Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৭ এএম

মানবসভ্যতার ইতিহাস হার না মানার। মানুষের হার না মানা মনোভাবই তাকে প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও মানুষ জয়ী হবে। এজন্য চলছে ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরির গবেষণা। বিজ্ঞানীরা মানবজাতিকে রক্ষায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ল্যাবরেটরিতে। তাদের আশা, করোনাভাইরাস যত ভয়ঙ্কর হোক না কেন তার ভ্যাকসিন ও নিরাময়ের ওষুধ আবিষ্কার হবেই। অস্ট্রেলিয়ার গবেষণাগারে করোনাভাইরাসের দুটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করেছেন একদল গবেষক। এ দুটি ভ্যাকসিন প্রাণীর শরীরে প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও মার্কিন সংস্থা ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যুক্ত একদল গবেষক এ দুটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছেন।
সবচেয়ে বড় কথা, একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর অতিদ্রুত জেনেটিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, যার জেরে এই মারণ ভাইরাসের গতিবিধি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে বিজ্ঞানীদের। আর পাঁচটা ভাইরাসের মতো করোনার চরিত্র স্থির থাকছে না। বিজ্ঞানীদের সাফল্যের ওপর যেহেতু মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল সেহেতু করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তারা জয়ী হবেন, এ শুভ কামনা বিশ্ববাসীর। আমাদের বিশ্বাস, অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ মানুষকে মারণাস্ত্রের বদলে জীবন বাঁচানোর বিজ্ঞান গবেষণায় ব্রতী হতে আগ্রহী করবে।
এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সারা দুনিয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঘরে থাকার নির্দেশনা ভঙ্গ করে কেউ অকারণে বাইরে এলে জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট কেউ বাইরে বের হলে প্রয়োজনে গুলি করার জন্য সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের জীবন বাঁচাতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশেও গত বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস থাবা বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইন না মানার কারণে। ইতালিসহ ইউরোপফেরত প্রবাসীদের অন্তত ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের সিংহভাগ এ নির্দেশনা মানেনি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ঘরে থাকার সুযোগ সৃষ্টিতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও সেটিকে অনেকে গ্রামে ছুটি কাটানোর মহোৎসব হিসেবে নিয়েছে।
নাগরিক অসচেতনতার কারণেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা এমন এক ভয়াবহ ভাইরাস যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে এ ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতির সমূহ সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বিশ্বের সবচেয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকায় বাংলাদেশের নাম কয়েক বছর শোভা পেলেও এ বছর তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। বলা যায়, এ বছর অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে পৃথিবীর সাড়ে সাত শ কোটি মানুষ, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও সে দুর্ভাগ্যের শিকার। এ দুর্ভাগ্য যাতে সর্বগ্রাসী না হয় তা নিশ্চিত করতে হোম কোয়ারেন্টাইন জোরদার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। জাতীয় অস্তিত্বের স্বার্থেই সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নাগরিকরা নিজেদের স্বার্থেই সুরক্ষার নির্দেশনা মেনে চলবেন- এমনটি প্রত্যাশিত। নির্দেশনা ভঙ্গ করে অকারণে বাইরে ঘোরাঘুরির জন্য জরিমানারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দৃশ্যত কঠোর পদক্ষেপ হলেও দেশবাসীর জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সমর্থনযোগ্য।
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য, শাক-সবজি-মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ঢাকায় মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায়। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে। আমাদের উপরও এই আঘাত আসতে পারে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
করোনাভাইরাস দুর্যোগ দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের জীবনে ইতোমধ্যে মহাসংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এ মন্দাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সমাজের গরিব-দুঃখী মানুষ যেন খাদ্যের অভাবে মারা না যায় সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়েও গরিব-দুঃখী মানুষের পেটে ভাত জোগানো সরকারের প্রধান কর্তব্য। জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। নির্বাচন আসলে জনগণের কথা মনে পড়বে কিন্তু তাদের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়াবেন না এটা হতে পারে না। নির্বাচনের সময় ভোট চাওয়ার মতো এই সংকটে জনগণের কাছেও যেতে হবে। গরীব-দুঃখী মানুষের দরজায় যেয়ে খাবার পৌঁছে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ বাঁচলে দেশ বাঁচবে, মানুষ টিকে থাকলে সবকিছু টিকবে। সময় এখন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার। তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন