Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় জীবনধারা বদল বেশি বেশি হওয়া দরকার তগিদ দিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান

মানবতার সদগুণ বিকাশের অপার সুযোগ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২০, ২:৩৯ পিএম

‘আমরা জানি যে অনেক মানুষেরই জীবনযাপনে আসছে নাটকীয় পরিবর্তন। আমার পরিবারও কিন্তু তা ব্যাতিক্রম নয়। আমার মেয়ে বাসায় বসেই অনলাইনে তার পড়াশোনা ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে। কারণ তার স্কুল তো বন্ধই। আমরা আশায় তাকিয়ে আছি করোনাভাইরাস মহামারী আক্রান্ত বিশ্ব মারাত্মক আপদ মুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়েই। এক্ষেত্রে বাদবাকি বিশ্বকে আশা এবং সাহস জাগাচ্ছে ওইসব দেশ বা শহরগুলো, যারা এরইমধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণকে বিদূরিত করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমান কঠিন এক ক্রান্তিকালে আপনাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের দিকে নিয়মিত যত্মশীল থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ’।
নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপপটে উপরোক্ত তগিদ তুলে ধরেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাডামস গেব্রেসাস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে দেওয়া তার সর্বশেষ ভার্চুয়াল ভাষণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার (হু) প্রধান টেড্রোস অ্যাডামস গেব্রেসাস বিশ্ববাসীর কাছে করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে চলমান বিশ্বে জনজীবনের ইতিবাচকতাও তুলে ধরে আশা জাগানিয়া দিকগুলো মানুষকে কাজে লাগাতে মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ আমরা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে অনেক কিছুই ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, যাচ্ছেও। তবে এই মহাদুর্যোগ আমাদের বিশেষ বেশ কিছু দিয়েও তো যাচ্ছে বৈকি। যা হলো আমাদেরকে সবাইকে একীভূত হয়ে পথ এগিয়ে চলার সুযোগ এনে দিয়েছে। মানবতাকে সদগুণগুলো বিকশিত করার জন্য এবং মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে একযোগে জানার, শোনার, উপলব্ধির এবং শেখার অপার সুযোগ তৈরি হয়েছে”।
এহেন সঙ্কটকালে পরিস্থিতি উত্তরণের প্রচেষ্টার পাশাপাশি তিনি মানুষের দেহে এবং মনোজগতে সুস্থতার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বললেন, এটা আপনাদের দীর্ঘসময়েও দেহে সার্বিক কর্মক্ষমতা, সুস্থতা বজায়, মনোবল চাঙ্গা রাখতে সহায়ক হবে। প্রথমত. স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। যা আপনার দেহে স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ইমিউন সিস্টেমকে কার্যকর গতিশীল রাখবে।
দ্বিতীয়ত. এলকোহল জাতীয় মদ্যপান ত্যাগ করতে হবে। খাবার-দাবারে চিনি বা চিনি জাতীয় খাদ্যাভাস এড়িয়ে চলুন।
তৃতীয়ত. ধুমপান পরিত্যাগ করুন। কেননা ধুমপায়ীরা দ্রুতই গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে গিয়ে পড়বেন, যখন তারা করোনাভাইরাসে (কেভিডি-১৯) সংক্রমিত বা আক্রান্ত হবেন।
চতুর্থত. নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শরীরচর্চা ও ব্যায়ামের সুযোগ বিভিন্ন উপায়েই কাজে লাগান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) একজন বয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক অন্তত এক ঘণ্টা এবং শিশুদের জন্য আধাঘণ্টা ধরে শরীরচর্চা ও ব্যায়ামের অনুমোদন দিয়ে থাকে। আর এই ব্যায়াম ও শরীরচর্চা হতে হবে একাকী। যার যার সময় ও সুবিধা অনুযায়ী। তা হতে পারে ঘরের ভেতরে, বারান্দায়, সিঁড়ির কাছে-কিনারে। বর্তমান অবস্থায় যদি ঘরের বাইরে হাঁটার অনুমতি থাকে তাহলেই সেক্ষেত্রে বাইরে ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা যাবে।
অবশ্যই একজন আরেকজনের নিকট থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই তা করতে হবে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা অন্যের ছোঁয়ায় না আসাটা নিশ্চিত থাকতে হবে। ঘর-দুয়ারের বাইরে যাওয়া বারণ থাকলে সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া ধরনের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে মিউজিক, অনলাইন, ইয়োগা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামাÑ এ ধরনের ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা যেতে পারে এ সময়।
ঘরেবাড়িতে একটানা বসে কাজ করবেন না। প্রতি আধাঘণ্টা অন্তর অবশ্যই উঠে দাঁড়ান এবং ৩ মিনিট মিনিট দম নিন। ঘরের ভেতরে চলাচল করুন।
পঞ্চমত. আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্যে দিকে খেয়াল অবশ্যই রাখবেন। এ ধরনের কোন মানসিক সঙ্কট তৈরি হলে, চাপ ও অস্থিরতা-অসুস্থতায় পড়ে গেলে আপনার কাছের বিশ্বস্ত, আপন ও পরিচিতজনদের কাছে খুলে বলে পরামর্শ, সাহায্য ও সহযোগিতা নিতে পারেন তাদের। আপনার কমিউনিটির মাঝেই নিকটজনেরাই এরজন্য হবেন আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহযোগী, উপকারি ও সমমর্মী।
যদি আপনি শঙ্কিত,ভীত, মানসিক চাপের সঙ্কটে কিংবা সংশয়ে পড়ে যান তাহলে বিশ্বস্তজনকে ভরসা করে নিয়ে তার কাছে যেয়ে সমস্যার কথা জানান। আলাপ-আলোচনার ভেতর দিয়ে নিজের মনকে হালকা করে নিন। তাহলেই খুঁজে পাবেন মানসিক স্বস্তি ও শান্তি। বেশিজনের বেহুদা কথাবার্তা, গুজবে, গালগল্পে মোটেই কান দেবেন না।
আর নিজের পরিবার-পরিজন, পাড়া-পড়শী, বন্ধু-বান্ধবদের দিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করুন।
বই পড়–ন, গান শুনুন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে মাত্রার অতিরিক্ত সংবাদাদি দেখা, জানা বা শোনার অভ্যাস করবেন না। তাহলে আপনার উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বেড়ে যেতেই পারে। বেশি বেশি খবর জানার দরকার। নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক সূত্রে পরিবেশিত দুয়েকটি মাধ্যম (মিডিয়া) থেকে পরিস্থিতি বোঝার জন্য দরকারি সংবাদটুকু জানার বা পড়ার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেড্রোস অ্যাডামস গেব্রেসাস বিশ্ববাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বললেন, “করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আমরা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে অনেক কিছুই ছিনিয়ে নিয়ে গেছে ও যাচ্ছে। তবে এই দুর্যোগ আমাদেরকে বেশ বিশেষ কিছু দিয়েও যাচ্ছে বৈকি। এটি আমাদেরকে সবাইকে একীভূত হয়ে পথ এগিয়ে চলার সুযোগও তো এসেছে। তার তা হলোÑ মানবতার পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে একযোগে জানার, উপলব্ধির এবং শেখার অপার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে”।



 

Show all comments
  • ahmed hossain khan ২৮ মার্চ, ২০২০, ৬:২৬ পিএম says : 0
    o Allah amra harate boseci amader mokdur, tumar sathe sristir ki tulona tumi na moha bahadur, tumar sahajjer jonno aj sobai koriteche chot pot, doay koree tumar grace dan a dur kore dao aai gloomy gumoot,hindustan tak a room aro micigun,states streets tumar sahajjer ashai nirob shun suun,bangla baluchist arab o iran, corona tak a kamiabi cure pathe moora kandia hoyraan, bercilona,british bristol,attoman german france soho badi tak a moora kaho bad jaini at all, please please provoo fogive us this is our heartieast call,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১০ ডিসেম্বর, ২০২২
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ