Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লেখক-পাঠকের দৃষ্টিতে এবারের বইমেলা বেশ চমৎকার

রফিক মুহাম্মদ : | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

অমর একুশের গ্রন্থ মেলা মূলত লেখক-পাঠক ও প্রকাশকের মিলনমেলা। বলা যায় বাঙালীর প্রাণের উৎসব এই বই মেলা। এবারের বইমেলার বিদায়ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। আগামীকাল ২৯ ফেব্রুয়ারি এ মিলনমেলার ইতি ঘটবে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের বই মেলা ছিল একটু অন্যরকম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে উৎসর্গ করে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়। এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার স্টল বিন্নাস করা হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিনের নিয়ম ভেঙ্গে এবার ২ ফেব্রুয়ারি মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি স্টল দেয়ওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং উদ্যান অংশে মেলার পরিসর ছিল অত্যন্ত খোলা মেলা। এতে পাঠকরা বেশ স্বচ্ছন্দে ঘোরা ফেরা করতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে এবারের বই মেলাকে বেশ চমৎকার বলেই লেখক পাঠকরা মন্তব্য করেছেন।
তবে সুন্দর এই আয়োজনের মধ্যেও কিছুটা অসুন্দরের ছায়া পড়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় ‘আঘাতের’ অভিযোগে গ্রন্থ মেলায় বিক্রি হওয়া দুটি বইয়ের প্রকাশ, বিক্রি, বিতরণ ও বিপণন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। গত বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বই দুটির নাম ‘দিয়া আরেফিন’ এবং ‘দিয়া আরেফিন’র নানীর বাণী’। বই দুইটির লেখকের নাম দিয়ার্ষি আরাগ। সৃষ্টিঘর প্রকাশনা থেকে বই দুটি প্রকাশ করা হয়েছে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের লিটলম্যাগ চত্বরে এ বইটি বিক্রি হচ্ছিল। এ বই নিয়ে অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল তৌহিদী জনতা এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেছে বাংলা একাডেমির বই মেলায় কোন ইসলামী বই এর ষ্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বইমেলায় জঘন্য ভাষার ইসলাম বিরোধী বই বিক্রী হচ্ছে। গতকাল বই মেলা ঘুরে তাদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে নিষিদ্ধ দুটি বই গত বুধবারই মেলা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মেলার একাডেমি অংশে ইসলামী ফাউনেডশনের স্টল রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ইসলামী বই বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ইসলামী বই বিক্রি করছেন এমন প্রকাশের একাধিক স্টল দেখা গেছে। এর মধ্যে ১৮৩ নম্বর স্টল সিদ্দিকিয়া পাবলিকেশন্স এবং ১৮৪ নম্বর স্টল খোজরোজ কিতাব মহল লিমিটেড উল্লেখ যোগ্য। এ দুটি স্টলে কোরআন এবং হাদিসসহ বিভিন্ন ইসলামী বই বিক্রি করতে দেখা গেছে। আব্দুল আহাদ নামের একজন পাঠককে সিদ্দিকিয়া পাবলিকেশন্স থেকে নেয়ামুল কোরআন নামের একটি বই কিনতেও দেখা গেছে। এবারের মেলা কেমন জানতে চাইলে আব্দুল আহাদ বলেন, এবার অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। বেশ খোলা মেলা, ঘুরে ফিরে দেখে পছন্দ মতো বই কিনতে পারছি। স্টলের বিক্রেতা মাসুদুর রহমান বলেন, এবার খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের এখানে কোরআন-হাদিস এবং অন্যান্য ইসলামী বই কিনতে পাঠকরা আসেন। আলহামদুল্লিাহ বেশ ভাল বিক্রি হচ্ছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজি বলেন, গ্রন্থ মেলা সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রাণের মেলা। আমরা এ মেলাকে সার্বজনীন এবং সর্বাঙ্গীনভাবে সুন্দর করার চেষ্টা করেছি।
শিশুসাহিত্যিক সালমা কিবরিয়া বলেন, এ বছর বইমেলা খুবই সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। স্টল ও প্যাভিলিয়ন সাজানোও ভালো হয়েছে। কোনো ঝামেলা হয়নি। আর মুজিববর্ষকে সামনে রেখে এ বছরের বইমেলা খুবই গুরুত্বপ‚র্ণ ছিল। সব মিলিয়ে মেলার পরিবেশ ও আয়োজন অন্যবারের চেয়ে ব্যতিক্রম। তাই বাংলা একাডেমি ধন্যবাদ পেতেই পারে।
কবি ও প্রাবন্ধিক ন‚রুল হক বলেন, অন্য যেকোনো বারের চেয়ে এবারের মেলার পরিসর যেমন বেড়েছে, তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও। ম‚লমঞ্চের পাশাপাশি ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানটি এবার আরও বড় পরিসরে হওয়ায় অধিকসংখ্যক লেখক-পাঠক একসঙ্গে একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তারা নিজেদের মতবিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছে। বিষয়টি ইতিবাচক।
কলেজ পড়–য়া তরুণ সাব্বির আহসান বলেন, বইমেলা গোছাতে গিয়ে এবার আরও কিছুটা অগোছালো হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। কোন স্টল কোন দিকে সেটা বোঝা কঠিন ছিল। মেলায় খাবারের দোকানগুলো যেন জরুরি হয়ে উঠেছে। বেশি দামে সেখানে খাবার বিক্রি হচ্ছে। একটা বড় অংশের মানুষের জমায়েত দেখা গেছে খাবারের দোকানগুলোর চারপাশে। বইয়ের প্রয়োজনটা হওয়া উচিত সবচেয়ে বেশি। প্রকাশনার সংখ্যা বাড়িয়ে কিংবা খাবারের স্টল বাড়িয়ে পাঠকদের আনা যাবে না। ভালো বই, সঠিক প্রচারণা এবং পরিশ্রমী প্রকাশকদের সাথে মিলে সততার জায়গা থেকে মেলার জন্য কাজ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলা একাডেমি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ