Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাগুরা আদালতে অভিনব রায়

স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২০, ৩:৩৪ পিএম

সদাচরণের জন্য সহায়ক এক অভিনব রায় দিয়েছেন মাগুরার মূখ্য বিচারিক আদালতের হাকিম।পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সহিংসতার একটি মামলার রায়ে ইব্রাহিম হোসেন (২০) নামে এক যুবককে বই পড়া, গাছ লাগানোসহ সদাচরণের জন্য সহায়ক ব্যতিক্রমী এ রায় দিয়েছেন আদালত। অভিযুক্ত আসামিকে এজন্য যেতে হবে না কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর, সাজা খাটবেন তিনি নিজের বাড়িতেই। এজন্য মানতে হবে বিশেষ কয়েকটি শর্ত।

মঙ্গলবার বিকালে মাগুরার মূখ্য বিচারিক আদালতের হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান চাঞ্চল্যকর এই রায়টি দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে প্রবেশন অফিসার মেহেতাজ আরা সালমার হাতে তুলে দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ইব্রাহিম মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হান্নান মোল্যার ছেলে। সে মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী জানান, ২০১৭ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামে সায়লা আক্তার নামে এক নারী আহত হন। এ ঘটনায় সায়লার ছেলে মোহাম্মদ রকি মহম্মদপুর থানায় একই গ্রামের ইব্রাহিম, কামাল ও চায়না বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণাদিতে চায়না বেগম নির্দোষ প্রমানিত হন। মামলার তদন্তকালে অপর আসামি কামাল হোসেন একই কারণে চার্জশিট থেকে অব্যহতি পান। অন্যদিকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ইব্রাহিমকে দন্ডবিধির ৩২৪ ধারার পরিবর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ১ বছর সময়কালের জন্য ৭টি শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করেন হাকিম জিয়াউর রহমান।

এই প্রবেশনকালীন সময়ে বিচারক ইব্রাহিমকে যে ৭টি শর্ত পূরণের শর্ত দিয়েছেন সেগুলো হলো- প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামি কোনরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরণের অপরাধ আর করবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভাল ব্যবহার করবেন, আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন, কোনরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না, কোন খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে আর মিশবেন না, প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর ২টি বই জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরের চিঠিসহ ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরো ২টি বই পড়বেন এবং আগুনের পরশমনি সিনেমা দেখবেন, প্রবেশনকালীন সময় আসামি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসাবে ২টি বনজ ও ৩টি ফলজ গাছ লাগাবেন।

আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী আরও জানান, সাজাপ্রাপ্ত ইব্রাহিম কোন শর্ত ভঙ্গ করলে বা তার আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডাদেশ ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। প্রবেশনার কর্মকর্তা প্রতি তিনমাস অন্তর শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন।

অভিনব হলেও এমন রায় আইনসম্মত, বলছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এমন রায়ের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কারাগারে গিয়ে অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থেকে আদালতের দেওয়া শর্ত মেনে নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারবেন।

এ রায়টিকে জীবনমুখী রায় বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। আদালত কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জেলখানার অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়েছেন। জীবনের স্রোতে ফিরে যেতে সহযোগীতা করেছেন।

মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্যরা এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মূখ্য বিচারিক আদালতের হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এ রায়ের মধ্যদিয়ে শুধু প্রবেশন সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করেননি, তিনি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জেলখানার অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়েছেন।

এই মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেশন অফিসার মেহেতাজ আরা সালমা বলেন, ছেলেটির বয়স অল্প। পড়াশোনা করছে। আশা করছি বিচারকের আরোপিত সব শর্তই ছেলেটি পালন করবে। আমি নিজেও তাকে সেই সহায়তা দেব।

রায়ের প্রতি মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নানও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ছেলেটি নিজেকে সংশোধনের পাশাপাশি চরিত্র গঠনের সুযোগ পাবে। কিন্তু কারাগারে পাঠানো হলে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে অভ্যাসগত অপরাধীদের সঙ্গে মিশে পুরাদস্তুর অপরাধী হওয়ার আশঙ্কা থাকত।

 



 

Show all comments
  • jack ali ৪ মার্চ, ২০২০, ৪:২৬ পিএম says : 0
    Excellent.....
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল আলম ৪ মার্চ, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
    এত সুন্দর একটি রায় একজন মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারে এবং নিজেকে সংশোধন করার সুজোগ করে দেয় তাই আমি এই রায়কে স্বাগত জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল আলম ৪ মার্চ, ২০২০, ১১:১৩ পিএম says : 0
    এত সুন্দর একটি রায় একজন মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারে এবং নিজেকে সংশোধন করার সুজোগ করে দেয় তাই আমি এই রায়কে স্বাগত জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • অনীক মজুমদার ৬ মার্চ, ২০২০, ২:৫২ পিএম says : 0
    অসৎ পথ থেকে আলোর পথে আনার এমন অভিনব রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। বই পাঠে- শুধুমাত্র জ্ঞানই আহরণ হয় না,জ্ঞানের আলোও হয় উজ্জিবিত। "সৎ সঙ্গে সর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ"। তাই এই ছেলেটির শাস্তিটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। "শিক্ষার নেই কোন শেষ, শেখ ভাল কিছু তুমি, জীবনে করো উন্নতি, মন্দকে না বলো এখনি -অনীক মজুমদার"। বই ও গাছকে বন্ধু ভেবে এগিয়ে হবে চলতে, আর অসৎ সঙ্গকে পুরোদমে হবে ছারতে। তবেই হবে- প্রকৃত একজন মানুষ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিনব রায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ