Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাসিরনগরের ফান্দাউক-রতনপুর রোডের কয়েকটি স্থানে ডাকাতদের বেরিকেট

ভয়াবহ হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেন জগৎপুরী পীর খাজা মাহবুবুর রহমান

নাসিরনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ৩:২৪ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক-রতনপুর রোডে আতুকোড়া-শিমুলঘরের মধ্যবর্তী কানাই নদীর ব্রিজে টুপি পরিহিত একদল মুখোশদারী ভয়ংকর ডাকাত দলের হামলায় স্বীকার হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগৎপুর দরবারের পীর মাওঃ খাজা মাহবুবুর রহমান জগৎপুরী। ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত প্রায় ৯.৪৫ মিনিটে এই ভয়ংকর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জগৎপুর দরবারের পীর খাজা মাহবুবুর রহমান মাধবপুর উপজেলার শিমূলঘর গ্রামে হযরত শাহজালাল রহঃ যুব সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে বিশেষ অথিতি হিসেবে বাদ এশা আলোচনা করে পরবর্তীতে লাখাই উপজেলার লক্ষীপুর মাহফিলে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাস যোগে শিমূলঘর-আতুকোড়ার মধ্যবর্তী কানাই নদীর ব্রীজ অতিক্রম করতেই সড়কের পাশে থাকা পাটাতনের বেরি কেট লক্ষ করতে পায়। ড্রাইভার গাড়ি থামালে ১০-১৫ জনের দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত রামদা, ধারালো ছুরি সহ টুপি পরিহিত একদল মুখোশ দারী ডাকাত তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলে। এমন সময় জগৎপুরের পীর তার হাতে থাকা দুটি মোবাইল ফোন এবং মাহফিল থেকে প্রাপ্ত হাদিয়া ডাকাতদের দিতে চাইলেন। এবং বললেন তুমরা আমার সব নিয়ে যাও কিন্তু আমার শরীরে এবং গাড়িতে হামলা করোনা। একথা শুনে ডাকাতদের কয়েকজন বলে উঠলো আমরা তর কিছু নিতে আসেনি বরং তোকে প্রাণে মেরে ফেলতে চাই। এমনটা বলেই প্রথমে মাইক্রোবাসের সবগুলো চাকা রামদা দিয়ে কুপিয়ে পানচার করে দেয়। গাড়ির সামনের এবং পিছনের গ্লাস ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে। তারপর গাড়িতে থাকা জগৎপুরী পীর মাহবুবুর রহমানকে লক্ষ করে চতুর্দিক থেকে টুপি পরিহিত ডাকাতরা উপর্যুপরি কুপাতে থাকে। চাকা পানচার অবস্থায়ও এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে প্রাণে বাঁচার জন্য ড্রাইভারকে গাড়ি না থামিয়ে সামনের দিকে বাড়ানোর কথা বলেন। কিন্তু ডাকাতদের চতুর্দিক থেকে অতর্কিত কুপানো কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। গাড়ির ভিতর থাকার কারণে জগৎপুরী পীর নিচে শুয়ে পরে। কিন্তু বাঁচার জন্য চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত রামদায়ের আঘাত ফিরাতে গিয়ে ডানহাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ আলাদা হয়ে যায়। এদিকে জগৎপুরী পীরের গাড়ীর সাথে থাকা একটি মোটরসাইকেল চালককে ডাকাতরা মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে। পরে কোন রকম আতুকোড়া গ্রামের কাছাকাছি হলে গাড়ির আওয়াজ ও চিৎকার শুনে লোকজন বেট হয়ে আসতে থাকলে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাতিয়াইন বাজার পুলিশ ফাঁড়ীর ইন্সপেক্টর কামরুলকে হাসান খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় জগৎপুরী পীরকে উদ্ধার করে। গাড়ি সহ তাদের সাথে থাকা মালামাল সহ কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুলিশ জগৎপুরী পীরকে উদ্ধার করে পূনরায় শিমুলঘর মাহফিলে নিয়ে আসলে তিনি মাহফিলে আগত শ্রোতাদের উদ্দেশ্য এমন বর্ণনা দেন। তবে তার সম্পূর্ণ ধারনা এরা ডাকাত সেজে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমাকে প্রাণে শেষ করে দেওয়ার জন্যই এমনটা করেছে যা কয়েকদিন আগে আমার একটা মাহফিলে একজন লোক সরাসরি করুচিপূর্ণ কিছু বাক্য উচ্চারণ করেছিলো। তিনি ইন্সপেক্টর কামরুলের উপস্থিতে বলেন তিনি দুই থেকে তিন জনকে চিনতে পেরেছেন যাদেরকে পরবর্তীতে দেখলেও চিনবেন এমনটা দাবী করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় কয়েকটি গ্রাম

থেকে আসা হাজার হাজার শ্রোতাদের অনুরোধ করে বলেন যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসেছেন সেহেতু আমরা আইনানুগ ভাবেই এ-র সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ-র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। ছাতিয়াইন ফাঁড়ীর ইন্সপেক্টর কামরুল জানান- এমন একজন ইসলামী জ্ঞানসম্পন্ন হুজুরের ওপর যে বা যাহারাই এমন নেক্কারজনক হামলা করেছে আমি কথা দিচ্ছি এ-র সঠিক তদন্ত করে দ্রুত এদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করবো। শিমূলঘর গ্রামবাসীর দাবী এরা ডাকাত নামধারী জামাত শিবিরের কিছু কর্মী যারা গত ১৬ মার্চ আমাদের অন্য আরেকটি মাহফিলে এসে সরাসরি বক্তাকে হামলা করার হুমকি দিয়েছে। এবং আজকের ঘটনাটি তারাই পরিকল্পিত ভাবে করেছে বলে আমাদের ধারনা। অন্যদিকে উক্ত মাহফিলের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা ঢাকা এ-র প্রধান ফকিহ আল্লামা মুফতি ওসমান গনী সালেহী সাহেবের আলোচনা শেষে রতনপুর মহাসড়ক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য পূনরায় শিমুলঘর-ছাতিয়াইন এ-র মধ্যবর্তী স্থানে ফাঁড়ী পুলিশদের নিরাপত্তায় নিয়ে আশার সময় রাস্তার আবারও গাছ কেটে ডাকাতদল বেরিকেট দেয়। খবর পেয়ে দৈনিক ইনকিলাবের নাসিরনগর উপজেলার সংবাদদাতা খবর সংগ্রহ করতে মোবাইল ফোনে বেরিকেট দেওয়ার ছবি তুলতে চাইলে রাকিব চৌধুরী নামের পুলিশের এক সদস্য সাংবাদিকের সাথে বিরূপ আচরণ করে। সাংবাদিকের পরিচয় দেওয়ার পরও ঐ পুলিশ সদস্য বলে সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাঁধা দেয় এবং আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে উল্টো বিদ্রূপ শুরু করে। এসময় পুলিশ সদস্যরা সিএনজি থেকে নেমে এদিক ওদিক টর্চ লাইট দিয়ে খোঁজ করে কাউকে দেখতে পায়নি। বেরিকেট সরিয়ে রতনপুর পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা প্রধান অতিথিকে নিরাপত্তা দিয়ে পৌঁছে দেয়। দুঃখের হলেও এমনটাই সত্যি যে রতনপুর-ফান্দাউক-নাসিরনগর সড়কে প্রতিদিন ৭-৮ জায়গায় ডাকাতদল ধাপে ধাপে হামলা করছে। এতে করে এলাকার মানুষগুলো সন্ধার পরই এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে হতাশার মধ্যে জীবন যাপন করছে। বিদেশি মেহমান, বিবাহের বরযাত্রী, ওয়াজ মাহফিলে আশা দেশ বরেণ্য আলোচকবৃন্দ, কঠিন রোগীসহ অত্র এলাকার যেকোনো শ্রেণির মানুষ বিশেষ কোন কাজে এই রাস্তা দিয়ে কয়েক বছর ধরে মারাত্মক মৃত্যুর আতংক নিয়েই চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রায় সময় অবহিত করা হলেও তাদের ব্যর্থতার কারণেই হোক কিংবা স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সড়কের চলাচলের সার্বিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই এতদ অঞ্চলের সক নিরাপত্তাহীন মানুষের বৃহৎ দাবী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকাত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ