Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয়করণের দাবি রাখে পৌনে একশ’ বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ কুমিল্লার শ্রীকাইল কলেজ

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার মুরাদনগরের এক মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠা পৌনে একশ’ বছরের কালজয়ী ইতিহাস নিয়ে নান্দনিক সৌন্দর্যের শান্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্রীকাইল কলেজ স্বমহিমায় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে সুনাম ও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এশিয়া উপমহাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন কলেজ এটি। শ্রেষ্ঠ কলেজের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোসহ সামগ্রিক সবকিছু বিদ্যমান কলেজটি জাতীয়করণের দাবি রাখে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এ কলেজ জাতীয়করণ করা হয়নি। মুরাদনগরের সব রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সর্বস্তরের মানুষ সবদিক থেকে সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী শ্রীকাইল কলেজ জাতীয়করণের জোরালো দাবি করেছেন।
গ্রামীণ সৌন্দর্যের এক অপরূপ নিদর্শন কুমিল্লার মুরাদনগরের শ্রীকাইল কলেজ। ১৯৪১ সালে শ্রীকাইল গ্রামের নামেই সেখানকার দানবীর, সমাজসেবক ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. অতীন্দ্র নাথ বসু (এম.এ ট্রিপল গোল্ড মেডালিস্ট)। ১৯৪৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অবিভক্ত বাংলায় কলেজ ছাত্র অরুন দত্তের প্রথম স্থান অর্জনের মধ্য দিয়ে কলেজটি সবার দৃষ্টিতে পড়ে। বর্তমানে কলেজ সীমানায় একটি সুদৃশ্য বিশাল দীঘি, সাতটি পুকুর, মসজিদ, মন্দির, মার্কেটসহ কলেজের নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪২ একর। তার মধ্যে আগেকার সময়ের সুউচ্চ ত্রিতল একাডেমিক ভবনে রয়েছে। মূল ভবনে পাঠদান উপযোগী ৩৬টি কক্ষ রয়েছে। তাছাড়া লাইব্রেরি কক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, বিজ্ঞানাগারের জন্য রয়েছে ১০টি কক্ষ। গ্রন্থাগারে রয়েছে এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিয়ার মতো দুষ্প্রাপ্য ৪০টি বইসহ প্রায় ৭৫ হাজার দুর্লভ বই। রয়েছে ১০টি বিষয়ের গবেষণাগার। এছাড়াও অধ্যক্ষসহ ৩৭টি শিক্ষক পরিবার বসবাস উপযোগী আবাসিক ভবন, ক্যাম্পাসের বাইরে স্টাফ ফ্যামেলি কোয়ার্টারসহ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক দ্বিতল ভবনের দুটি আবাসিক ভবন রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য পাঠাগার, শিক্ষক ক্লাব, সুবিশাল মিলনায়তন, মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার ল্যাব, বিএনসিসি কক্ষ, রোবার স্কাউট কক্ষ, ব্যাংক, পোস্ট অফিসসহ সবকিছুই রয়েছে শ্রীকাইল কলেজে।
কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধ্যবর্তী ১০৫ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলের সবুজ শ্যামলীমায় ঘেরা এক মনোরম পরিবেশ শ্রীকাইল কলেজের অবস্থান। কলেজটির উত্তরে নবীনগর, দক্ষিণে দেবীদ্বার, পশ্চিমে বাঞ্ছারামপুর এবং কসবা উপজেলা। প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রীর এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর এইচএসসি ও ডিগ্রি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে মেধাতালিকা সম্পন্ন শিক্ষার্থী বের হয়ে আসছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক (আসামসহ) ডিগ্রি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সেই থেকে কলেজটি জাতীয়করণের দাবি ওঠে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদাবী আরও জোরালো হয়। এবারের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে কলেজটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি লাভ করে।
কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনের সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘শ্রীকাইল কলেজটি থাকায় এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। কলেজটি জাতীয়করণ করা হোক। পাশাপাশি কলেজে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু হওয়া উচিত।’ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘মুরাদনগর উপজেলায় যেহেতু কোনো সরকারি কলেজ নেই, সেই হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কলেজটি জাতীয়করণ করা প্রয়োজন।’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিয়া মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী অসাধারণ কলেজ। ছাত্র-ছাত্রী, অবকাঠামোগত, ফলাফলসহ সবদিক থেকে বিবেচনা করলে শ্রীকাইল কলেজ নিঃসন্দেহে জাতীয়করণের দাবি রাখে।’ কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কলেজ জাতীয়করণ কমিটির সদস্য আক্তার হোসেন সরকার ও কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলামসহ সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কলেজটি জাতীয়করণের পক্ষে একই মত পোষণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয়করণের দাবি রাখে পৌনে একশ’ বছরের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ কুমিল্লার শ্রীকাইল কলেজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ