Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্সই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

রেমিট্যান্স তার শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যখন অবনমন অব্যাহত, তখন রেমিট্যান্স বাড়ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রেমিট্যান্সই একমাত্র ‘ব্রাইট স্পট।’ গত রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসী কর্মীরা প্রায় ১৪৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের গেল আট মাসে প্রবাসী কর্মীরা সর্বমোট ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার পাঠিয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা চালকের ভূমিকা পালন করেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। তাঁর ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী ও বাস্তবোচিত। রেমিট্যান্সে যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, তার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। গত আড়াই বছর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এই অংকে পৌঁছালো। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক মুদ্রার এই রির্জাভ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম সাত মাসে পূর্ববর্তী বছরের সাত মাসের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৫.২১ শতাংশ। প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানী খরচ হিসাবে বর্তমান রিজার্ভে আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে এটা নি:সন্দেহে ইতিবাচক দিক এবং এই অর্জন সম্ভবপর হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর দূরদর্শী একটি সিদ্ধান্তের ফলে। আমরা এ জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় আমাদের অর্থনীতির দুই ‘লাইফ লাইন’। এ দুটি লাইফ লাইনের মধ্যে এখন শুধুমাত্র রেটিট্যান্সই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে। রফতানি আয় আগের চেয়ে ক্রমগত কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। ফলে আমদানি-রফতানির ভারসাম্যহীনতা দিন দিন বাড়ছে। আমাদের রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশের বেশি আসে গার্মেন্টপণ্য রফতানি থেকে। গার্মেন্টশিল্পে নানা সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। মূল্য কমানোসহ আমদানিকারকদের বিভিন্ন শর্ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে গার্মেন্টপণ্য রফতানি থেকে আয় বাড়ছে না। বরং তুলনামূলক হিসাবে কমছে। ওদিকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা, বিনিয়োগে গতিহীনতা ইত্যাদি তো আছেই। বলা যায়, রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির কোনো ক্ষেত্র বা সূচকেই আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না। বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক প্রেক্ষাপটে বিশেষত করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাপক অবনতির যে আশংকা করা হচ্ছে, তাতে আমাদের অর্থনীতিও বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে। আশংকার এই দিকটি এখনই বিবেচনায় নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অবকাঠামো ও জ্বালানি ক্ষেত্রে বড় বড় প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে বৈরিতার কারণে এসব প্রকল্পের কাজ ব্যহত হতে পারে। আশংকিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা আছে বলে সরকারের তরফে আশ্বাস দেয়া হলেও জনগণের অর্থনীতির অবস্থা কিন্তু দিন দিনই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন-অগ্রগতির লক্ষণ বা প্রমাণ হিসাবে যদিও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, মাথাপিছু আয়, গড় আয় বৃদ্ধি ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে কিন্তুু বাস্তবের সঙ্গে পরিসংখ্যানভিত্তিক উন্নয়ন-অগ্রগতির কোনো মিল নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসমগ্রীর দাম হু হু করে বাড়ছে; নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সেবাপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে; সদ্বিবেচনা গ্রাহ্যতা পাচ্ছে না। দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ এবং মধ্যবিত্তের বিপদ ও দুগতির সীমা নেই। তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেয়ার কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

অবসারপ্রাপ্ত কর্মচারী-কর্মজীবী, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগের তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য সুযোগ ও ব্যবস্থা নেই। সমবায়াভিত্তিক বিনিয়োগ এক্ষেত্রে একটা কার্যকর উপায় হলেও সমবায়ের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। শেয়ারবাজার অন্যতম উত্তম বিনিয়োগক্ষেত্র হলেও শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল এবং পুন:পুন: লুন্ঠনের শিকার। বাকী থাকে কেবল বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প ও স্কিম এবং ব্যাংকের বিভিন্ন ডিপোজিট স্কিম। ব্যাংকের অবস্থা কাহিল এবং মুনাফার হার অত্যন্ত কম; সুতরাং ব্যাংক বাদ। অবশিষ্ট থাকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্প ও স্কিম। ইতোমধ্যে সঞ্চয় প্রকল্পগুলোতে নতুন নীতি-নির্দেশনা কার্যকর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রী সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ডাকঘর সঞ্চয় স্কিক ও সঞ্চয়পত্রের মুনফার হার কমানোর সিদ্ধান্তের পর অবসরপ্রাপ্ত, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ রীতিমত নিরূপায় হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে এবং বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার পুর্নবহাল করা হবে। এরপর তিনি ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ডাকঘরগুলোকে অটোমেশন প্রক্রিয়ার আনার পর আগামী ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের মুনাফা আগের হারে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেছেন : আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনমানুষের নেত্রী। আমিও গরীবের সন্তান। তাই গরীবরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা প্রধানমন্ত্রী এবং আমি কোনোভাবেই চাইবো না। গরীবের স্বার্থবিরোধী কোনো আইন করবো না। গরীবের সবিধার্থেই ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম ও সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমনো হচ্ছে না। বলা বাহুল্য অর্থমন্ত্রীকে যারা চেনেন, জানেন, তারা স্বীকার করবেন, তিনি অত্যন্ত সহৃদয়, মানবিক ও সাদামনের মানুষ। তার এ কথার মধ্যে সেটারই প্রতিফলন রয়েছে। স্বাভবতই আমরা আশা করবো, অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি ও অর্জনের সুযোগ যাতে প্রবীণ, অবসরপ্রাপ্ত, নিরূপায় ও দরিদ্রজনেরা পায় তা নিশ্চিত করতে তিনি চেষ্টার কোনো ত্রু টি করবেন না। দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা এবং আশংকার দিকগুলো সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী সবচেয়ে ভালো জানেন। তাকে আরো সতর্কতার সঙ্গে, অধিকতর বিবেচনা-পর্যালোচনার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন এখন খুবই প্রয়োজন। রেমিট্যান্সর ধারা বহাল রাখার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি আয় বৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগে গতিসঞ্চার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না করা ইত্যাদি এ মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি বললেও কম বলা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেমিট্যান্স

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন