Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামে নারীর পর্দা : একটি অপরিহার্য বিধান

আব্দুল কাদের মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

তিন

তবে প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলবে। আর পরপুরুষরাও পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলতে হবে। এতে পর্দার অপরিহার্যতা পরিস্ফূটিত হয়।
আয়াতের শেষাংশে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে। এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, এস্থলে রসূলুল্লাহ (দ) এর পুণ্যাত্মা পত্নীগণকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে, যাদের অন্তরকে পবিত্র রাখার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে যেসব পুরুষকে সম্বোধন করে এই বিধান দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন রসূলে করীম (দ) এর সাহাবায়ে কিরাম, যাদের মধ্যে অনেকের মর্যাদা ফেরেশতাগণেরও উর্ধ্বে। কিন্তু এসব বিষয় সত্তে¡ও তাঁদের আন্তরিক পবিত্রতা ও মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য পুরুষ ও নারীর মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা জরুরী মনে করা হয়েছে। (তাহলে বলুন তো ) আজ এমন ব্যক্তি কে, যে তার মনকে সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র মন অপেক্ষা এবং তার স্ত্রীর মনকে পুণ্যাত্মা নবী-পত্নীগণের মন অপেক্ষা অধিক পবিত্র হওয়ার দাবি করতে পারে। আর এটা মনে করতে পারে যে, নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা কোন অনিষ্টের কারণ হবে না! (তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন: ৭/১৯৫)
বহু বিশুদ্ধ হাদীস থেকেও প্রতিভাত হয় যে, উম্মাহাতুল মু’মিনীন বা নবীপত্মীগণ সাধারণত তাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার মাধ্যমেই পর্দা পালন করতেন। আল্লাহ তাআলা মু’মিন নারীদেরকেও অনুরূপভাবে পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, (হে নবী) মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে যা সাধারণত (অনিচ্ছা সত্তে¡) প্রকাশিত হয়ে যায় তা ভিন্ন। তারা যেন ওড়না দিয়ে তাদের বক্ষকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন তাদের গোপন সাজ্জসজ্জা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সূরা নূর: ৩১)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীরা মাহরাম পুরুষ অর্থাৎ এমন পুরুষ যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ, তারা ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে না। এতে পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ (দ) বলেন, তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। তখন এক আনসার সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ------- ব্যাপারে আপনার অভিমত কি ? তিনি বললেন, দেবর -- হচ্ছে মৃত্যুতুল্য। (বুখারী: ৫২৩২)
আলোচ্য হাদীসে ব্যবহৃত “হামউ” শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে স্বামীর নিকটাত্মীয়। শব্দটির উদ্দেশ্য ব্যাপক। শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, স্বামীর যেকোনো দিকের ভাই, চাচা, মামা, খালু, ফুফা এবং তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে সন্তান। যেমন: দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, তাদের প্রত্যেকের ছেলে সন্তান ইত্যাদি। ইমাম তিরমিযী, লাইস ইবনু সা’দ, আল্লামা কাযী ইয়ায ও তাবারী সহ বহু আলেম অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ নারীর জন্য তার দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর -- ও তাদের ছেলেদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা থেকে দূরে থাকতে হবে যেভাবে মৃত্যু থেকে দূরে থাকতে চায়। আর এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, নারীরা তাদের গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তে মাহরাম নয় এমন সকল পুরুষ থেকে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলবে। অর্থাৎ নারীরা এমনভাবে গৃহে অবস্থান করবে যাতে নিকটাত্মীয় বা দূরাত্মীয় কোনো গায়রে মাহরাম বা বেগানা পুরুষের নজরে সে না পড়ে। গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তে এভাবে পর্দাবৃত থাকা নারীর জন্য অপরিহার্য।
বাইরে গমনকালীন পর্দা: বলা বাহুল্য যে, নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী। এজন্য ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রসূলুল্লাহ (দ) তাঁর স্ত্রী হযরত সাওদা (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (বুখারী: ৪৭৯৫) মূলত ইসলাম একটি সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই মানব প্রয়োজনের সকল দিকই ইসলামে বিবেচিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পর্দাবৃত হয়েই বাইরে বের হতে হবে। কিছুতেই পর্দাহীনভাবে বের হওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে বিশ^নবী (দ) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু, যখনই সে পর্দাহীনভাবে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি মেরে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩) আর পবিত্র কুরআনে নারীদেরকে বাইরে গমনকালীন মুহুর্তে পূর্ণ পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট নির্দেশ, “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন (প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময়) তাদের (পরিহিত) জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব: ৫৯)
এ আয়াতে নারীদেরকে বাইরে গমনের সময় তাদের পরিহিত জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্দা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ