Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বের যে পটপ্রেক্ষায় করোনাভাইরাস রোগ

তৈমূর আলম খন্দকার | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫২ পিএম

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, যা এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণহীন। কবে কখন এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তা কেউ এখন পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেনি। পৃথিবীর অন্যতম ধনকুবের বিল গেটস মন্তব্য করেছেন, ‘করোনার প্রতিষেধক তৈরি করতে ১৮ মাস সময় লাগবে।’ পরিস্থিতি যদি তাই হয় তবে অবচেতনের এটাই মনে হয় যে, পৃথিবীর সভ্যতা কি আর একবার ধ্বংসের পথে? এটা কি তারই পূর্বাভাস? গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে, জ্যামিতিক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা আঁচ করা যাচ্ছে না। ফোন, রেডিও, টিভি, পত্রিকা খুললেই বিশ্বব্যাপী করোনা মৃত্যুর খবর আর খবর। প্রবাসী বাঙালিরাও উল্লেখযোগ্য হারে বিভিন্ন দেশে করোনায় মৃত্যুবরণ করছে। একই এলাকায় বসবাস করে পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎকার করতে পারে না। ফোনে কথা হলে কান্নাকাটি, আতঙ্ক আর আতঙ্ক। এখন একটাই সংবাদ, কোথায় কে মৃত্যুবরণ করেছে। জানাজায় কবরস্থানের বেতনভুক্ত কর্মচারী ছাড়া আত্মীয়স্বজনকে পাওয়া যায় না। ব্যতিক্রম দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের জামতলায়। আত্মীয়স্বজন ৭০ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধের লাশ না ধরায় কাউন্সিলর মাকদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নিজেই মৃত ব্যক্তির লাশ নামাচ্ছেন। হঠাৎ করেই গার্মেন্টগুলো আবার চালু করার ঘোষণার কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। তবে প্রকৃত তথ্য এখনো অনুদঘাটিত, যা উদঘাটিত হওয়া উচিত। ঢাকার সেগুনবাগিচায় বসবাস করি। বিকেল ৪টায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে যে অবস্থা দেখি, রাত ৪টায় এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না, অর্থাৎ রাস্তাগুলো মানুষজনবিহীন ফাঁকা অবস্থায় পড়ে আছে। আগে নাট্যকলা ও দুদক অফিসের সামনে রাতে মোটাতাজা কুকুরদের একটা জটলা দেখা যেত, এখন তাও নেই। খাদ্যের অভাবে মনে হচ্ছে কুকুরগুলো অন্যত্র চলে গিয়ে একে অপরের সঙ্গিহীন হয়ে পড়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, খাদ্য না পেয়ে ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো রাজশাহী চিড়িয়াখানার তিনটি হরিণের বাচ্চা খেয়ে ফেলেছে। চিড়িয়াখানার পিকনিক পার্টির ঝুটা খেয়ে কুকুরগুলো বেঁচে থাকত, এখন পিকনিক বন্ধ বিধায় কুকুর ও হরিণের বাচ্চাগুলো পরিস্থিতির শিকার। পত্রিকায় খেটেখাওয়া কর্মজীবী মানুষের ছবি প্রকাশ পাচ্ছে, যারা খাদ্য জোগাড় করতে না পেরে হা-হুতাশ করছে। সবার মুখেই বিষণ্ণতার চিহ্ন। বিভিন্ন চ্যানেলে সমসাময়িক রাজনৈতিক বা সামাজিক বিষয় নিয়ে টকশো করার আমন্ত্রণ পেয়েও যেতে পারি না, পারিবারিক প্রবল বাধার কারণে। অফিস স্টাফ সবাই আগাম বেতন নিয়ে বাড়ি চলে গেছে। নিজ হাতে লিখে পত্রিকায় লেখা পাঠাতে হচ্ছে। হতাশার মধ্যেও আল্লাহপাকের করুণা কামনা করে আশা-প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে থাকা মাত্র। সময়ে সময়ে কেন এমন বিপর্যয় ঘটে? ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২২২ বছর আগেও হজ প্রতিপালন করা সরকারিভাবে বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি যে, যে দিন কাবা শরিফের তাওয়াফ বন্ধ হবে সে দিনই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে কি পৃথিবী সে দিকেই এগোচ্ছে?
করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। চিকিৎসা গবেষকদের মতে, করোনা ৩৮৪ বার (কম-বেশি হতে পারে) তার রকম পরিবর্তন করেছে। বিষয়টি চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য প্রণিধানযোগ্য। ইতোপূর্বে যুগে যুগে অনেক ভাইরাস (কলেরা, বসন্ত, প্লেগ) অনেক জনপদকে জনশূন্য করে দিয়েছে, যার ইতিহাস অনেক রয়েছে। কিন্তু ভাইরাস ঘণ্টায় ঘণ্টায় রকম পরিবর্তন করার ইতিহাস নেই। গবেষকদের মতে, প্রতি শতাব্দী অর্থাৎ প্রতি ১০০ বছর পরপর অনিয়ন্ত্রিত মহামারী পৃথিবীতে প্রকাশ পায় এবং এটাও প্রমাণিত যে, অন্যের অধিকার হরণ, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, অশ্লীলতা প্রভৃতি যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। এবারের বিপর্যয় ভিন্নতর। কারণ এ বিপর্যয় নির্দিষ্ট কোনো এলাকাভিত্তিক নয়, বরং বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে ওই সব রাষ্ট্রে বেশি হয়েছে, যারা স্বেচ্ছচারিতামূলে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের সুবিধা আদায় করছে। তবে পত্রিকান্তরে প্রকাশ, পৃথিবীর ২০টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র বিশেষ করে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো এখনো করোনামুক্ত, যে রাষ্ট্রগুলোর নাম এখনো মানুষ জানে না। যেমন- নাউরু, পালাউ, সামোয়া, সলেমন দ্বীপপুঞ্জ, তুর্কিমিনিস্তান, টাভালু, ভানুয়াতু প্রভৃতি রাষ্ট্র, যাদের কোনো প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে নেই। অথচ যারা বিশ্বকে ওলটপালট করে দিচ্ছে, যারা জাতিসঙ্ঘকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে, যারা চাঁদের দেশ দখল করে অন্য সব গ্রহ আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায় মত্ত, জীবনধ্বংসকারী অস্ত্র বিক্রি যাদের অন্যতম ব্যবসা, পৃথিবীকে একপলকে ধ্বংস করার ক্ষমতা যারা রাখে তারাই এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। করোনার প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার করতে পারছে না। মিডিয়াতে কথা বলার বডি ল্যাংগুয়েজে বোঝা যায়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উন্মাদের মতো আচরণ করছেন, অন্যদের মুখে হতাশা। আর হতাশা দেখে মনে হচ্ছে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা তারা যেন হারিয়ে ফেলেছেন।
বর্তমান শতাব্দীতে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বার্থচরিতার্থ করার জন্য গণহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়াও অতিসম্প্রতি বৃহৎ শক্তির প্রভাব-প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার জন্য নিরস্ত্র মানুষ নিধন হয়েছে চরম পর্যায়ে, হয়েছে নির্বিচার গণহত্যা। আমেরিকা একটি মিথ্যা অজুহাতে ইরাক দখল করে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, রোহিঙ্গারা শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে বৌদ্ধরা সেখানে গণহত্যা চালিয়েছে। চলতি সালেই মুসলমানদের হত্যা করে ড্রেনে নিক্ষেপ করেছে ভারতের সাম্প্রদায়িক মোদি সরকার। সব মুসলমানের আধ্যাত্মিক রাজধানী সৌদি আরবের বাদশাহ নীরবতা দেখিয়ে এ বর্বরতাকে সমর্থন দিয়েছে। বিশ্বে ৫৬টি মুসলিম রাষ্ট্র ও তাদের সংগঠন ওআইসি প্রভুভক্তি দেখিয়েছে। উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা, একটু বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাও করতে দেখা যায়নি। অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাদের থাকার কথা ছিল বাঘের মতো গর্জন, তারা এখন বিড়ালের ভূমিকায়; এ কারণেই এত খনিজসম্পদের মালিক হওয়া সত্তে¡ও বিশ্ব মুসলমানদের সম্মান রক্ষার্থে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। আরাম আয়েশে মত্ত থেকে নিজেরাই কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে।
নারীর পরিবর্তে পুরুষে পুরুষে যৌন সম্ভোগ করায় আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়ে লুত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, বর্তমানে যা ইসরাইল ও জর্দানের মাঝে মৃতসাগর নামে পরিচিত একটি হ্রদ, হিব্রু ভাষায় ‘ইয়াস হাম্মেলাহ’, আরবি ভাষায় ‘বাহারত লুত’, রোমান ভাষায় ‘লাকাস এসফালিতেস’ নামে পরিচিত এবং আয়তন ৩৬০ বর্গমাইল, প্রস্থ ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার এবং গভীরতা এক হাজার ফুট। জর্দান নদীর সাথে হ্রদটি মিশেছে, কিন্তু এখানে কোনো জলজ প্রাণী বাঁচে না, জলজ প্রাণী ঢোকার সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করে। কারণ হৃদটিতে আল্লাহর অভিশাপ রয়েছে। জর্দান নদী থেকে ৬ মিলিয়ন টন পানি প্রবেশ করলেও পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে উড়ে যায় বলে হ্রদটি কোনো সময়ই পানিতে ভরপুর হয় না, যা ধ্বংসপ্রাপ্তের একটি নমুনা। তার পরও মানবজাতি এসব দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। এখন কি তার ব্যতিক্রম হচ্ছে? সৃষ্টিকর্তা অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এতদসত্তে্বও এ অশ্লীলতা চলছেই চলছে। পুরুষ পুরুষকে বিয়ে এবং নারী নারীকে বিয়ে করাকে কোনো কোনো রাষ্ট্র আইনগত বৈধতা দিয়েছে। নগ্নতা ও অশ্লীলতাই যেন এখন সর্বোৎকৃষ্ট সংস্কৃতি। যে নারী যত নগ্ন হতে পারে, সে তত বড় স্টার। সমকামিতা বাংলাদেশেও আছে, ‘রূপবান’ নামক একটি ম্যাগাজিন পত্রিকা প্রকাশনার মাধ্যমে এই পশুগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল, কিন্তু এখন তারা আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে। তবে বকধর্মী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সমকামীদের অনেক সমর্থক রয়েছে। সমকামিতার সমর্থন আর সৃষ্টিকর্তাকে চ্যালেঞ্জ করা একই কথা। ফলে কেন সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টিকে ধ্বংসের জন্য পাঁয়তারা করবেন না?
গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াশংই মুসলমান। সব মুসলমান সৌদি আরবের মাটিকে পবিত্র ভূমি মনে করে, যে ভূমিতে হজরত মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেছেন। অথচ এই ভূমিতে শুরু হলো নাইট ক্লাব, মদের বার, সিনেমা হল, বিকিনি পরা নারীর নগ্ন দেহ প্রদর্শন প্রভৃতি; যা নিষিদ্ধ করার জন্য কুরআন শরিফ নাজিল হয়েছে। এমতাবস্থায়, সৌদিবাসী করোনার মতো অভিশাপে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। পৃথিবীতে সর্ব ক্ষেত্রে চলছে সীমা লঙ্ঘন আর সীমা লঙ্ঘন। সীমা লঙ্ঘনকে সৃষ্টিকর্তা মোটেই সহ্য করেন না। সীমা লঙ্ঘন থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় অনুশোচনা করে তওবা করে সরল সোজা স্বাভাবিক পন্থায় সৎভাবে জীবনযাপন। করোনা থেকে বাঁচার জন্য আসুন আমরা যার যার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেই। সব অপরাধের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণ ও ক্ষমা প্রার্থনা করি।
লেখক: বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা



 

Show all comments
  • মোঃ মাইনুল ইসলাম ১৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১১ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ্ 100% সত্যকথা লেখার জন্য কৃতজ্ঞ স্যার।
    Total Reply(0) Reply
  • মিজানুর রহমান ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ৭:২৬ এএম says : 0
    সুন্দর উপস্থাপনা এবং সঠিক কথাগুলো বলার জন্য অনেক ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন