Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্দেশনা মানছে না কেউ

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে সামাজিক দূরত্ব (তিন ফুট) বজায় রাখার নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি ছুটি দিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। এসব নির্দেশনা সাধারণ মানুষকে মেনে চলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করলেও সাধারণ মানষরা আইন মানছে না। সচেতনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমসিম খাচ্ছে মাঠ প্রশাসনের ডিসি-এসপি-ইউএনওরা এবং এসিল্যান্ডরা।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ: গাফফার খান ইনকিলাবকে বলেন, মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। আগের মতই বাজারে চলাফেরা করছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম-রাজধাহী-রংপুর, খুলনাসহ বড় বড় শহর থেকে যারা গ্রামে আসছে তারা বাড়িতে না থেকে বাজারে আড্ডা জমাচ্ছে। অথচ তারা হোম কোরারেন্টাইন থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলক।

মাঠ প্রশাসনকে নাগরিকদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করার নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সব মিলে বদলি ও প্রতাহারের ভায়ে অনেক ডিসি-এসপি ও ইউনওরা কাজ করতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিসি ও ইউএনও ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করলেও তারা উল্টা মনে করে। সে কারণে কিছুটা ভয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ডিসিরা প্রতিনিয়ত ত্রাণ বিতরণসহ অন্যন্য কাজ করছেন।

এদিকে দুটি পা নেই দোকানির, খাবারের দায়িত্ব নিলেন পাবনা বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী। অনাহারে বৃদ্ধা, খাবার নিয়ে ছুটে গেলেন ফরিদপুরের মুধখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা মনোয়ার। এ ধরনের সামাজিক কাজগুলো করে আসছেন প্রশাসনের কর্মকর্তরা। তারপর হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।

যশোরের মনিরামপুরে গত শুক্রবার বিকেলে মাস্ক না পরার ঘটনায় সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনার পরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে একটি আতংস্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা মনে করছেন ভালো কাজ করতে গেলে হয়রানী এবং প্রত্যাহার হতে হচ্ছে। এ কারণে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে সামাজিক দূরত্ব (তিন ফুট দ‚রত্ব) বজায় রাখার থমকে গেছে। গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে কিছু জেলা উপজেলায় সাধারণ মানুষ বিধিনিষেধ মানছে না। তারা রাস্তায় চলাচল করছে। এদিকে সেনাবাহিনী-পুলিশসহ অনন্যা বাহিনী কাজ করছে। তবুও সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে না।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ছুটির দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং মাঠ প্রশাসনের (ডিসি-ইউএনও এবং সিভিল সার্জনদের) সাথে সংযোগ রাখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা গত ২৫ মার্চে জারি করেছে। তা আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহ শেষ হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ সময় রয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, সারাদেশে ডিসি ও ইউএনওরা মাঠে কাজ করছেন।

সারাদেশের জেলা-উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সেই সামাজিক দূরত্ব অনেকেই মানছেন না। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই একে অন্যের গা-ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছে না। এর ফলে করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানে আগের মতই মানুষের আড্ডা চোখে পড়ছে। প্রশাসনের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না তারা।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সচিব ইনকিলাবকে বলেন, সকল জেলা প্রশাসকদের বলেছি, এই ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। সিনিয়র সিটিজেন তো অবশ্যই, যেকোনো নাগরিকের সঙ্গে যাতে সম্মানজনক আচরণ করা হয়। তারা সেই বিষয় গুলো মাথায় নিয়ে দেশের জনগনের জন্য কাজ করছে।

জানা গেছে, ওষুধের দোকান, মুদি দোকান ও সবজির দোকান ব্যতিত সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। উপজেলার অনেক বাজারে এই নির্দেশনা মানছে না। প্রায় সব দোকান খোলা রেখেছে অনেকে। মনে হয় দোকান খোলা রাখার প্রতিযোগিতায় মেতেছে তারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটির দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সংযোগ সাধনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হল। এছাড়া অপর আদেশে মার্চ-এপ্রিল মাসে ছুটির দিনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিবীক্ষণের জন্য প্রতিদিন দুইজন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ সময় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ