Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মশা যেন ভোট খেয়ে না ফেলে

ঢাকার নতুন দুই মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৪ এএম

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নতুন দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মশা যেন ভো খেয়ে না ফেলে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে সমস্যা। এখন থেকেই এই মশা নিয়ন্ত্রণে সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেদিকেও আপনাদের (নতুন মেয়র ও কাউন্সিলরদের) দৃষ্টি দিতে হবে। মশা আপনার ভো যেন খেয়ে না ফেলে। মশা ক্ষুদ্র হলেও অনেক শক্তিশালী এটা মাথায় রাখতে হবে। সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর দেবেন। যেন সঠিক ভাবে এটা (মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ) করা হয়।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। এর অগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার্যালয়ের শাপলা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
শেখ হাসিনা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে হলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যে কোন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। কাজেই সেই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেই স্ব-স্ব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন, সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের মনিটরিং জোরদার করার পাশাপাশি সরকারও এটি পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেবে বলেও জানান। তিনি বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়নের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করি এবং এর জন্য বাজেট দেই। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সেটা পর্যবেক্ষনের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেটা নিবিড় ভাবে আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।
এসময় শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি একটু আরও আগে যেতে চেয়েছি। আমি তো থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি। কারণ সরকার আসবে, সরকার যাবে। কিন্তু ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, উন্নয়নের কাজগুলি আবার থমকে যায়, যেটা হয়েছিল ১৯৯৬ পর্যন্ত ২০০১ পর্যন্ত যতগুলি কাজ আমরা করে গিয়েছিলাম তার সবগুলি কিন্তু থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা পুণরায় কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমি চাই যেন কোন ধরণের দুর্নীতি না হয়। কোনরকম অনিয়ম না হয়। তিনি দৃঢতার সঙ্গে বলেন, যদিও অনিয়ম-দুর্নীতি হয়, সে যেই হোক না কেন আমি তাকে ছাড়বো না, কাউকে ছাড়া হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত এবং সেই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেসব কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সম্পন্ন করতে চান। তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেন, কেউ যদি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে বা কোনরকম দুর্নীতি করে বা নয়-ছয় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুণরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাস,মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। সমাজের এই ক্ষতগুলো থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এর প্রভাবে আপনাদেরই সন্তান, ছেলে-পেলে বা বংশধররা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর জাতির পিতা এত অল্প সময়ের মধ্যে এত কাজ করে গেছেন, যেটা ভাবলে অবাক লাগে। আমি জানি না, পৃথিবীর আর কোনো দেশের নেতার এত দ্রুত একটা বিধস্ত দেশকে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন কি না? তার এই নেতৃত্বের ফলে এবং প্রশাসনিক দক্ষতার ফলে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নের কাজ শুরু করি। যার শুভ ফল দেশবাসী পেতে শুরু করে। তিনি বলেন, নিজে সম্পদশালী হবো, ব্র্যান্ড পরবো, হাইফাই সোসাইটি দেখবো। আর আমার গ্রামের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে, এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। জাতির পিতা এটা বিশ্বাস করতেন না, আমিও এটা বিশ্বাস করি না।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের টানা মেয়াদে বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের ফলে তৃণমূলের মানুষের জীবনযাপনের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে সেকথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষের যে আর্থিক স্বচ্ছলতা গ্রামগঞ্জে, যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল। যার জন্য জাতির পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করছেন। আমরা সেই লক্ষ্যটাই অর্জন করতে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের একটানা দেশ পরিচালনায় দেশের আথর্-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নে সার্বিক গতি এসেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিস্ময় এবং আমি বিদেশে গেলে বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র্র প্রধানদের একটাই প্রশ্ন থাকে যে, এত দ্রুত উন্নয়নটা কি করে করলেন? তিনি বলেন, গ্রামে বসেই গ্রামের জনগণ যেন শহরের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে তা নিশ্চিতেই তার সরকার তৃণমূণ থেকে সকল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার ক্ষমতায় থাকার জন্য নৌকা মার্কায় ভো দেয়ায় জনগণের প্রতি পুণরায় কৃতজ্ঞতা জানান।বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই আমি ঘোষণা দিয়েছি- এ সময়ে আমাদের দেশের কেউ আর গৃহহীন থাকবেনা।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে তার সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার তথ্য জানিয়ে এর সংক্রমন রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশকে কিভাবে মুক্ত রাখা যায় সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। একটি হাসপাতাল আমরা আলাদাভাবে করে দিচ্ছি এবং সেখানে ডাক্তার, নার্সসহ যারা সেবা দেবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, পোষাক ঠিক করা এবং তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করছি।
শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আগত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের নির্বাচিত হয়ে আসায় অভিনন্দন জানান এবং দলের নেতা-কর্মী সহ সকলকে আগামী ১৭ মার্চ জাতিয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের ও আমন্ত্রণ জানান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম একই স্থানে দুই সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত ১৭২ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান। ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত দুই মেয়রের পাশাপাশি ডিএসসিসিতে ১শ’ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭৫ জন সাধারণ এবং সংরক্ষিত আসন থেকে ২৫ জন মহিলা কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসিতে ৭২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৪ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসন থেকে ১৮ জন মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ ডিএসসিসিতে ১৭ মে এবং ডিএনসিসিতে ১৩ মে শেষ হবে।#

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ