Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফুটবলের দরজায় তালা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে ক্রীড়াঙ্গণকে। ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কভিড-১৯ ভাইরাস ইতোমধ্যেই শঙ্কার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দু’দিন আগে শীর্ষস্থানীয় ইংলিশ দলগুলোর বোর্ড অব ডিরেক্টররা কোবরা মিটিংয়ে স্টেডিয়ামে জন-উপস্থিতি এড়ানোর সতর্কতা জারি করেছে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ইংলিশ ফুটবল লিগ, নারী সুপার লিগ এবং নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সমস্ত খেলা এপ্রিলের ৪ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের পর পুণরায় খেলার মঠে ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে আখ্য দেয়া হয়েছে ব্রিটিশ গনমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেট এর এক প্রতিবেদনে। বিবিসি’র ক্রীড়া সম্পাদক ড্যান রন জানিয়েছেন, এই সময়ে খেলা আবার শুরু করাটা ‘প্রায় অসম্ভব’। এবারের মৌসুম বাতিল করতে হয় কি-না তেমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গ্রেগ ক্লার্ক।

লিগ কম্পিটিশনের সূচী স্থগিত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সূচীর বেক পর্যন্ত। কিন্তু এরপরও সম্ভবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। সূত্র মোতাবেক এরপর পর্যাপ্ত অনুশীলনের সময়ও পাওয়া দায় হয়ে উঠবে।

উয়েফা গত মঙ্গলবার তার ৫৫ সহকারি সদস্যদের নিয়ে মিটিংয়ে বসেছিল। ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোশিয়েসন এবং ইউরোপিয়ান লিগ প্রতিনিধিদের সঙ্গেবৈঠকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নীতিনির্ধারনী কর্মসূচী নির্ধারন করেছে। ধারনা করা হচ্ছে, ইউরোপিয়ান ফুটবলের নির্বাহী পর্যদ গ্রীষ্মকালীন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ স্থগিত করবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও মহাদেশীয় ফুটবলও এই প্রক্রিয়ার অর্ন্তভুক্ত থাকবে।

ইংল্যান্ডের ক্রীড়াঙ্গণের প্রশাসকবৃন্দ গত সপ্তাহে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। কোবরা মিটিংয়ে সরাসরি সরকারি জরুরি অবস্থার সাথে সমন্বয় করে প্রণয়ন করা হয়েছে।

২৭ মার্চ ইতালি, এর চারদিন পর ডেনমার্কের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ফুটবলের আন্তর্জাতিক দুটি প্রীতি ম্যাচ আপাতত বাতিল করা হয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শুরুর একদিন আগে লিগ কাপের খেলা শুরু করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছে ইএফএল কর্তৃপক্ষ। খেলোয়াড়দের অহেতুক ঘোরাফেরা, ট্রেনিং গ্রাউন্ডে যাওয়া-আসা, সমর্থকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এসব ‘অপ্রয়োজনীয়’ কার্যক্রম এড়িয়ে চলার জন্য ক্লাবগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে তারা।

পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে ইউরো ২০২০ আসরের প্লে-অফের ম্যাচগুলোও। ২৬ মার্চ কোয়ালিফাইংয়ের সেমি-ফাইনালে খেলার কথা ছিল স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের। পাঁচদিন পর ছিল কোয়ালিফাইংয়ের ফাইনাল।

এফএ-র সঙ্গে ঘণ্টাখানেক পর করা কনফারেন্সে আর্সেনাল কোচ মিচেল আর্তেতার করোনাভাইরাস পিজিটিভ হওয়ার পর শুক্রবার থেকে প্রিমিয়ার লিগ স্থগিতের ঘোষণা আসে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ ক্লোসড ডোরে আসর চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু কিছু খেলোয়াড়ের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দেখা দেয়ায় তা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এই সিদ্ধান্ত নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি করে। কিছু ক্লাব এবারের মৌসুমকে অকার্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে। এবং তারা পুণরায় এ মৌসুম শুরুর আহবান জানিয়েছে। যেকোন সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা সহজ, কিন্ত সব পক্ষকে খুশি রাখা কঠিন। এবারের মৌসুম বর্তমানে তিনটি প্রেক্ষাপটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এবারের মৌসুম এখানেই শেষ করে দেয়া, যদি তা পরের মৌসুমকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। মে মাসেই লিগ শেষ করা, যদি আর কোন ম্যাচ আয়োজন সম্ভব না হয়, তাহলে বর্তমানে দলগুলোর অবস্থা বিবেচনা করে প্রমোশন এবং রেলিগেশন সম্পন্ন করা। অথবা এবারের আসরকেই বাতিল ঘোষণা করা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্ষেত্রে কিছু আইনগত প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভনা রয়েছে।

পরশু গৃহীত সিদ্ধান্তকে যেসব ক্লাব সমর্থন করেছে তাদের সামনেও কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। আয় আসবে না, কিন্তু বেতন ভাতা নিয়মিত প্রদান করতে হবে। প্রিমিয়ার লিগের বেশিরভাগ দল এ অবস্থা সমাল দিতে পারলেও ইএফএলের দলগুলোর পক্ষে সামাল দেয়া কঠিন। অনেক সূত্র এমনও আশঙ্কা করছে, নিচের সারির কিছু ক্লাব অনেক শঙ্কটের মধ্যে পরে যাবে, যেহেতু তাদের ম্যাচের দিন যে আয় তা বন্ধ হয়ে যাবে। যা তাদের আয়ের বড় একটি অংশ। শুধুমাত্র এ কারণেই ইএফএল চাচ্ছে এ মৌসুম বন্ধ করতে, যাতে তাদের তহবিল বজায় থাকে।

শেষ পর্যন্ত যদি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ আর মাঠে না গড়ায় সেক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়বে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও ক্লাবগুলো। ব্রিটিশ জাতীয় দৈনিক দ্য টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার কারণে চলতি মৌসুমের সমাপ্তি ঘটলে প্রতিটি ক্লাবের ক্ষতি হবে ৩৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৯০১ কোটি টাকা। আর ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষতি হবে ৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশি টাকায় যা ৭৮০২ কোটি টাকার চেয়েও বেশি।

এই শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় প্রিমিয়ার লিগ অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বে। কিন্তু প্রধান ডিভিশনাল ক্লাবগুলোর সমস্যা এরচেয়ে অনেক বেশি। যেসব খেলোয়াড়ের চুক্তি জুনে শেষ হবে, তারা পরে যাবে বাজে অবস্থায় মধ্যে। এ সময় ট্রান্সফার উইন্ডো অনেক জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। উয়েফা যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই সপ্তাহের বৃহস্পতিবার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

উয়েফার চলতি সপ্তাহের ভিডিও কনফারেন্স ২০১৯-২০ মৌসুমের গতিবিধি নির্ধারক হবে। ইস্যুগুলোর মধ্যে একটি-লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা। সমস্তই নির্ভর করবে নির্বাহী পর্যদের সিদ্ধঅন্তের উপর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ভবিষ্যতও জানা যাবে সেখানেই।যদি স্থগিতের ঘোষণা আসে, তাহলে প্রতিটি ঘরোয়া কম্পিটিশনেই বাধ্যবাধকতা থাকবে মৌসুম শেষ করার। যদি বাতিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে ২০২০-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিয়ে আলোচনা হবে। যা লিগের বর্তমানে দলগুলোর অবস্থানের ভিত্তিতে নির্নয় করা কঠিন।

মেডিকেল প্রতিনিধিরা যদিও বলছেন, এই ভাইরাস বেশদূর স্থায়ী হবে না। বিশেষ করে পরবর্তী শীতকালিন মৌসুম পর্যন্ত। তারপরও অনেক প্রশ্নই সামনে এসে যায়। যার উত্তর খুবই কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটবল

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ