Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভালো নেই পাটকল শ্রমিকরা

আমাগো কথা একটু লেইখেন

আবু হেনা মুক্তি : | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম

শনিবার বেলা দু’টা। হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফাঁকা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ষাটোর্দ্ধ এক বৃদ্ধ পাটকল শ্রমিক। সাংবাদিক দেখে এগিয়ে এসে বলতে লাগলেন, সবার কথা পত্রিকায় লেখেন আর আমরা পাটকল শ্রমিকরা এত কষ্টে দিন পার করছি কই আমাগো কথাতো টিভি-পেপারে দেখায় না। ভিক্ষুক, রিকশাওয়ালা, দিন মজুর এরাতো তাও ত্রান পাইতেছে। আর আমরা তো তাও পাচ্ছি না। আমাগো কথা কেডা কবে।’ অভিমানের সুরে এভাবে বলতে থাকেন বাস্তহারা এলাকার পাটকল শ্রমিক তোফাজ্জেল হোসেন। 

তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার পাটকলে ছুটি ঘোষণা করে। ছুটির আগে বকেয়া এক সপ্তাহের মজুরি দেয়া হয়। এখনো ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থায় হাতে কোনো টাকা নেই। মুদি দোকানে ১৩ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। এখন আর দোকানি বাকিতে চাল-ডাল দিচ্ছে না। ৩ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অভুক্ত থাকার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এ সময় ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক হাকিম মোল্লা জানান, ঘরে বাজার নেই, চাল-ডাল কেনার কোনো টাকা নেই। ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকলেও মিল খোলার আগে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, স্ত্রী এবং ২ ছেলে- মেয়ে নিয়ে খুবই অসহায়ভাবে দিন কাটছে। কী করবো বুঝতে পারছি না।
শুধু তোফাজ্জেল হোসেন বা হাকিম মোল্লা নয়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের প্রায় ৯ হাজার শ্রমিক পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। মিলগুলোতে ১১ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, এলাকায় মুখ চিনে চিনে কিছু ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বড়জোর মিলের ৫ শতাংশ শ্রমিক কিছু ত্রাণ পেয়েছে। তিনি জানান, বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে তিনি শ্রমিকদের বকেয়া অন্তত ২/৩ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
পাটকল শ্রমিক লীগ খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক মুরাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে পাটকল শ্রমিকদের দিন কাটছে খুবই দুর্বিষহভাবে। অনেক শ্রমিক না খেয়ে রয়েছে।
এদিকে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন ও আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে উৎপাদিত প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। মিল বন্ধ, সে কারণে উৎপাদিত পণ্যও বিক্রি হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে বিজেএমসি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মো. বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, পাটকলে আর্থিক সংকট রয়েছে। এছাড়া পাটকলগুলোতে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার পাটপণ্য অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। তবে এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। মিল খুললে বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাটকল

২৫ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ