নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
অনেকটা অনুমিতই ছিল। অপেক্ষা ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষনার। সেটিও এলো দ্রুতই। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেই হতে যাচ্ছে দলনেতা হিসেবে তার শেষ ম্যাচ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে গতকাল নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি। তবে পরবর্তীতে খেলোয়াড় হিসেবে দলে সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এসেই বাংলাদেশের সফলতম এই অধিনায়ক জানান, তার একটি ঘোষণা আছে। তখনও নিজ নিজ আসনে বসা হয়নি সিলেট ওয়ানডে সিরিজ কভার করতে যাওয়া সংবাদমাধ্যম কর্মীদের। সেই সময়টুকু না দিয়েই বলতে শুরু করেন ক্যাপ্টেন ম্যাশ, ‘আমি একটা ঘোষণা দিতে চাই। কাল (আজ) অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি এত দীর্ঘ সময় আস্থাা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ দলের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, আমার নেতৃত্বে যখনই যারা খেলেছে। আমি নিশ্চিত এই প্রক্রিয়াটা এত সহজ ছিল না। গত পাঁচ-ছয় বছরের যে ভ্রমণটা ছিল, যাদের অধীনে আমি খেলেছি, আবার যাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছি। তারা ঘনিষ্ঠভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছে।’
এরপরই স্মরণ করেন নিজের অধিনায়কত্বকালীন কোচ, মেন্টরদের, ‘হাথুরুসিংহে (চন্ডিকা) দিয়ে শুরু হয়েছিল। তার আগে বিচ্ছিন্নভাবে অধিনায়কত্ব পেয়েছি, কিন্তু ইনজুরির কারণে করতে পারিনি। ফাইনালি শুরু হয় হাথুরুসিংহেকে দিয়ে। এরপর খালেদ মাহমুদ সুজন, স্টিভ রোডস এবং (রাসেল) ডমিঙ্গোকে দিয়ে শেষ হচ্ছে। নির্বাচক এবং বোর্ডের কর্মকর্তা যারা আছেন এবং প্রত্যেকটা স্টাফ থেকে শুরু করে যারাই ক্রিকেট বোর্ডে আছেন, প্রত্যেককে ধন্যবাদ।’
ভালো হলে স্তুতি, খারাপ করলে গঠনমূলক সমালোচনা যারা করেছেন সেই সাংবাদমাধ্যম কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি শেষবারের মতো জাতীয় দলের দলনেতার আর্মব্যান্ড পড়ে মাঠে নামতে যাওয়া মাশরাফি, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই আপনাদের। আপনারা যারা গণমাধ্যম ব্যাক্তিত্ব, আপনারা অত্যন্ত সহযোগিতা করেছেন। সবশেষে অবশ্যই সমর্থক... আপনারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা অবশ্যই সম্ভব হতো না। সবাইকে ধন্যবাদ।’
এরপর ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত মাশরাফি লিখিতভাবে পড়ে শোনান তার বিদায়ের বার্তা, ‘আজকে (গতকাল) আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (ওয়ানডে) অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাচ্ছি, অবসরে যাচ্ছি। আগামীকাল জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তৃতীয় ম্যাচ হবে আমার অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচ। খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই আমি চেষ্টা করব সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে আমার এবং আমার শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য। আমার বিশ্বাস, সে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরের ধাপে নিয়ে যাবে। আমি চেষ্টা করব তাকে সর্বোচ্চ দিয়ে সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ সবাইকে।’
নেতৃত্বের শেষ ম্যাচে ৩৬ বছর বয়সী মাশরাফির সামনে দারুণ একটি মাইলফলকের হাতছানি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচে জিতলে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ৫০টি ওয়ানডে জয়ের স্বাদ নেবেন ডানহাতি পেসার। আজ ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়।
গৌরবময় পথচলা...
টেস্ট ছেড়েছেন ইনজুরি প্রবণতার কাছে হার মেনে। টি-টোয়েন্টি ছাড়তে হয়েছে চাপে পড়ে। খেলছিলেন কেবল এক ফরম্যাট, সেই ওয়ানডে থেকেও তার বিদায়ের ক্ষণ গুণছিলেন অনেকেই। তারই কি প্রথম ধাপ হিসেবে মাশরাফির এই অধিনায়কত্ব ছাড়া? তবে তার আগে যা দিয়ে গেছেন দেশকে, দেশের ক্রিকেটকে তাতেই অমর হয়ে থাকবেন দেশের মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাশরাফির নেতৃত্বের অধ্যায় শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। অধিনায়ক হিসেবে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কিন্তু প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনেই চোট পেয়ে ছিটকে যান সফর থেকে। ওয়ানডেতে সেবার আর নেতৃত্বে দেওয়া হয়নি।
লম্বা বিরতির পর আবার অধিনায়ক হিসেবে ফেরেন ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। সেখানেই রঙিন পোশাকে নেতৃত্বের স‚চনা। শুরুর পথচলা ছিল ঝলমলে। দ্বিতীয় ম্যাচেই পান জয়ের স্বাদ, প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু আবার চোটের থাবা। দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই বোলিংয়ের সময় চোট পেয়ে আবার যান মাঠের বাইরে। ওই দফায় ৭ ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বে জয় ছিল ৩টি।
এরপর অনেক ঝড়-ঝাপ্টা পেরিয়েছেন ক্যারিয়ারে। দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি, মাঠের বাইরে লড়াই করতে হয়েছে অসংখ্য প্রতিক‚লতার সঙ্গে। অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় অধ্যায়ের শুরু ২০১৪ সালে। দেশের ক্রিকেটের চরম দুঃসময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়ক করা হয় তাকে। শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের।
মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। ওই বছর দেশের মাটিতে সিরিজ জয় ধরা দেয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, হোয়াইটওয়াশড হয় পাকিস্তান। চলতে থাকে অধিনায়ক মাশরাফির জয়রথ। আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রত্যাশিত সিরিজ জয় তো ছিলই।
যে সংস্করণে পায়ের তলায় জমি খুঁজে ফিরছিল বাংলাদেশ, সেই টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালে ওঠে দল। ২০১৭ সালে অবশ্য আচমকাই ছেড়ে দেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেই সময়ের কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও বোর্ড কর্তাদের চাপের গুঞ্জন অবশ্য ছিল। সেই ধাক্কা সামলে ওয়ানডেতে রচনা করতে থাকেন সাফল্যগাঁথা। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় সেমি-ফাইনালে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সিরিজ জিতে ফেরে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে জয় আসে দেশের মাটিতেও। ওই বছরই এশিয়া কাপে ভাঙাচোরা দল নিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডে তার নেতৃত্বেই প্রথম কোনো শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে ছন্দপতনের শুরু এরপরই। বিশ্বকাপে প্রত্যাশা প‚রণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। চোটের কারণে অধিনায়কের নিজের ফর্মও ছিল বাজে। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফর থেকে চোটের জন্য ছিটকে যান সফর শুরুর আগের দিন।
এরপর বাংলাদেশর ওয়ানডে ছিল না দীর্ঘদিন। কিন্তু মাশরাফি ছিলেন আলোচনায়। তার অধিনায়কত্ব নিয়ে, তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চর্চা ছিল দেশের ক্রিকেটে নিত্য। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি সিরিজের আগেও এসব নিয়ে ছিল তুমুল আলোচনা। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকছে শেষ।
সব মিলিয়ে দেশের রেকর্ড ৮৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, রেকর্ড ৪৯টি জয়ও এসেছে তার অধিনায়কত্বেই।
অধিনায়ক মাশরাফির যা কিছু অর্জন
ম্যাচ জয় হার পরিত্যক্ত জয়ের হার
৮৭ ৪৯ ৩৬ ২ ৫৬.৩২%
ব্যাটিং
ইনিংস রান গড় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক ৫০/১০০
৫৮ ৫৭৮ ১১.৭৯ ৪৪ ৯০.৫৯ ০/০
বোলিং
ইনিংস উইকেট গড় ইকোনমি সেরা ৪/৫
৮৭ ১০১ ৩৫.৭৪ ৫.১২ ৪/২৯ ২/০
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ
ম্যাচ জয় হার ড্র
১৫ ১০ ৪ ১
ত্রিদেশীয় সিরিজ
ম্যাচ জয় হার ড্র
৩ ১ ২ ০
বৈশ্বিক আসর
বিশ্বকাপ-২টি
সেরা- সুপার এইট (২০১৫)
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-১টি
সেরা- সেমিফাইনাল (২০১৭)
এশিয়া কাপ- ১টি
সেরা- রানার্সআপ (২০১৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।