Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেসামাল জটের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

বাড়ছেই কন্টেইনার খালাস থমকে আছে ডেলিভারি

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

খাদ্যশাস্য, নিত্যপণ্য, চিকিৎসাসহ সেবাখাতের মালামাল অগ্রাধিকার খালাসের ভিত্তিতে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর সার্বক্ষণিক (২৪/৭) সচল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক ও নৌপথে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সবকিছুই বন্ধ। আগের সিডিউল অনুযায়ী শাটডাউন অবস্থায়ও বিদেশ থেকে একের পর এক জাহাজযোগে আমদানি প্রবাহ বাড়ছেই। আগামী দুই-তিন সপ্তাহে জাহাজের আগমন এবং একই সঙ্গে কন্টেইনার খালাসের হারও বেড়ে যাবে। থমকে আছে ডেলিভারি। এতে করে ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে শিগগিরই।

বন্দরের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ২শ’ টিইইউএস’র (২০ ফুট ইউনিট হিসাব) বিপরীতে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের সবক’টি ইয়ার্ড মিলিয়ে ৪৪ হাজার ৯শ’র স্তুপ তৈরি হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ৪৩ হাজার। এমনকি মাহে রমজান উপলক্ষে আমদানিকৃত ফলমূল ভর্তি ২ হাজার ৬৫০ টিইইউএস’র বড়সড় জট পড়েছে। এ অবস্থায় বেসামাল জটের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। কেননা প্রতিদিনই আমদানি কন্টেইনার খালাস বাড়ছে। অথচ তার ডেলিভারি পরিবহন হচ্ছে মাত্র কয়েকশ’ কন্টেইনার ৬টি ট্রেনে। খালাসে চাপের তুলনায় শুধুই রেলপথে তা খুব সামান্যই। টানা বন্ধের প্রভাবে বন্দরমুখী রফতানি কিংবা আমদানি চালান ডেলিভারি ও স্থানান্তর হচ্ছে না। এতে করে যোগাযোগ স্থবির বন্দর-নির্ভর ১৮টি বেসরকারি ডিপো (অফডক)।

কন্টেইনার জট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা সতর্কতা বজায় রাখার সাথেই বন্দর কার্যক্রম সবসময় সচল থাকছে। পণ্যপরিবহন আংশিক রেলপথে চালু আছে। তবে সবকিছু টানা বন্ধের ফলে মহাসড়ক ও নৌপথে পণ্য ডেলিভারি পরিবহন হচ্ছে না।
তিনি জানান, বর্তমানে বন্দরে আমদানি কন্টেইনারে ১০টি জাহাজ এবং ৫টি খোলা কার্গো জাহাজে ১৫টি জেটি-বার্থে পণ্য খালাস কাজ চলছে। চীনের বন্দর হয়ে আসা একটি জাহাজ সমুদ্রের দিকে করোনা কোয়ারেন্টাইনে নির্দিষ্টকাল অপেক্ষা ও পরীক্ষা শেষে আজ বৃহস্পতিবার জেটিতে ভিড়বে।
এদিকে বন্দরের আমদানি স্রোত বৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যসামগ্রী খালাস ও ডেলিভারি কার্যক্রমে গতি বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৩০ মার্চ নির্দেশনা পাঠায়। এর ভিত্তিতে জরুরি খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা ও সেবাজাত পণ্যের পাশাপাশি চালু থাকা শিল্প-কারখানার কাঁচামাল এবং সরকারি খাতে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, ডকুমেন্ট খালাস দ্রুতায়িত করা হবে- আমদানিকারক, বন্দর ব্যবহারকারিদের এ আশ্বাস দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
আপদকালিন পরিস্থিতিতে আমদানিকারক, ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব রক্ষায় জরুরি সহায়তা, ছাড়, অব্যাহতি এবং আমদানি পণ্যসামগ্রী বন্দর থেকে দ্রুত ছাড়, ওষুধ ও ভোগ্যপণ্য সরবরাহ গতিশীল রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি।

বর্তমান বাস্তবতায় গার্মেন্টসহ অধিকাংশ অচল শিল্প-কারখানার আমদানি কাঁচামাল এ মুহূর্তে আরেক বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে একথা জানিয়ে বিজিএমইএর পোর্ট-শিপিং কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ডেলিভারি হচ্ছে না। হলেও কারখানাগুলো বন্ধ। কাঁচামাল ডেলিভারি নিয়ে কী হবে? আগের শিপমেন্ট আটকে গেছে। কেননা রফতানি অর্ডার প্রায়ই বাতিল।

চীনে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে আগামী কয়েক সপ্তাহে দেশটির অনেকগুলো জাহাজ বন্দরে আসবে কাঁচামালসহ বিভিন্ন শিল্পপণ্য নিয়ে। অন্যদিকে চীনা কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পোশাকসহ মূল রফতানি বাজার ইউরোপ, আমেরিকা ও বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ, মৃত্যুহার এখনও ভযাবহ। বাংলাদেশের বিভিন্ন রফতানি পণ্যের বিশাল (৯০ ভাগ) বাজারই তো বন্ধ। এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ রেখে ঘরে বসে লোকসান গোনা এবং অনিশ্চয়তা ছাড়া কিছুই দেখছি না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ