Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পোশাক খাতে করোনা

৬০০ কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা : ৩০০ কোটি ডলার মূল্যের ৯৪৩ মিলিয়নেরও বেশি পোশাকের অর্ডার বাতিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশগুলো একের পর এক লকডাউন, জরুরী অবস্থা, কারফিউ জারি করেছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু বাজার চাহিদার এ পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না ক্রেতারা। এরই মধ্যে দেয়া ক্রয়াদেশগুলোর পরিমাণ কমাচ্ছে। চলমান ক্রয়াদেশগুলোর উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে বলছে ক্রেতারা। বিশ্বের বৃহত্তম ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের কয়েকজন করোনা পরিস্থিতিতে তাদের ক্রয় আদেশ বাতিল করার মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে দেশটি তার রফতানি আয় থেকে প্রায় ছয়শ কোটি ডলার বা ৬ বিলয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯২ কারখানায় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বা ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে।

জানা গেছে, করোনার প্রভাবে প্রথমে কাঁচামাল সরবরাহ সঙ্কটে পড়তে হয়েছিল পোশাক খাতকে। চীন নির্ভর কাঁচামালগুলো আসতে পারছিল না। কারণ করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ধীরগতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখন চাহিদা সঙ্কটে পড়েছে দেশের পোশাক খাত। পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রেতারা একের পর এক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় ভোক্তা চাহিদা কমে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ দিচ্ছে ক্রেতারা। বিরূপ পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিলের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বিজিএমইএ। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৯২ কারখানার ৩ বিলিয়ন ডলার বা ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এসব ক্রয়াদেশের আওতায় ছিল ৯৪ কোটি ৩০ লাখ পিস পোশাক। এসব প্রতিষ্ঠানের আওতায় আছে ২১ লক্ষাধিক শ্রমিক। ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাইমার্কের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আছে। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক প্রাইমার্কের পাশাপাশি ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করেছে ইউরোপের ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের ক্রেতাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে ক্রেতারা ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছেন। তিনি জানান, আগামী এপ্রিল, মে ও জুন মাসের অর্ডারও বাতিল করছেন ক্রেতারা। রুবানা হক বলেন, তবে পরিস্থিতি যাই হোক, পোশাক শ্রমিকেরা সময় মতো মজুরি পাবেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, সরকার পোশাক শিল্পের পাশে আছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কেউ সাময়িকভাবে গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ কিংবা শ্রমিক-কর্মচারীদের ছুটি দিতে চাইলে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান মেনে করতে হবে। ড. রুবানা হক বলেন, কোনো মালিক যদি তার কারখানার শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানো কিংবা সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ রাখতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই সব বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে চলতি মাসের বেতন পরিশোধ করাসহ নিয়মানুযায়ী প্রতি মাসের বেতন পরবর্তী মাসের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার নির্মাতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতিনিধিত্বকারী এই দুটি গ্রæপের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস চালিত লকডাউনগুলির মধ্যে প্রতিদিনই ক্রয় আদেশ বাতিলের পরিমাণ বাড়ছে। আর এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশটিতে লাখ রাখ লোকের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়েছে। স্বল্প মজুরি বাংলাদেশকে পোশাক শিল্প তৈরিতে সহায়তা করেছে। প্রায় ৪ হাজার কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক নিযুক্ত করেছে। গার্মেন্টস রফতানি ৩৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার বা দেশের মোট রফতানির ৮৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের ৩০ জুনে দেশটির সার্বিক রপ্তানি পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, সঙ্কটের কারণে আমরা ৩ শ কোটি ডলারেরও বেশি হারিয়েছি। আগামী জুলাই অবধি আমাদের সমস্ত আদেশ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত আদেশগুলি অবশেষে বাতিল হয়ে যাবে। এই সমস্ত ক্রয় আদেশগুলো গ্রীষ্মের জন্য দেওয়া হয়েছিল এবং এগুলি সরবরাহ করতে তিন মাস সময় লাগে। এখন যদি তারা এর সরবরাহ না নেয়, তাহলে গ্রীষ্ম শেষ হওয়ার পরে তারা তা আর গ্রহণ করবে না। তার কথায়, ক্রেতারা এখন একটি ‘অপেক্ষা এবং দেখার নীতি’ গ্রহণ করেছে এবং নতুন অর্ডার দেওয়া থেকে একদম বিরত রয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে মন্তব্য করেছেন হাতেম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিল্প সূত্র জানিয়েছে, ক্রয় আদেশ বাতিলকারী ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে গ্যাপ, জারা এবং প্রাইমার্ক অন্যতম। গ্যাপ এবং জারার কাছে মন্তব্য চেয়ে পাঠানো ইমেলগুলিতে সাড়া দেয়নি। কিন্তু প্রাইমার্ক পদক্ষেপটি নিশ্চিত করেছে। বিশ্বব্যাপী সমস্ত প্রাইমার্ক স্টোর বন্ধ রয়েছে এবং ব্র্যান্ডটি এক মাসে ৮০৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারেরর বিক্রি হারাচ্ছে, প্রাইমার্ক এক বিবৃতিতে বলেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের স্টোর, আমাদের ডিপো এবং ট্রানজিটে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান স্টক রয়েছে। এসবের জন্য আমরা পরিশোধ করেছি। আমরা যদি এই পদক্ষেপ (বাংলাদেশে বাতিল করা) না নিই, তাহলে আমাদের স্টকই নেয়া হবে, অথচ আমরা তা বিক্রি করতে পারব না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স¤প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাতের জন্য একটি ৫৮৮ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ উন্মোচন করেছেন। এর আওতায় গার্মেন্টসগুলোকে শ্রমিকদের জন্য এই অর্থ ধরে রাখার জন্য বলেছে। বিজিএমইএর পরিচালক রেজওয়ান সেলিম বলেছেন, এই পরিমাণ অর্থ যথেষ্ট নয়। দেশের বৃহত্তম রফতানি খাতকে বাঁচাতে সরকারের আরও উদ্দীপনামমূলক প্রস্তুাব নিয়ে আসা উচিত।
শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক সিদ্দিকুর রহমান ওয়ালমার্ট এবং এইজ এন্ড এমকে সরবরাহ দিয়ে থাকেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা একটি অভূতপূর্ব সময়ের মুখোমুখি হয়েছি। এটি কত দিন নিচ্ছে তা কেউ জানে না। আমরা আমাদের কারখানাগুলি বন্ধ না করার জন্য কঠোর চেষ্টা করছি। তবে আমরা আর কতক্ষণ ধরে রাখতে পারি?

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ