Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩ জন : আইইডিসিআর

সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি : ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৬ এএম, ৯ মার্চ, ২০২০

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিন জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আইইডিসিআর’র নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গতকাল জানানো হয়, আক্রান্ত তিনজনের দু’জন পুরুষ এবং একজন নারী। পুরুষ দু’জন ইতালি থেকে সম্প্রতি পৃথক ভাবে দেশে প্রবেশ করেন। আক্রান্ত নারী ইতালি প্রবাসী এক পুরুষের পরিবারের সদস্য। সন্দেহজনক আরও দু’জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর’র পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারে করোনা উপসর্গ ধরা পড়েনি। আক্রান্তরা নিজেরাই আইইডিসিআর হটলাইনে নিজেদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে জানান। তবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেছেন সেব্রিনা ফ্লোরা। এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পাবলিক প্লেস এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর। তবে দেশে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেন প্রফেসর মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। স্কুল-কলেজ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। তবে আমি সবাইকে পরামর্শ দেবো প্রয়োজন না হলে জনসমাগম হয় এমন জায়গায় যাওয়ার দরকার নেই। দরকার না হলে বাইরে না গিয়ে বাড়িতে থাকাটাই শ্রেয়। 

আইইডিসিআর’র পরিচালক প্রফেসর মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গত শনিবার পরীক্ষায় তাদের সংক্রমনের বিষয়টি ধরা পড়ে। আক্রান্ত তিনজনকে হাসপাতালের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, প্রবাসী দু’জন দেশে আসার পর তাদের শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। ইতালি থেকে আসা দুজন ভিন্ন পরিবারের সদস্য। তবে তাদের একজন বাসায় আসার পর সে বাসাতেও একজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন। তারা আইইডিসিআর-এর হটলাইনে ফোন করলে ইনস্টিটিউটের র‌্যাপিড রেসপন্স টিম তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়। সেখানে দু’জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজেটিভ পাওয়া যায়। এরপর তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা চারজনকে পরীক্ষা করা হয়। যারমধ্যে আরও একজনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। আক্রান্তদের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আক্রান্ত তিনজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অপরগতা প্রকাশ করে প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে রোগীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা যাবে না। তবে এ রোগ প্রতিরোধে দেশের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। তাই দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুততার সাথে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে রাজধানীর কুয়েতমৈত্রী, এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সম্পূর্ণরুপে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া কুর্মিটেলা জেনারেল হাসপাতালেও করা হয়েছে বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ড।
অধিদফতর কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার রাতে তিন জন রোগী সনাক্ত হওয়ার পর বিষয়টি সেবা বিভাগের মহাপরিচালককে জানানো হয়। তিনি ওই সময় এই বিষয়টি স্বাস্থ মন্ত্রীক অবহিত করেন। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসায় গভীর রাত পর্যন্ত এনিয়ে বৈঠক হয়। মন্ত্রীর নির্দেশে দেশের সামগ্রীক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে স্বাস্থ্য সেবা বিভগের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সারারাত নির্ঘুম কাজ করেন। গতকাল রোববার সকালে দেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রাধমন্ত্রীকে জানানো হয়। তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সবকিছু ধৈর্যসহকারে শোনেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপরেই বিষয়টি গণমাধ্যমে জানায় আইইডিসিআর।
এদিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে সার্বক্ষনিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি ইনকিলাবকে জানান, আক্রান্ত তিন জনের শারীরিক অবস্থা ভালো। তাদের নিরাপদে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ছয়টি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ গতকাল এ কথা জানান।
এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছয়টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। এছাড়া অবতরণের পর ‘হেলথ ডিক্লারেশন’ ফরম দেওয়া হচ্ছে, এখানে তাদের শারীরিক বিষয়সহ বিভিন্ন তথ্য পূরণ করতে হবে। স্বাস্থ্য তথ্য কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ছয়টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরে জ্বর না থাকলেও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে নিজ বাড়িতে বা তাঁরা যেখানে থাকবেন, এখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় যদি যাত্রীর শরীরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাহলে তাকে সরাসরি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। মোহাম্মদ শাহারিয়ার জানান, বিমানবন্দরে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। গত ২১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ লাখ ৬ হাজার ১০ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬১ জনের জ্বর ছিল। আর ৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। একপর্যায়ে এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)। বিশ্বজুড়ে ১ লাখ ৭ হাজারের বেশি মানুষ এ ভাইরাসের সংক্রমনের শিকার হয়েছেন এবং ৩ হাজার ৬৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬০ হাজার ৯০৫ মানুষ। এর আগে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালিতে সাতজন বাংলাদেশি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম কারও মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়লো। তবে ইতালী ফেরত ২ জন বাংলাদেশে কয়েকদিন অবস্থান করেছেন। মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক চলা ফেরা করেছেন। তাই তাদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কিছুটা হলেও রয়েছে বলেও ধারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।#



 

Show all comments
  • Mehedi Hasan Robin ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
    করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ইতালি ফেরত দুজন যে ফ্লাইটে দেশে আসছে,সেই ফ্লাইটের বাকিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত....! তাদের সংক্রমিত হওয়ার প্রচণ্ড সম্ভাবনা আছে..!!
    Total Reply(0) Reply
  • Ah Shohel ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২০ এএম says : 0
    বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সত্যি সত্যি আসলে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। চীন,যুক্তরাষ্ট্র, ইতালির মতো এতো উন্নত দেশগুলো যেখানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে,সেখানে বাংলাদেশে কি হবে,তা তো বোঝাই যায়। গত বছর ডেংগু রোগের প্রাদুর্ভাবের সময়ই আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা সম্পর্কে বোঝা গেছে। আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন! আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী হাসান পারভেজ ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২১ এএম says : 0
    সরকারের কোনো চালাকিও হতে পারে এটাও মনে রাখতে হবে যে সরকার একটা ইস্যু কে পিছনে ফেলার জন্য আরেকটা ইস্যু তৈরি করে,,, অতীত ভুলে গেলে চলবে না,,,,,ব্যক্তিগত মতামত,,,হয়তবা সত্যও হতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Kobir Sorkar ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২১ এএম says : 0
    বাঙ্গালী তো বুঝে কম চিল্লায় বেশী । উপসর্গ এর মধ্যে লিখে দেন " বিদেশ থেকে এসে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি " হলে তারপর হটলাইন এ কল করতে । নইলে গায়ে হাত দিয়ে গা গরম দেখলেই কল দিতে দিতে বিরক্ত করে ফেলবে । প্রকৃত আক্রান্ত ব্যক্তি সেবা থেকে বঞ্চিত হবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Roni Shah ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    একটা দেশের রোগ সনাক্ত করার মেশিনটা নিয়েই যদি সন্দেহ তৈরি হয়,,,তাহলে সেই দেশের জনগনের নিরাপত্তা তো ভয়ংকর হুমকির মুখে থাকে...
    Total Reply(0) Reply
  • Moin Ahmed ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    অবশেষে বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলো, তবে সেটা চীন থেকে নয় ইতালী থেকে। ইতালী থেকে যে দুজন পুরুষ করোনা ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসলো তাদের কিন্তু বিমানবন্দরে সনাক্ত করা হয়নি, তারা বাড়ীতে যাওয়ার পর আক্রান্ত হয়েছে। তার মানে বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করার কাজে নিয়োজিত সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা যে দায়িত্বে অবহেলা করছে তা সুস্পষ্ট। আর আক্রান্ত হওয়া দেশগুলো থেকে লোকজন কেন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে? কোন বাংলাদেশী বিদেশে আক্রান্ত হলেও সে যেন দেশে না আসে বা এরকম লোকদের দেশে আসতে বারন করা হোক। পাশাপাশি যে দুজন ইতালী ফেরত লোক তাদের পরিবারের সাথে মিশেছে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের পরীক্ষা করে কোয়ারিনটিনে রাখা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Azizul Haque ৯ মার্চ, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
    বাংলাদেশে কোন করোনা নাই। মুদির বিরুদ্ধ মানুষ যখন ক্ষেপছে তাই মানুষের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। জনসমাগম এড়িয়ে চলা মানে ভয়ে মিছিল মিটিং সমাবেশ না করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ