Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুনি মোদিকে বাংলার মাটিতে পা রাখতে দেবো না-ইসলামী নেতৃবৃন্দ

১২মার্চ দেশব্যাপী মানববন্ধন ১৩মার্চ বিক্ষোভ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২০, ৭:৪১ পিএম

ভারতের দিল্লিতে মুসলমানদের হত্যা করে বিশ্ব সেরা সন্ত্রাসী-খুনি নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না। এদেশের তৌহিদি জনতা বুকের রক্ত দিয়ে হলেও মুসলিম হত্যাকারী হিন্দু জঙ্গি মোদিকে প্রতিহত করবেই। শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিভিন্ন ইসলামী দলের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন। ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে এবং নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিলের দাবিতে ইসলামী সমমনা দল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেন, নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ মদদে ভারতের পুলিশ এবং উগ্রহিন্দুরা দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা চালিয়েছে। মুসলমানদের ঘর বাড়ী মসজিদ মাদরাসায় অগ্নিসংযোগ করেছে সেই মোদি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তা বরদাশত করবেনা। মুসলমানদের হত্যা ও তাদের ওপর নির্যাতনকারী মোদিকে কিছুতেই বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না। যেকোন মূল্যে তাকে প্রতিহত করা হবে। মুসলমানদের রক্তে হাত রাঙিয়ে হিন্দু জঙ্গি মোদি কিছুতেই বাংলাদেশে আসতে পারবে না।

বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের আহ্বান- দিল্লিতে মুসলমানদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে এরপর তৌহিদে জনতা মোদির মতো খুনিকে বাংলার মাটিতে পা রাখতে দেবো না। আমরা আগেও এ কথা বলেছি, আজও বলছি। তাই বলবো আমাদের প্রিয় নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করুন। তা না হলে এদেশে যদি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে তার দায় সরকারকে নিতে হবে।
ভারতে মুসলিম হত্যা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গতকাল উত্তাল ছিল সারা বাংলাদেশ। গতকাল বাদজুমা লাখ মুসল্লি রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভে যোগ দেন। মুসল্লিদের কন্ঠের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে বায়তুল মোকাররমর ও এর আশপাশের এলাকা। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে নানা ¯েøাগান দেন। তারা খুনি মোদিকে প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন। মোদির ছবিযুক্ত প্লেকার্ডে থু থু নিক্ষেপ ও জুতা পেটা করেন। বায়তুল মোকাররম ছাড়া রাজধানীর লালবাগ এবং মিরপুরেও মোদি বিরোধী বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার মুসল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ইমলামী সমমনা দলগুলো আগামী ১২ মার্চ সারাদেশে বাদ আসর মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের আমির ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা ন‚র হোসাইন কাসেমী। ঢাকায় তাদের মানববন্ধন হবে যাত্রাবাড়ি থেকে গাবতলী পর্যন্ত এবং সদরঘাট থেকে টঙ্গি পর্যন্ত। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৩ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া রাজধানীতে জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ দিল্লিতে মুসলমান হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।

ঢাকার বাইরে ভারতে মুসলিম গণহত্যা-নির্যাতন ও মসজিদ-মিনারে অঙ্গিসংযোগের প্রতিবাদে বন্দরনগরী চট্টগ্রামও ছিল উত্তাল। সিলেটের রাজপথে নামাজ শেষে নেমে আসে বিপুল সংখ্যক মুসল্লী। মুসল্লিরা আবু জাহেলের উত্তরসূরী সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করে তার দুগালে জুতা নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সর্বস্তরের তৌহিদী জনতার বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ, রাস্তা অরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বাদজুমা দেশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ থেকে মুসল্লি জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ করেন। প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তাগণ ভারতে ক্ষমতাসীনদের মদতে মুসলিম নির্মূলের ঘৃণ্য ও জঘন্য অপতৎপরতা রোধে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীকে একযোগে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

ইসলামী দলগুলোর গতকালের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক মুসল্লির সমাগম হয়। নামাজের এক ঘণ্টা আগে থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শেষে লাখ মুসল্লি নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অংশ নেন। সমাবেশ শেষে মিছিল পল্টনের দিকে যায়।

সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা উপেক্ষা করে মুসল্লিদের ঢল নামে বায়তুল মোকাররমে। দুপুর ১২টার আগেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মুসল্লিরা মসজিদের পাশের চত্বরে এবং রাস্তায় নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে উত্তর গেটে সমমনা ইসলামী দলের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ মদদে ভারতের পুলিশ এবং উগ্রহিন্দুরা দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা চালিয়েছে। মুসলমানদের ঘর বাড়ী মসজিদ মাদরাসায় অগ্নিসংযোগ করেছে সেই মোদি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তা বরদাশত করবেনা ।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মোদি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে এ জন্য আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার সংঘাতের পথ পরিহার করে মোদির আমন্ত্রন বাতিল করবে। যদি বাতিল না করে তাহলে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হবে মোদিকে যে কোন ভাবে প্রতিহত করা। পরে বায়তুল মোকাররম থেকে বিশাল মিছিল পল্টন মোড় হয়ে কাকরাইল মোড় দিয়ে বিজয় নগরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরিয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সহসভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুর রব ইউসূফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের নায়বে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা মোস্তফা তারেকুল হাসান, মুফতি মুনির হোছাইন কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারি সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন।

ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, মুসলিম নির্যাতন, মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও মুসলিমগণ হত্যাকারী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের পবিত্র ভূমিতে আসতে দেয়া যাবে না। তিনি আগামী ১৩ মার্চ শুক্রবার সারাদেশে প্রতিটি মসজিদে ভারতে নিহত ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া এবং খুনি মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে দেশব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গতকাল বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঢাকা জেলা শাখা সভাপতি আলহাজ¦ সৈয়দ আলী মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, শাইখুল হাদিস মাওলানা হারুন বোখারী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুফতী কেয়ায়েতুল্লাহ কাশফী, ঢাকা জেলা সেক্রেটারী আলহাজ¦ শাহাদাত হোসাইন, ডা: মো. কামরুজ্জামান, আলতাফ হোসেন, হাফেজ ওমর ফারুক, মাওলানা জালাল উদ্দিন, হাসিবুল ইসলাম, মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশশেষে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর নাইটেংগেল পৌঁছলে পুলিশ বাধা দিলে দলের নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম সেখানেই মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ