Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পরিবারের কেউই থাকলো না

দিলু রোডে অগ্নিকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রথমে চলে গেলেন সন্তান। তার তিন দিন পর না ফেরার দেশে গেলেন মা। পরদিন সন্তান ও স্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রাজধানীর দিলু রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এভাবে চলে গেলেন একই পরিবারের তিনজন। এতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন হতভাগা স্বজনরা।

গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দগ্ধ শহিদুল করমানি।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, আগুনে শ্বাসনালিসহ শহিদুলের শরীরের ৪৩ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। পরে তাকে লাইফ সাপোর্ট রাখা হয়। গতকাল ভোরে শহিদুল মারা যান।

তিনি আরো জানান, শহিদুল মারা যাওয়ার পর ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া দিলু রোডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শহিদুলের আগে আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার ভোরে দিলু রোডে একটি পাঁচতলা ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলেই শহিদুল করমানির ৫ বছরের ছেলে রুশদীসহ তিনজন মারা যান। এছাড়াও শহিদুল ও তার স্ত্রী জান্নাতকুল ফেরদৌসকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আগুনে শহিদুলের শরীরের ৪৩ শতাংশ ও জান্নাতুলের শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে জান্নাতুল ফেরদৌস তিন দিন আইসিইউতে থাকার পর গত রোববার সকালে মারা যান। একই দিন তার স্বামী শহিদুলকেও আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে গতকাল তিনিও মারা যান।

নিহত শহিদুল কিরমানি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএ) পাস করে রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় ‘ভিআইভিপি এস্টেট ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি কোম্পানির ফাইন্যান্স ম্যানেজার ছিলেন।

তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেন। তিনি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের অর্থ বিভাগে কাজ করতেন। চাকরির সুবাধে তারা রাজধানীর দিলু রোডের ৪৫/এ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় একমাত্র সন্তান রুশদীকে নিয়ে বসবাস করতেন।

নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাই শাহদাত হোসেন সরকার দৈনিক ইনকিলবকে জানান, জান্নাত ও তার স্বামী শহিদুল তাদের এক মাত্র সন্তানকে নিয়ে ওই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন। আগুন লাগার পর প্রাণ বাঁচাতে সন্তানকে কোলে নিয়ে বাসার বাহিরে আসতে চান তারা। এক পর্যায়ে কালো ধোঁয়ার কারণে তাদের সন্তান রুশদী শহিদুলের কোল থেকে পড়ে যায়। স্বামীর কাছ থেকে শহিদুলও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরে ওই দিন তিনতলার ছিঁড়ি থেকে রুশদীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আর জান্নাত ও শহিদুলকে উদ্ধার করে ঢামেকে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, গতকাল শহিদুলের লাশ ময়না তদন্তের পর তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে নেয়া হয়। সেখানে বাদ আছর জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে স্ত্রী ও সন্তানের পাশে তার কবর দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, দিলু রোডের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বায়িং হাউসের কর্মচারী আব্দুল কাদের (৪৫) ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফরিন জান্নাত ওরফে জ্যোতি (১৭) নামের আরো দুইজন নিহত হন।



 

Show all comments
  • Alauddin ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০১ এএম says : 0
    খুবই দুঃখজনক।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ মোশাররফ ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    এদেশের মানুষ শান্তিতে মরার আশা ছেড়ে দিবে একদিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    Sohel S.parvez একজন বেঁচে থাকলে তা মৃত হিসেবেই বেঁচে থাকতেন! প্রিয় জনের অপঘাতে মৃত্যু শোক বুকে নিয়ে বাঁচার চাইতে.....!ত্রিশ ভাগ পুড়ে গেলেও সেই রুগি বেঁচে থাকতে পারে না!আহারে ...
    Total Reply(0) Reply
  • জাবের পিনটু ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    খুবই মর্মান্তিক। একটা সাজানো বাগান ধ্বংস হয়ে গেলো। খবরটা পরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। হে আল্লাহ তুমি এই পরিবারটিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো। দোআ করি উনারা বেহেস্তে গিয়ে একসাথে থাকুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Shamsul Alam ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    Allah save the family
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ৩ মার্চ, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
    আল্লাহ তাদের ক্ষমা করো
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ করিমখান ৩ মার্চ, ২০২০, ৯:৫৬ এএম says : 0
    কি আর বলবো এমন মরমান্তিক ঘটনা পরে খুবই খারাপ লাগল আল্লাহ পাক উনাদের জান্নাত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Hossain Sarder ৩ মার্চ, ২০২০, ১২:৩৩ পিএম says : 0
    আল্লাহুতালা সর্ববিষয়ে অবগত আছেন। তিনি (আল্লাহ) কাকে কখন নিয়ে যাবেন তা তিনিই জানেন। মানুষের জানার কোন ক্ষমতা নেই। বাস্তবতাকে এবং আল্লাহর আদেশ যথাযথভাব পালন করা মুমিনদের দায়িত্ব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ