Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টাঙ্গাইলে নির্মিত হচ্ছে ২০১ গম্বুজ মসজিদ

পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা দেয়ালে অঙ্কিত থাকবে

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বের মসজিদের ইতিহাসে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদটি। নির্মাতাদের দাবি, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ হতে যাচ্ছে।

মসজিদটি বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে। মসজিদটির মিনারের উচ্চতা ৪৫১ ফুট। অর্থাৎ ৫৭ তলা উচ্চতার মিনারটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার। এর আগে বিশ্বের প্রথম সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনার হলো মরক্কোয় দ্বিতীয় হাসান মসজিদে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৮৯ ফুট যা ৬০ তলা ভবনের সমান। মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ওলি-আউলিয়া ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই নির্মাণাধীন এ মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুমায়ুন কবির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর এ মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুবিধা। পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরও মসজিদটিতে সহস্রাধিক ফ্যান লাগানো হবে। মসজিদের ছাদের মাঝখানে থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার একটি বড় গম্বুজ, এর চারদিকে থাকবে ১৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ২০০টি গম্বুজ। মূল মসজিদের চার কোণে থাকছে ১০১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার। পাশাপাশি থাকবে ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার। ১৪৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৪৪ ফুট প্রস্থের দ্বিতল মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে পারবেন একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি।

মসজিদের দেয়ালের টাইলসে অঙ্কিত থাকবে পূর্ণ পবিত্র কোরআন শরিফ। যে কেউ বসে বা দাঁড়িয়ে মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত কোরআন শরিফ পড়তে পারবেন। মসজিদের প্রধান দরজা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল। আজান প্রচারের জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হবে উঁচু মিনার। উচ্চতার হিসেবে মিনারটি হবে ৫৭ তলা ভবনের সমান অর্থাৎ ৪৫১ ফুট। মিহরাবের দুই পাশে লাশ রাখার জন্য হিমাগার তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন অবস্থাতেই এ ২০১ গম্বুজ মসজিদটির প্রথম তলায় টাইলসের কাজ চলমান আছে, তবে দ্বিতীয় তলায় নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় চালু রয়েছে।

মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে পৃথক দুটি পাঁচতলা ভবন। সেখানে থাকবে দুস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। মসজিদের উত্তর পাশের ভবনটি দেশি-বিদেশি অতিথিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থার জন্য। মসজিদের পাশেই নির্মাণ হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসুল্লিদের জন্য ডাক বাংলো ও বিনামূল্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা। পশ্চিমের ঝিনাই নদীর তীর থেকে এ মসজিদ পর্যন্ত সিঁড়ি করা হবে, একটি সেতু নির্মাণ করা হবে নদীর ওপর। চারপাশে থাকবে দেশি-বিদেশি ফুলের বাগান। পুরো মসজিদটি কমপ্লেক্সটি ড্রইং অনুযায়ী সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে বলে জানা গেছে।

হুমায়ুন কবির জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত সুদৃশ্য এ মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হলে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামের ইমামতির মাধ্যমে মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যেই মসজিদটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য পর্যটক নির্মাণ কাজ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যেও মসজিদটি নিয়ে দেখা দিয়েছে দারুণ আগ্রহ। তবে নির্মাতাদের প্রত্যাশা, টাঙ্গাইলের অজোপাড়া পাথালিয়া গ্রামে নির্মাণাধীন ২০১ গম্বুজ মসজিদটি একদিন গিনেস বুকের পাতায় স্থান পাবে।

মসজিদের উদ্দোক্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি দেশের প্রয়োজনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মানবতার কল্যাণে তরুণ বয়স থেকেই সাধ্যমতো কাজ করছি। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সততার সঙ্গে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের নির্বাচিত সিবিএ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার নতুন করে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাকি জীবন মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি চাই না আমার মৃত্যুর সময় আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকাও জমা থাকুক। তাই মহান আল্লাহ পাকের নামে দুঃসাহসী এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এ মসজিদ বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুনভাবে পরিচিত করে তুলবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মসজিদ

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ