Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
ইনকিলাব ডেস্ক : অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে প্øাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে বেড়েছে জন দুর্ভোগ।
কুড়িগ্রামে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে জেলার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও সদর উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে পাট, সবজি, কলাসহ আমন বীজতলা। এসব এলাকার কাঁচাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এরশাদুল আলম জানান, আগের পানি নামতে না নামতে আবারো বন্যার পানি বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়ে ও গবাদিপশু নিয়ে মানুষজন আবারো দুর্ভোগে পড়েছে।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বি এম আবুল হোসেন জানান, গতকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারো চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো বন্যা দেখা দেওয়ায় বন্যা কবলিত মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৫সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, দুধকুমোরের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ত্রাণ নয় কার্যকরী সমাধান চান ফুলগাজী উপজেলা বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ। শুক্রবার থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উত্তর দৌলতপুর এলাকায় ৪৫ ফুট জায়গা ভেঙ্গে যায়। এতে করে উপজেলার উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, সাহাপাড়া, বিজয়পুরসহ অন্তত ১০ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে প্রতি বছর একই স্থানে বাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমনের বীজতলা, ভেসে যায় পুকুর ও চাষিদের লাখ লাখ টাকার মাছ।
স্থানীয়রা জানান, মুহুরী কহুয়া বাঁধের ১শ’ ৪২ কিলোমিটার অংশে ২০১৫ সালে একই অংশে ভাঙন দেখা দেয়। তাদের দাবি, বার বার একই স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বাঁধের ভাঙন কবলিত অংশ একই এলাকা থেকে গভীর গর্ত তৈরি করে মাটি দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। ফলে শনিবার সন্ধ্যায় আবদুল হকের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দৌলতপুর, পূর্ব ও উত্তর গনিয়া মাড়া, যশপুর ও শাহাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য, সুপেয় পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের। বন্যার পানিতে ফসলী জমি, মাছের ঘের, বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কোহিনুর আলম জানান, ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল চাপে মুহুরী কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তৎসংলগ্ন এলাকা প্লাবিত হয়।
হাতিয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, নদীতে অতিরিক্ত জোয়ার ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর, চরঈশ্বর, সোনাদিয়া ও জাহাজমারা ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত টানাবর্ষণ ও জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। এরমধ্যে রয়েছে, সোনাদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাদিয়া, মধ্য সোনাদিয়া, মধ্য গ্রাম, চরচেঙ্গা, মধ্য চরচেঙ্গা, মাইজচরা, মধ্য মাইজচরা গ্রাম, জাহাজমারা ইউনিয়নের চরহেয়ার, আমতলি, বিরবিরি, মধ্য বিরবিরি, ম্যাকপাষাণ, মোহাম্মদপুর, উকিলয়াগো গোপট ও জাহাজমারা গ্রাম, বুড়িরচর ও চরঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টি, মেঘনা নদীতে অতিরিক্ত জোয়ার ও কয়েকটি স্থানে জোয়ারের পানির আঘাতে বেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় উল্লেখিত গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করে। এতে অন্তত ২৫ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাতিয়ার ইউএনও জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের ২৫/৩০টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে শুনেছি। প্লাবিত গ্রামগুলোর খবর নেওয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ