Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। অ্যান্টার্টিকা বাদে ৬টি মহাদেশে এর বিস্তার ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর এবার ‘প্যানডেমিক’ বা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বলা যায়, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে বিশ্ববাসী ভয়াবহ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যুবরণ করেছে সাড়ে চার হাজারের বেশি। এ ভাইরাস মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দেশ থেকে দেশে যাতায়াত ব্যবস্থা স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে মানুষের আসার ওপর একমাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইটালিতে জনগণকে এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় বসবাস করতে হচ্ছে। করোনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য দেশটি বিশাল এক কোয়ারান্টাইনে পরিণত হয়েছে। অনেক দেশ ভিসা বাতিল করেছে। সউদী আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে ভিসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রত্যেক দেশই করোনাভাইরাস ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তিনজনকে সনাক্ত করে তাদের আইসোলেশনে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সুস্থ্য হয়ে উঠেছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে প্রবাসীদের এখন দেশে না ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে কেউ এলে তাকে সেল্ফ কোয়ারান্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত ২০ জেলায় বাড়িতে কোয়ারান্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৭৪ জন। গত বৃহস্পতিবার ২৬ জেলায় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০১ জন।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়ায় এর থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতন থাকা। বিশ্বব্যাপী এ ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে। কারো মনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা জাগলে নিজ থেকেই সতর্ক হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টাইনে রয়েছেন। বিশ্বখ্যাত ফুটবলার রোনালদো স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টাইনে চলে গেছেন। অর্থাৎ করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার এখন একমাত্র পথ হচ্ছে প্রত্যেককে সচেতন হওয়া। নিজের যত্ন নিজেকে নেয়া এবং অন্যকে সচেতন করা। এর বিকল্প নেই। দেশে সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য। সরকার ৬টি সরকারি হাসপাতালকে পুরোপুরি প্রস্তুত এবং ৫০ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যেও সচেতন হয়ে ওঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নতুন কেউ সনাক্ত হয়নি। এদিক থেকে কিছুটা স্বস্তির হলেও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হওয়ার কারণ নেই। আমাদের দুই বৃহৎ প্রতিবেশি চীন ও ভারতে এ ভাইরাস ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কাছাকাছি দেশ হওয়ায় আমাদের দেশেও ব্যাপকতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার যাতে, কোনো ধরনের অসত্য তথ্য এবং গুজব রটানো না হয়। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অসত্য তথ্য ও গুজব রটানো হয়েছে। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেককে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অযথা মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা থেকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তবে সত্যিকার অর্থে আক্রান্ত হওয়ার খবরও গোপন রাখা যাবে না। এতে এ রোগ দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ এবং সতর্কতা অবলম্বনের সঠিক তথ্য ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব সতর্কতামূলক তথ্য সকলের মেনে নেয়া যেমন কর্তব্য, তেমনি তা অন্যদেরও অবহিত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সক্রিয় তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা বাঞ্চনীয়। প্রকৃত তথ্য ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তুলে ধরে প্রচার করলে তা থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে গুজব বা মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীকে প্রতিরোধ করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই মৃত্যু অবধারিত, এমনটি মনে করার কারণ নেই। এটি বয়সভেদে আশঙ্কার কারণ হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে যারা নিউমোনিয়া, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যেখানে আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল, সেখানে যে কোনো অপ্রতিরোধ্য রোগ-বালাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে সরকার এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। আধা ডজন সরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই অপ্রতুল। বরং দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এ পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সরকার যে ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, এ অর্থের যাতে অপচয় না হয়, এ ব্যাপারে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যবহার করা হবে বা হচ্ছে, তা নজরদারি করতে হবে। করোনা মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। দেশে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, তাদেরকে স্বউদ্যোগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তার সবটুকু ব্যবহার করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপকহারে সতর্কীকরণ ও সচেতনামূলক কার্যক্রম নিতে হবে। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে ইতোমধ্যে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে এসেছে। তারা এ ভাইরাস মোকাবেলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে ফল লাভ হয়েছে। সরকারের উচিৎ হবে চীনের নেয়া পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা। বন্ধুপ্রতিম দেশটির সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা নেয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১৮ ডিসেম্বর, ২০২২
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
৫ নভেম্বর, ২০২২
২ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন