Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব অর্থনীতি করুণ

নভেল করোনাভাইরাস

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

চীন সম্প্রতি অর্থনৈতিক দুরবস্থার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে বিশ্লেষকদের ধারণার চেয়েও বাজে চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৮৯ সালে জিডিপির প্রান্তিক তথ্য প্রকাশ শুরুর পর প্রথম ধসের মধ্যে পড়ল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। করোনাভাইরাসের প্রভাবজনিত সংকট মোকাবেলায় পথ খুঁজছে বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ফেডারেল রিজার্ভ বলছে, ১০ দিন আগেও বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার দিকে মোড় নিচ্ছে কিনা তা নিয়ে বাস্তব অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু এখন এটি নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমদানি-রফতানি এমনকি প্রবাসী আয়ও কমে যাওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় কমায় ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত ডলার জমা হচ্ছে, যা কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি বাজারে এসেছে। এদিকে পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক ধ্বসের কারণে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার কথা বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে কতটা উদ্যোগ নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে।

জানা গেছে, এ বছরের প্রথম দুই মাসে কর্মকান্ডে স্থবিরতার কারণে চীনা অর্থনীতির প্রতিটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারিতে চীনের খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এই দুই মাসে দেশটির শিল্প উৎপাদন সাড়ে ১৩ শতাংশ এবং স্থায়ী সম্পদ বিনিয়োগ প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। শিল্প উৎপাদন কমার এই হার চীনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের গ্লোবাল ম্যাক্রো রিসার্চের পরিচালক বেন মে বলেন, চীনের সবকিছু বন্ধ করার প্রভাব এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্য দেশগুলোতে পরিস্থিতি যদি ভিন্নও হয় প্রবৃদ্ধির ক্ষতি এড়ানো যাবে না। বিপর্যস্ত চীন যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছে, তখন ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে। গোল্ডম্যান স্যাকস ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জান হাটজিয়াস ক্লায়েন্টদের বলেছেন, এই অচলাবস্থা ও ভাইরাসটি নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রভাবে মার্চের বাকিটা ও এপ্রিলজুড়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক হারে কমতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন অর্থনীতিকে মন্দার হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিনিয়োগে আস্থা ফিরিয়ে আনতে জরুরি ভিত্তিতে সুদের হার কমায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড), যা অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে। এদিকে ফেডের সুদহার কমানোর পদক্ষেপে অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাস খুব একটা ফেরেনি। এ অবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাধাগ্রস্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি ফিরিয়ে আনতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নে পুরো গত সপ্তাহ এ বিষয়ে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে জনসাধারণের মনোবল ভেঙে গেলে, দেশটির অর্থনীতিতে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। তার মতো অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানরাও বর্তমানে উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে একসঙ্গে শুরু হওয়া এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে জি২০ জোটের সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গেও আলোচনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক উন্নয়শীল দেশের জন্য ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সুদমুক্ত ঋণের ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকরণ কিনতে আরো ৪ হাজার কোটি ডলারের জরুরি তহবিল ঘোষণা করা হয়েছে অর্থ সংকটে পড়া দেশগুলোর জন্য। একইভাবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় গৃহীত নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এছাড়া সুদহার হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চতুর্থবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সাইবেরিয়ার কর্তাব্যক্তিরা। অন্যদিকে মরিশাসের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আর্থিক নীতিনির্ধারণের জন্য চলতি সপ্তাহে বৈঠক ডেকেছে।

এদিকে দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চীনে শুরু হওয়া করোনায় আমদানি খাতে খানিকটা আঘাত হানলেও বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়ায় এখন আঘাত আসছে রফতানি খাতেও। একইভাবে প্রবাসী আয়ও কমে যাওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইতালির মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পণ্যের সাপ্লাই চেইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকারকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাত চিহ্নিত করে আগামী তিন থেকে চার মাসের, অথবা আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অর্থনৈতিক ঝুঁকির বাজেট করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ১ জন রোগী মারা গেছে। বিশ্বের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, যেকোনও সময় বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সরকারকে আগামী তিন থেকে চার মাসের, অথবা আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অর্থনৈতিক ঝুঁকির প্রাক্কলন বাজেট তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে কোন কোন খাতে কী ধরনের ঝুঁকি আসতে পারে, তা নির্ণয় করতে হবে। সেভাবে অর্থও বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। তবে সবার আগে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া অতীব জরুরি। এছাড়া যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বা শ্রমিক ছাঁটাই বেড়ে যেতে পারে, অথবা শ্রমিক নেওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, অথবা শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনে সরকারের নিজস্ব অর্থে অথবা দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করে সম্ভাব্য সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে করোনা উপলক্ষে বিশ্বব্যাংক যে ১২ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন করেছে, সেই ফান্ড থেকে অর্থ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছ থেকে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতের জন্যও অর্থ নেওয়া যেতে পারে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ঝুঁকিটা এখনও আমরা উপলব্ধি করছি না। কিন্তু যদি জনবসতিপূর্ণ বা শ্রমঘন শিল্পে করোনা ঢুকে পড়ে বা দেশের অভ্যন্তরে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাহলে অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইনে বড় ধরনের সমস্যা হবে।
এদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, চীনের করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গার্মেন্টসহ দেশের অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি খাতে। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি কিছু পণ্যের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বাণিজ্য সংগঠনগুলো থেকে গত মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে দেওয়া মতামতে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এমন আশঙ্কার কথা বলছিলেন শুধু চীনের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য করোনার সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ধরে নিয়ে সামনে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা মাথায় রেখে সরকারকে একটা পরিকল্পনা নিতে হবে। করোনার প্রভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। খাতওয়ারি অথবা জেলাওয়ারি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি বলেও তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, জরুরিভাবে কী কী করা যায়, তা চিন্তা করে আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়ে রাখতে হবে। বিশেষ করে সাপ্লাই চেইন যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে কিছু সাপোর্ট দিতে পারে। উদ্যোক্তাদের এলসির ক্ষেত্র সহজ করতে পারে। ভালো উদ্যোক্তারা তারল্য সংকটে পড়লে তাদেরও সহায়তা দেওয়া উচিত হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সামনে ঈদের বেতন-ভাতা দেওয়ার বিষয় আছে, তখন একটা সমস্যা হতে পারে। এ কারণে আগে থেকেই বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মপন্থা তৈরি করতে হবে।

জানা গেছে, করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রফতানি বাজার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। কারণ, রফতানির বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রও বিপদে আছে। বিপদ কেউ আঁচ করতে পারছে না। তবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত তাদের বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এক কথায় আমরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছি। কারণ, ইতোমধ্যে সুতা ও সেলাইয়ের সুতাসহ সব ধরনের আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ও পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রফতানিতেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আরও বড় ধরনের আঘাত আসতে পারে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় কমায় ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত ডলার জমা হচ্ছে, যা কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্বৃত্ত ডলার কেনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি বাজারে এসেছে। গত সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনে এ পরিমাণ টাকা বাজারে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ডলারের দর স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি ব্যয় কমায় ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত ডলার জমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের রেকর্ড দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড নীতিনির্ধারণী সুদহার শূন্যে নামিয়ে এনেছে। এ অবস্থায় আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা আরও কমে ডলারের দাম পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। ফলে সীমার মধ্যে থেকেও অনেক ব্যাংক ডলার বিক্রি করে দিচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনার ফলে এখন পর্যন্ত বাজারে ডলারের দর স্থিতিশীল আছে। এতে করে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স গ্রহীতারা উপকৃত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ডলার কেনার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে টাকা যাচ্ছে। ফলে বাজারে টাকার যে টানাটানি অবস্থার কথা বলা হয়, সে ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ৯ মার্চ থেকে বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত সোমবার কিনেছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এক সপ্তাহে কিনেছে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি বাজার থেকে ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর প্রায় প্রতি মাসেই বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনেছে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। এতে করে এ কয়েকদিনে শুধু ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ছেড়েছে ২ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বাজার থেকে ডলার কেনায় সোমবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গিয়ে ঠেকেছে ৩২ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। গত ৯ মার্চ রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। চলতি মাসের শুরুতে ৩২ বিলিয়নের নিচে ছিল।

বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি হয় চীন থেকে। চীনে করোনার সংক্রমণ প্রথম শুরু হয়। ইতোমধ্যে চীন থেকে আমদানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অনেক আমদানিকারক চীনের বিকল্প খুঁজছিলেন। এখন অন্য দেশেও ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে আমদানি ও রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেক ব্যাংক ডলার ছেড়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে এলসি খোলা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় মার্চে আমদানি আরও কমার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৬২৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। আমদানির সঙ্গে রপ্তানি কমলেও রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ২২৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। মূলত ২ শতাংশ হারে প্রণোদনার ফলে রেমিট্যান্স ব্যাপক বাড়ছে।

করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হাঁচি, কাশি এবং অন্যান্যদের সংস্পর্শে না আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখার কর্মকর্তাদের জোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে হাতের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে অয়োাজিত এক বিশেষ সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ