৃত্যুতে শনিবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ইরানে পাঁচজন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চারজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও ইতালিতে দুজন করে এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স ও তাইওয়ানে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। এ রোগ যাতে অন্যান্য দেশে মহামারি আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তার মতে, এখনও এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে যত সময় যাচ্ছে, সুযোগ ততই কমে আসছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা : দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ায় দেশটির সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেছেন, দেশ বড় ধরনের সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে আগামী কয়েকদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, রোববার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু এবং ৬ শতাধিক আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ইতালি ও ইরান ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে পদক্ষেপ : ইতালির মিলান ও ভেনিসের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কঠোর কোয়ারেন্টাইন বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ বিশেষ অনুমোদন ছাড়া মানুষ ভেনেটো ও লোম্ব^ার্ডির একাধিক শহরে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই এলাকাগুলোর সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব ধরনের ক্রীড়া কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকা শীর্ষ ফুটবল লিগ সেরি আ’র তিনটি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। বিধিনিষেধ কার্যকর নিশ্চিতে পুলিশ এবং প্রয়োজন হলে সশস্ত্র বাহিনীগুলো কর্তৃপক্ষের ভ‚মিকা পালন করবে বলে জানিয়েছে সরকার।
ইরানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বেড়েছে। গত বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির সরকার ২৯ জন আক্রান্তের কথা নিশ্চিত করেছে। রোববার থেকে ১৪টি প্রদেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্ধ হলো স্যামসাং মোবাইল কারখানা : দক্ষিণ কোরিয়ার গুমিতে একটি কারখানায় এক কর্মীর করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্যামসাং। শনিবার স্যামসাং ইলেক্ট্রনিকসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের একটি মোবাইল ডিভাইস ফ্যাক্টরিতে এক ব্যক্তির করোনাভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি যেখানে কাজ করতেন তা ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের নিজস্ব কোয়ারেনটাইনে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সম্ভাব্য সংক্রমণের আশঙ্কায় পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইইডিসিআর

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ