Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে নতুন শংকা সংক্রমিত এলাকা থেকে ঘরে ফেরা মানুষদের নিয়ে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২০, ৪:৩৮ পিএম

করোনা ভাইরাস নিয়ে সমগ্র যুদ্ধকালীন অবস্থার মধ্যে রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গ্রামের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়ায় শহরের চেয়ে এখন গ্রামের দিকেই বেশী নজরদারীর দাবী উঠেছে। ঢাকা সহ সংক্রমিত এলাকা থেকে যারা ফিরেছেন তাদের নিয়ে শংকিত প্রতিবেশী সহ গ্রামবাশীরা। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রানের ভয়ে আদী ভিটায় ফিরে এসছেন যে, তাদের কার কি শারিরিক অবস্থা, সে সম্পর্কে খোজ খবর নেয়াও দুরুহ হয়ে পড়েছে।
তবে মাঠ পর্যায়ে নজরদারী কিছুটা যোরদার করা হয়েছে। গত দুদিন ধরে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের সব শহর, বন্দর ও জনসমাগম এলাকাগুলোর ব্যবসা-বানিজ্য থেকে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ। শহরগুলোর পথঘাট অনেকটাই জনমানব শূণ্য। সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামার পরে স্থানীয় প্রশাসন সহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের জন প্রতিনিধিরারও খোজ খবর রাখতে শুরু করেছেন। অনেক এমপি এখনো এলাকায় না ফিরলেও বেশীরভাগই মাঠ পর্যায়ে খোজ খবর রাখছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক চিকৎসক জানিয়েছেন, এখন শুধু বিদেশ ফেরত নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ করে ঢাকা সহ যেসব এলাকায় এ রোগের সংক্রমন শুরু হয়েছে, সেখান থেকে আসা মানুষকে বিশেষ নজরদারীতে রাখা উচিত। পাশাপাশি তাদেরকে এলাকা ও নিজ পরিবারের স্বার্থে আলাদা থাকারও তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় প্রায় ২হাজার ৬শ বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। এর বাইরে প্রায় ৯শ সুস্থবস্থায় কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেসন ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৫জন করোনার লক্ষন নিয়ে চিকিৎসাধীন থাকতলেও তাদের অবস্থা উন্নতির দিবে বলে পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানিয়েছেন। তাদের রক্তের নমুনা আইইডিইআর-এ পাঠান হয়েছে।
করোনার আতংকে গত সপ্তাহখানেক ধরেই রজধানী ছাড়তে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সড়ক, নৌ ও আকাশপথে তিল ধরার ঠাই ছিলনা। এর মধ্যেই ২৬ মার্চ থেকে টানা দশ দিনের সরকারী ছুটি ঘোষনা আসার পরে ২৪ মার্চ ঢাকা সহ সারা দেশ থেকেই দক্ষিণাঞ্চলমুখি জনশ্রোত শুরু হলেও ঐদিন দুপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখি সব নৌযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে চরম বিপাকে পড়েন এঅঞ্চলে ঘরমুখি মানুষ।
২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২৬ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত সড়ক পথে বাস-ট্রাক ও পীকআপ সহ যে যেভাবে পেরেছে পরিবার পরিজন নিয়ে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে ফিরেছে। ২৬মার্চ দিনভরই ঢাকাÑমাওয়াÑভাংগাÑবরিশাল মহাসড়কে ছিল ঘরমুখি আতংকিত জনশ্রোত। এদের বেশীরভাগই সীমাহীন দূর্ভোগ সহ্য করে বরিশাল কেন্দ্রেীয় বাস টার্মিনালে পৌছে সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে মিনিবাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন যানবাহনে পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী ও বরগুনায় চলে গেছেন। বৃহস্পতিবারও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ট্রাক ও পীকআপে বরিশালে পৌছে যার যার গ্রামের বাড়ীতে ফিরেছেন।
গত তিনদিন ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আতংকিত মানুষের দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামেগঞ্জে ফেরার এ শ্রোতকে অনেকেই ’৭১-এর ২৬ মার্চ রাতে ঢাকায় পাক সেনাবাহিনীর বর্বর হামলার পরে প্রান নিয়ে ঘরে ফেরার সাথে তুলনা করেছেন। দীর্ঘ ৪৯ বছর পরে এক প্রানঘাতি ভাইরাসের ভয়ে দক্ষিণাঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষ যে যেভাবে পেরেছে ঘরে ফিরল। তবে এবার কোন মানুষ শত্রুর ভয়ে নয়, অদৃশ্য এক প্রানঘাতি জীবানুর সংক্রমনের আশংকায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ