Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তরুণীদের পিঠে লেখা বাজে শব্দ, বিতর্কে রবীন্দ্রভারতীর বসন্তোৎসব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২০, ৫:০২ পিএম | আপডেট : ৫:১৬ পিএম, ৬ মার্চ, ২০২০

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসের বসন্তোৎসব পালনের এক ছবি ও একদল তরুণ-তরুণীর উচ্ছৃঙ্খলতায় বিতর্কে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সদ্য ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, চারজন তরুণী পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের পিঠে আবির দিয়ে লেখা ইউটিউবার রোদ্দুর রায়ের বিকৃত রবীন্দ্রসংগীত ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’।

নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে আরেকটি ছবি । তাতে দেখা গিয়েছে, কয়েকজন তরুণী পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের পিঠে আবির দিয়ে লেখা বসন্ত এসে গেছে। ওই তরুণীর দিকে পিছন ফিরে বসে রয়েছে তিন যুবক। তাদেরও বুকে লেখা নানা বাজে শব্দ, এককথায় গালিগালাজ।
ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। তার ফলে চতুর্দিকে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। ছবি ঘিরে ক্ষুব্ধ প্রাক্তনীরা। তাঁরা বলছেন, এ ঘটনা আধুনিকতার নামে অভব্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বসন্তোৎসবের মতো একটি অনুষ্ঠানে কীভাবে এমন অশ্লীল কাজ করতে পারল ওই তরুণ-তরুণীরা, বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ছবিতে প্রচুর কারিকুরি করা হয়। অনেক সময় কেবলমাত্র নেটদুনিয়ায় খোরাক বানানোর জন্য ছবি সুপার ইম্পোজও করা হয়। এই ছবিটি ওইভাবে বানানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। রবীন্দ্রভারতীর বসন্তোৎসবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পাশাপাশি বহিরাগতরাও থাকে। সেক্ষেত্রে ছবিতে যাদের দেখা গিয়েছে, তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া নাকি বহিরাগত তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্বভারতীর কলাভবনে দু’দিন ধরে চলা নন্দন মেলায় রোদ্দুর রায়ের বিকৃত ‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’ গান গাওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। যার জেরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেই ঝড় থামতে না থামতেই এবার রবীন্দ্রনাথের নাম বিজড়িত রাজ্যের আরও একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে মাথাচাড়া দিল বিতর্ক। শুধুমাত্র নেটদুনিয়ায় সেনসেশনদের নিয়ে মেতে থাকতে গিয়ে তবে কি সংস্কৃতিকেই ভুলতে বসেছে আধুনিক প্রজন্ম, প্রশ্নটা থেকেই যায়।

রবীন্দ্র ভারতীর এবারের দোল উৎসব সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। ‘ছিঃ!’ ছবিটা দেখার পর একটাই শব্দ ঘুরছে সংস্কৃতিমহলে। ছাত্রছাত্রীদের গায়ে আবির দিয়ে লেখা অশ্লীল শব্দ। সঙ্গে ‘বিকৃত’ রবীন্দ্র সংগীতে উদ্দাম নাচ। কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে আমাদের সংস্কৃতি? প্রশ্ন তুলেছেন ইমন চক্রবর্তী-সহ সংস্কৃতিমনস্কদের অনেকেই।

প্রত্যেকবছরই শাড়ি, পাঞ্জাবী পরে আদ্যোপান্ত বাঙালিয়ানার সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বসন্ত উৎসব পালিত হয় এখানে ফাগুন উৎসব। রংবেরঙের ছবি তুলতে ভীড় জমান ফটোগ্রাফাররাও। এবারেও তাই হয়েছে। কিন্তু জোর চর্চা শুরু হয়েছে গতকালের ভাইরাল হওয়া একটি ছবি ঘিরে। যেখানে পড়ুয়াদের পিঠে লেখা অশ্লীর শব্দ। যে ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে বাংলার সংস্কৃতিমহল।

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা ইমন চক্রবর্তী বলেন, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ২০১১ সাল অবধি আমি এখানে পড়েছি । যেহেতু আমি ছাত্র সংসদের দায়িত্বে ছিলাম, বসন্ত উৎসব আমরাই আয়োজন করতাম। আমাদের সময় কখনও এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা ঘটতেও দিইনি। আজ ৯ বছর পরে যখন দেখছি এরকম ঘটনা ঘটছে, প্রাক্তনী হিসেবে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। আসলে বর্তমানে কোন জায়গায় পৌঁছেছে বাংলা সংস্কৃতি সেটা দেখলেই বোঝা যায়। আমি অত্যন্ত বিরক্ত। যারা এসব করেছে তাদের উদ্দেশে বলব, ‘ওদের চৈতন্য হোক’ এবং যিনি বাঙালিকে গোটা বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে এই ছেলে খেলাগুলো বন্ধ হোক এবার। ইমন আরও বলেন, “রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই গানকে বিকৃত করে একটি গান চলছে, এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ভীষণ লজ্জাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রছাত্রী এরকম কাণ্ড ঘটাবে বলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় না। কঠোর নিয়ম করে দেওয়া উচিত যে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা কিংবা প্রাক্তনীরাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আগে জোড়াসাঁকোতে যে বসন্ত উৎসব হত, বিটি রোডের ক্যাম্পাসে সেই উৎসবের চেহারা বর্তমানে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পর্যায়ে যে পৌঁছবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। যাঁরা ২০-২৫ বছর ধরে ওখানে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের কথা ভেবেই খারাপ লাগছে যে এরকম একটা ঘটনায় তাঁরা কতটা অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়েছেন।

একটা বিশ্ববিদ্যালয়, পড়ার জায়গা সেখানে কীভাবে এরকম অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা যেতে পারে? প্রশ্ন তুলেছেন খ্যাতানামা সংগীত শিল্পী শ্রাবণী সেনও। ‘রুচিবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলা সংস্কৃতির জন্য অতন্ত্য আশঙ্কাজনক’ মন্তব্য পরিচালক গৌতম ঘোষের। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। ছবিটা দেখেই তো গা শিউরে উঠছে পড়তে গিয়ে। অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। পরের বছর থেকে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। পরশু দিনই গিয়েছিলাম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গিয়ে দেখলাম কত ভাল, সুন্দর পরিবেশ। আর গতকালের ঘটনাটা দেখার পর সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ