Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্যান্সারে কোলন পলিপের ভূমিকা

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কোলন পলিপ কি?
কোলন পলিপস্ এমন একটি শারিরিক অবস্থা যেখানে কোলন বা অন্ত্রের উপরস্থ কোষগুলির আস্তরণে এক ধরণের মাংসল গুটির আভির্ভাব ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোলন পলিপগুলি কোনও ক্ষতি করে না, তবে এর মধ্যে কিছু পলিপ কোলন ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে যা সময় মতো নির্ণয় না করা গেলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।
কোলন পলিপসের লক্ষণ ঃ অনেক ক্ষেত্রে কোলন পলিপের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। কেবলমাত্র অন্ত্রের পরীক্ষা করার মাধ্যমে সেগুলি সনাক্ত করা যেতে পারে। তবে, অন্যকোন শারিরিক অবস্থার কারণে যদি কোনও ব্যক্তি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির প্রভাব অনুভব করে তবে তা কোলন পলিপের অন্তর্নিহিত কারণ হিসাবে সন্দেহ করা উচিত:
* অন্ত্রঘটিত শারিরিক অবস্খার পরিবর্তন: এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া স্থায়ী হলে।
* মলের রঙের পরিবর্তন: মলের সাথে রক্ত ফালির মতো রং এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যেতে পারে অথবা মল কালো রঙের হতে পারে।
* শরীরে আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা: কোলন পলিপে মলের সাথে দীঘকালব্যাপী রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং ফলস্বরূপ রক্তস্বল্পতায় ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* ব্যথা: যখন কোলনে বৃদ্ধি পাওয়া পলিপগুলি পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিণত হয়, তা অন্ত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে, এটি পেটে ব্যথা ঘটায়।
* মলদ্বার থেকে রক্তপাত: মলদ্বার থেকে রক্তপাত ঘটে যা স্পষ্ট বা মল মিশ্রিত হতে পারে এবং / অথবা জমাট বাঁধা রক্তের আকারে দেখা যায়।
কোলন পলিপের কারণ কী?
সাধারণ অবস্থায় শরীরের কোষ বিভাজিত হয় এবং নিয়মিত পর্যায়ে একটি সুসংহত পদ্ধতিতে টিস্যু এবং অঙ্গ গঠন করে। তবে নির্দিষ্ট জিনের কিছু ত্রুটির কারণে অপ্রয়োজনীয়ভাবেও কোষের বিভাজন বা বৃদ্ধি হতে পারে। যখন এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি মলদ্বার বা কোলন এবং মলদ্বারের আস্তরণের মধ্যে ঘটে তখন এটি পলিপ গঠনের দিকে ধাবিত হয়।
কোলন পলিপসের প্রকারভেদ ঃ কোলন পলিপগুলিকে তাদের আকার ও বৃদ্ধির প্যাথোফিজিওলজির ভিত্তিতে এবং ক্যান্সারযুক্ত বা ক্যান্সারহীন কিনা তার ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।
আকারের ভিত্তিতে ঃ প্যাডনকুলেটেড পলিপস ও সিসাইল পলিপস: পেডানকুলেটেড পলিপের তুলনায় কিছুটা চ্যাপ্টা দেখায়।
মাইক্রোস্কোপিক স্তরে অবস্থিত পলিপগুলি তাদের সেলুলার কাঠামোর ভিত্তিতে এবং কোষের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিম্নলিখিত ধরণেরা হয়ে থাকে ঃ
প্রদাহজনক কোলন পলিপস ঃ এই জাতীয় পলিপগুলি সাধারণত ক্যান্সারে পরিণত হয় না এবং প্রায়শই ্রমিথ্যা পলিপগ্ধ হিসাবে আখ্যায়িত হয়।
হাইপারপ্লাস্টিক পলিপস ঃ সাধারণত এই ধরণের পলিপগুলির ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
অ্যাডেনোমেটাস পলিপস ঃ কোলন পলিপের প্রায় ৭০ ভাগই এই ধরণের পলিপ। অ্যাডেনোমাস সাধারণত দীর্ঘ সময়কাল পর ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।
ভিলাস অ্যাডেনোমা ঃ এটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সর্বাধিক প্রবণতাসহ এক ধরণের অ্যাডেনোমেটাস পলিপ। প্রায় ৩০ ভাগ ভিলাস অ্যাডেনোমা শেষ পর্যায়ে মারাত্মক পরিণতি লাভ করে।
আকারের দিক থেকে কোলন পলিপগুলি সাধারণত খুবই ছোট - কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে আকার অনুযায়ী পলিপগুলোর ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোলন পলিপসের ঝুঁকির মাত্রা ঃ * বয়স: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ৫০ বা তার বেশি বয়সী লোকদের মধ্যে কোলন পলিপ সনাক্তের হার বেশী।
* পারিবারিক ইতিহাস -
* অন্ত্রের প্রদাহ ঃ ক্রোন’স ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো শারিরিক পরিস্থিতি।
* যথাযথ শারীরিক অনুশীলন বা ব্যায়ামের অভাব এবং স্থূলতা
* টাইপ ২ ডায়াবেটিস ঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
* বংশগত কারণ ঃ কিছু বংশগত সমস্যা রয়েছে যা কোলন পলিপের সাথে সম্পর্কিত বলে পরিচিত।
* এমওয়াইএইচ-সম্পর্কিত পলিপোসিস (এমএপি): এমএইচ জিনের মিউটেশনগুলির কারণে এফএপি-র অনুরূপ একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়।
* পিউটজ-জেগারস সিন্ড্রোম –
* সেরেটেড পলিপোসিস সিন্ড্রোম -
চিকিৎসকরা যেভাবে কোলন পলিপ সনাক্ত করে থাকেন ঃ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা নানাবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোলন পলিপ চিহ্নিত করে থাকেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ইতিহাস জেনে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা গ্রহণ, এ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং স্ক্রিনিং টেস্ট সম্পাদন করে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে এমন পলিপ নির্ণয় করা হয়। স্ক্রিনিং টেস্টগুলি হলো ঃ * কোলনোস্কোপি: কোনও পলিপ সনাক্ত করা গেলে, তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে বা কোনও টিস্যু (বায়োপ্সি) নিতে হবে।
* ভার্চুয়াল কোলনোস্কোপি (সিটি কোলোনোগ্রাফি) :
* নমনীয় সিগময়েডস্কোপি: নমনীয় সিগময়েডস্কোপি ব্যবহার করে কোলনের শেষ তৃতীয় অংশের (সিগময়েড এবং মলদ্বার) পলিপ পরীক্ষা পরিচালিত হয়
* মল-ভিত্তিক পরীক্ষা: এই ধরণের পরীক্ষায় মলে রক্তের উপস্থিতি পরীক্ষা বা মলের ডিএনএ মূল্যায়ন করে কাজ করে। যদি মল পরীক্ষাটি পজিটিভ হয়, তবে চিকিৎসার জন্য কোলনোস্কোপি লাগবে।
* ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি: এটি একটি ব্যথাহীন প্রক্রিয়া যাতে রোগীকে একটি ক্যাপসুল খাওয়ানো হয় যাতে একটি ক্যামেরা থাকে যা দিয়ে অন্ত্রের ছবি তুলে প্রেরণ করা হয়। ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি কোলনের পলিপগুলির স্থান নির্ণয় এবং সনাক্তকরণে সহায়তা করে।
কোলন পলিপের চিকিৎসা পদ্ধতি ঃ
পলিপগুলি অপসারণ করার কয়েকটি কৌশল হলো:
* শক্তি বা একটি তারের লুপ ব্যবহার করে পলিপেক্টমি বা পলিপ অপসারণ,
* স্বল্প পীড়াদায়ক শল্যচিকিৎসা: খুব বড় হয়ে যদি কোলনোস্কোপি দ্বারা অপসারণের ক্ষেত্রে অসম্ভব বা ক্ষতিকর হয়ে পড়ে তবে ল্যাপারোস্কোপিক শল্য চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।
* কোলন এবং মলদ্বার অপসারণ: বিরল ফেমিলিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (এফএপি) এর ক্ষেত্রে কোলনের সার্বিক কোষ এবং মলদ্বার অপসারণে জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়।
পলিপেক্টমি পদ্ধতি এবং এর প্রকারভেদ ঃ পঞ্চাশোর্ধ বয়সী ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসকরা পলিপের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে এমন কিছু লক্ষণ চিহ্নিত হলে কোলনোস্কোপির সুপারিশ করে থাকেন। কোলনে কোন ধরণের পলিপ উপস্থিত থাকে তার ভিত্তিতে সাধারণত পদ্ধতিটি স্থির করা হয়। যেমন ঃ
* বায়োপ্সি ফোর্পস অপসারণ * স্নেয়ার বা ফাঁদ পলিটেকটমি * এন্ডোস্কোপিক মিউকোসাল রিসেকশন (ইএমআর) বা এন্ডোস্কোপিক সাবমুসোসাল ডিসেসেকশন (ইএসডি): * এন্ডোস্কোপিক মিউকোসাল রিসেকশন (ইএমআর) বা পিসমিল রিসেকশন * এন্ডোস্কোপিক সাবমোসোসাল ডিসেসেকশন।
পলিপেকটমির ঝুঁকিসমূহ ঃ যদিও পলিপেকটমি তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু এটি একেবারেই ঝুঁকিবিহীন নয়। জটিলতাগুলো হল- * অন্ত্রের মধ্যস্থ ছিদ্র * মলদ্বারে রক্তক্ষরণ * অনিয়মিত হৃদস্পন্দন * তীব্র পেটে ব্যথা বা পেট ফুলে যাওয়া * বমি
পলিপেক্টেমির পরে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ঃ পলিপেক্টোমির পরে রোগী সাধারণত দ্রত সুস্থতা লাভ করে। এতে যে সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় তা সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমাধান হয়ে যায়।
পলিপেক্টোমি কি সব চিকিৎসা কেন্দ্রে করা হয় বা এটি কি কেবল বিশেষায়িত কেন্দ্রেই করা যায় ঃ
পলিপেক্টমি একটি বিশেষায়িত পদ্ধতি যা ব্যাপকভাবে রোগী পরিচালনা এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা রয়েছে এমন বিশেষায়িত কেন্দ্রগুলি হতে সেবা দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কীভাবে পলিপেক্টমির চিকিৎসায় যথার্থ সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে ঃ
রেফারেলস: আপনার পরামর্শদাতা, পরিবারের সদস্য বা আশেপাশের বন্ধুদের নিকট সেরা গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের খোঁজ করুন।
তথ্য নিন: আপনার শর্টলিস্ট করা ডাক্তারদের সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করুন।
হাসপাতালের অবকাঠামো ঃ সার্জারির জন্য চিকিৎসক এবং সরঞ্জাম উভয়ের সমন্বয় প্রয়োজন হয়। তাই চিকিৎসা নেবার পূর্বে হাসপাতালে উপলব্ধ সুবিধা এবং এ জাতীয় পদ্ধতি পরিচালনার ক্ষেত্রে হাসপাতালের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিন। প্রতিবছর, যশোদা হাসপাতাল সেন্টার ফর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির ডাক্তাররা কোলন পলিপগুলির জন্য শত শত লোকের চিকিৎসা করেন এবং তাদের রয়েছে গার্ডনার সিন্ড্রোম, কিশোর পলিপোসিস, পিউটজ-জেগার্স সিন্ড্রোম ইত্যাদির মতো বিরল বংশগত পলিপ রোগে আক্রান্তদেরও চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতা ।

ডাঃ পার্থসারথী
যশোদা হাসপাতাল, হায়দ্রাবাদ।
ফোন নং - ০১৪ ০০ ৩৩ ৪৪ ৫৫,
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্যান্সার

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন