Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অর্থনীতি চাঙ্গায় যে নীতিমালা নেওয়া হচ্ছে সবগুলোই ভারসাম্যহীন -কর্মশালায় ড. আহসান এইচ মনসুর

এলডিসি উত্তরনের পর তিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২০, ৯:১৭ পিএম

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর তিনটি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। প্রথমত, বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি। দ্বিতীয়ত, নীতিমালা তৈরিতে সুযোগ সংকোচন। তৃতীয়ত, উন্নয়ন সাহায্য কমে আসতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)মিলনায়তনে সামষ্টিক অর্থনীতি ও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। ইআরএফ ও পিআরআই যৌথভাবে কর্মশালা আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

ড. রাজ্জাক বলেন, স্বল্পোন্নত আয়ের দেশ হওয়ার কারণে পণ্য রপ্তানিতে জিরো ডিউটি বা শূন্য শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের পর ন্যূনতম ২ দশমিক ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুনতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি ব্রেক্সিট এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। কারণ এর আগে বাংলাদেশের একটি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশ থেকে অন্য দেশে রপ্তানির জন্য পৌঁছানো সম্ভব ছিল।কিন্তু ব্রেক্সিট এর ফলে এখন এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। তিনি জানান, তখন চাইলেই আমদানি রপ্তানি নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারবে না বাংলাদেশ। দেশের জন্য ক্ষতিকারক হলেও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউটিও) এর নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। দেওয়া যাবে না কেন রপ্তানি ভর্তুকি। এছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে উন্নয়ন সহযোগিতার পরিমাণ কমে আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পিআরআই নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখনো কোন রাজস্ব অফিসে ট্যাক্স জমা দিতে গেলে ঘুষ না দিয়ে কাজ হয়না। অফিসাররা আগ্রহী নয়।কিন্তু প্রতিবছরই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য মাত্রা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কিন্তু আদায়ের চিত্র পুরোপুরি উল্টো। প্রতিটি জেলায় ডিজিটাল মেশিন স্থাপনের সর্বশেষ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছে। কোন নিয়ম নীতি এখানে কাজ করছে না। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ভাতা পেনশন এবং ভর্তুকি সহ যে পরিমাণ সরকারি ব্যয় বেড়েছে। সে অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না সরকার। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক খাত নিয়ে বিপাকে পড়বে সরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা মোটেও যৌক্তিক নয়। এটি বাস্তবায়নের কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতিতে ভয়াাবহ চিত্র দেখা যাবে। ক্ষুদ্র শিল্প খাত পরিত্যক্ত হয়ে পড়বে। কারণ এই ঋণের পরিচালন ব্যয় বেশি। তখন ইচ্ছা করেই ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করবে না। একদিকে খেলাপি, মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানির অবনমন অর্থনীতিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্রেক করেন তিনি। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নিবে তার পরিমাণ গত ৪৮ বছরের সমান। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সরকার পরিশোধ করবে ৯ দশমিক ৫ শতাশ। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ৯ শতাংশে ঋণ বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ব্যাংকগুলোর সুযোগ পেলেই সরকারকে ঋণ দেবে বেসরকারি খাতে নয়। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যে সমস্ত নীতিমালা নেওয়া হচ্ছে এর সবগুলোই ভারসাম্যহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ