Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনে ‘অশুভ শক্তির উত্থান হতে পারে’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন মূল্যায়ণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, দুই সিটির নির্বাচন ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত’। তবে একটি প্রচার আছে এই নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। সুজন মনে করে, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন। নির্বাচনই হচ্ছে ক্ষমতা বদলের একমাত্র বৈধ এবং শান্তিপূর্ণ পথ। ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে আমরা এক অশুভ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে পারি। দেশের শাসন ক্ষমতায় অশুভ শক্তির উত্থান হতে পারে। কারণ নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন অশুভ শক্তিকে পথ দেখায়। যার দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নিতে হবে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়ততে ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২০ : বিজয়ীদের তথ্য বিশ্লেষণ ও নির্বাচন ম‚ল্যায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ইসি যে ব্যর্থ তা সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সদিচ্ছারও অভাব রয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক কমেছে যা একটি অশনি সঙ্কেত।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ছিল ইসি এবং সরকারের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। জাতীয় নির্বাচনে দৃশ্যমান কারচুপি হয়েছিল। এবার অদৃশ্য কারচুপির অভিযোগ ওঠেছে। যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলোর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্টকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে কারচুপির তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল সুজন। এবারও তারা সেই দাবি জানাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সেক্টরে ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেশি সম্পদশালীরা বেশি নির্বাচিত হচ্ছেন। রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ আর ব্যবসায়ের রাজনীতিকীকরণ চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ইসির বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ভোটের মাধ্যমে জনগণকে অপমান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরাজয় মেনে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। না হলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসি, বিচার ব্যবস্থা, সংসদ, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন সব প্রতিষ্ঠান ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান মেরুদন্ড নিয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন কেমন হলো, তা জানতে নির্বাচনের পর সুজনের ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন ভোটের (পোল) ব্যবস্থা করা হয়। সুজনের প্রশ্ন ছিল, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে আপনি মনে করেন কি না?’ এতে ৪ হাজার ৩০০ জন অংশ নেয়। যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাদের ৯৪ শতাংশ বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। যদিও অনলাইন ভোট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়, এটি জনসাধারণের ধারণার অনেকটা ইঙ্গিত বহন করে।
মূলত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে খুবই অল্প ভোট পড়েছে। উত্তর সিটিতে গড় ২৫.৩৪ শতাংশ এবং দক্ষিণে গড়ে ২৯.৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। সুজন বলছে, এত কম ভোটার উপস্থিতির কারণ ভোট সুষ্ঠু হবে না এ ধরনের পূর্ব ধারণা। স্বল্প ভোটার উপস্থিতির আরো বেশকিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, একটি প্রচার আছে যে, নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। আমরা মনে করি, এই শান্তি অশান্তির চেয়েও ভয়াবহ। কেননা, ভয়ের সংস্কৃতির কারণে কেউ যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস না পায়, তবে সেই অন্যায়ের প্রতিকার পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার পরও যদি সেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়, তবে বুঝতে হবে প্রতিপক্ষ এখানে চরম দুর্বল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইসির সামনে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে তাদের সামর্থ প্রমাণের সুযোগ হিসেবে এসেছিল। কিন্তু ইসি সে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। আর ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে যে উদ্বেগ ও আস্থাহীনতা ছিল, এই নির্বাচনের পর তা ইসির পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বরং সেগুলো আরো প্রকট হয়েছে।
নাগরিকের মধ্যে এই উদ্বেগ ও আস্থাহীনতা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার পুরোপুরি ভেঙে পড়ার ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের একমাত্র বৈধ এবং শান্তিপূর্ণ পথ। একের পর এক নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের কারণে যদি ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ পথটি রুদ্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা এক অশুভ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে পারি। পাতানো নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে অশুভ শক্তির উত্থানের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। যার দায় সরকার ও ইসিকে নিতে হবে।
সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ