Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদর্শ সন্তান গড়তে শিশুদের ধর্মীয় প্রশিক্ষণ দিন

প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ

মানব দেহ ও আত্মার সমবায়ে গঠিত অনবদ্য সৃষ্টি। তাই মানব সন্তানদের শারীরিক দিক থেকে সুস্থ ও সুঠাম করে গড়ে তোলা যেরূপ প্রয়োজন ঠিক তদ্রুপ আত্মিক দিক থেকেও গড়ে তোলা প্রয়োজন। তাই শিশু-কিশোরদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে তাদের জন্য বিজ্ঞান সম্মত সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। কেননা, ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান ব্যতিরেখে কিশোরদের জন্য প্রকৃত সৌভাগ্যের আসা করা যায় না। কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করা প্রয়োজন। এ পর্যায়গুলো একের পর এক অতিক্রম করতে হবে। এখানে আমরা সংক্ষেপে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ধর্মের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি : শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের সর্ব প্রথম পর্যায় হচ্ছে তাদের মধ্যে ধর্মের প্রতি আকর্ষণ ও মহব্বত বাড়াতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে যে কোনো ধর্মীয় বা ভালো কাজ সম্পাদিত হলে তা ফরজ না হওয়া সত্ত্বেও এবং সে দৃষ্টিতে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও কাজটির প্রতি পিতা-মাতার স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে ঐ কাজের প্রতি সন্তানের আকর্ষণ ও মহাব্বত সৃষ্টি হবে।
অনেক সময় দেখা যায়, পিতা-মাতা যখন নামাজ আদায় করেন শিশুরা পাশে দাঁড়িয়ে পিতা-মাতার অনুসরণ করে। তাদের সাথে রুকু-সিজদাহ করে এবং হাত তুলে মুনাজাতও করে। এমতাবস্থায় পিতা বা মাতার উচিত নামাজ শেষে তার শিশু সন্তানকে এ কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা। বিভিন্নভাবে এ স্বীকৃতি প্রদান করা যেতে পারে। যেমন নামাজ শেষে তাকে হাত দিয়ে নিজের কাছে ঘনিষ্ট করে নেয়া, কোলে বা বুকে তুলে নেয়া, চুমু দেয়া বা অভিনন্দন সূচক  ব্যবহার করা। বলা যেতে পারে, আল্লাহ তোমার নামাজকে কবুল করুন। হাসি মুখে যে কোনোভাবে তার কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ বা মুখে উচ্ছ্বাস প্রকাশের মাধ্যমে তার কাজের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান ও সম্মান প্রদর্শন করা হলে তা তার প্রতি এ কাজের পুরস্কার স্বরূপ হয় এবং তার মনে এক বিরাট উৎসাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে সে নিয়মিত এ কাজ করতে আগ্রহী হয় এবং তার অন্তরে ধর্মীয় কাজের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি হয়। অনুরূপভাবে যে কোনো ভালো কাজের জন্যও তাকে উৎসাহ দিতে হবে। কেননা শিশু বুঝতে পারে যে, তার এ কাজে সবাই খুশি হয়েছে। তাহলে সে এ কাজের কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে রাজি হবে না। একইভাবে শিশুদেরকে মাসজিদে বা কোনো ধর্মীয় জলসায় নিয়ে যাওয়া যায়। এতে সে আরো উৎসাহিত হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যেসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খুব দীর্ঘ সময় থাকতে হবে তাতে তাকে না নেয়াই উত্তম। কারণ, তাতে তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে। তবে যে সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সময় কম লাগে, যেসব মাসজিদের পাঞ্জেগানা নামাজের জামাতে বা যে অনুষ্ঠানে দেরীতে যাওয়া অথবা যেখান থেকে অনুষ্ঠান সমাপ্তির পূর্বে চলে আসা সম্ভব এমন সব অনুষ্ঠানে শিশুদের নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে তার খুব ভালো লাগবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানের উত্তম পরিবেশের প্রতি তার মনে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে সে পরবর্তীতে এ ধরনের অনুষ্ঠানাদিতে যাওয়ার জন্য নিজে আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং অনুষ্ঠানের সময়ের প্রশ্নেও তার ধৈর্যের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
ধর্মীয় কাজে অভ্যস্ত করে তোলা : কোনো মানুষ যখন কোনো কাজের পুনরাবৃত্তি করে তখন তার মন মানসিকতায় এ কাজ একটি গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং তার মধ্যে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। উদাহরণ স্বরূপ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা, সুশৃঙ্খল, গোছগাছ ও সুবিন্যস্ত থাকা বা রাখা, কোনো দায়িত্ব পালন, ধর্মীয় কার্যাবলী আঞ্জাম দেয়া ইত্যাদি সব কিছুই পুনরাবৃত্তি থেকে অভ্যাসে পরিণত হয় অর্থাৎ পুনরাবৃত্তির কারণে কাজটি সহজ হয়ে আসে এবং অনেকটা স্বতঃস্ফুর্ততা ও স্বয়ংক্রিয়তা সৃষ্টি হয়। এটাই অভ্যাস।
শৈশব ও কৈশোর বয়সের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সহজ অভ্যস্ততা। শিশু বা ছাত্র-ছাত্রির মধ্যে এ বয়সে যদি দীনি কাজের বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলা যায় তাহলে পরবর্তী সময়ে তার মধ্যে সে অভ্যাস সহজেই থেকে যায়। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে তাকে এরূপ যে কোনো কাজে অভ্যস্ত করে তোলা অত্যন্ত কঠিন ও আয়াসসাধ্য, ক্ষেত্রবিশেষ সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। তাই যে কেনো ইতিবাচক অভ্যাস এ বয়সেই গড়ে তোলার চেষ্টা করা প্রয়োজন। তাই শিশুর ধর্মীয় কাজ-কর্মের পুনরাবৃত্তি কমপক্ষে এতখানি হওয়া অপরিহার্য যাতে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। উদাহরণ স্বরূপ শিশুদেরকে নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়ে নেয়ার জন্য অভ্যস্ত করা দরকার। এজন্য তাদেরকে ফজরের ওয়াক্তে বেশ তাড়াতাড়ি জেগে উঠতে ও নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে অভ্যস্ত করা প্রয়োজন। শৈশব যদি তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে বড় হয়েও তাদের মধ্যে এ অভ্যাস থেকে যাবে। অন্যদিকে সন্তান অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ার পর যখন তার বয়স ইবাদাত বন্দেগী ফরজ হওয়ার পর্যায়ে উপনীত হয় তখন তাদেরকে এ সম্পর্কে সচেতন করা এবং ইবাদাত বন্দেগীসহ সকল প্রকার শরয়ী দায়- দায়িত্ব সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা প্রদান করা প্রয়োজন। তাহলে শৈশবের অভ্যাস ও পরবর্তী সময়ের জ্ঞান মিলিতভাবে তার ধর্মীয় জীবন-যাপনকে নিশ্চিত করে তুলবে।
ধর্মীয় জ্ঞান : ধর্মীয় শিক্ষা প্রশিক্ষণের তৃতীয় পর্যায় ধর্মীয় জ্ঞান। যে শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে ও পরে ধর্মীয় আদব-কায়দা ও রসম- রেওয়াজের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি ও ইবাদত বন্দেগীতে অভ্যস্ত হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরবর্তী স্তরে তাকে প্রকৃত ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করা প্রয়োজন অর্থাৎ ইতোপূর্বেকার দীনি ধারণাসমূহ যেখানে অনুস্মৃতি ও মুখস্থ ধারণামাত্র, সেখানে পরবর্তী পর্যায়ে তাকে দীনকে সঠিক অর্থে জেনে বুঝে গ্রহণের উপযোগি জ্ঞান প্রদান অপরিহার্য। এ পর্যায়ে তাকে যুক্তি-প্রমাণ, বিচার বুদ্ধির প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহকারে ধর্মীয় বিষয়াদিতে জ্ঞান প্রদান করতে হবে এবং তা ধারণের জন্য তার মন-মগজকে প্রস্তুত করতে হবে। এ সময় তার সাথে এ দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠনের দিক থেকে ১৩ বছর বয়স হচ্ছে চিন্তাশক্তির নিষ্পন্নতা বা চিন্তাশক্তির ক্রমবিকাশের সময় অর্থাৎ এ বয়সকালটি হচ্ছে সেই সময় যখন মানুষ কোনো জিনিসের অনুপস্থিতিতে বা কোন জিনিসের অস্থিত্ব না থাকা সত্ত্বেও তা কল্পনায় ধরে নিয়ে নানা চিন্তা-গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে। এর পূর্বে ছেলেমেয়েদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বহিভূর্ত বা অশ্রুতপূর্ব বিষয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা জন্মায় না, এমন কি এ জাতীয় বিষয়ে শুনে সে সম্পর্কে কথা বললেও ঐ সময় তাদের মন-মগজে সে সম্পর্কে যথার্থ ধারণা থাকে না, বরং তা শ্রুত ও শিক্ষাপ্রাপ্ত শব্দাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ১৩ বছর বয়স হবার পর প্রকৃত অর্থেই তারা ধর্মীয় বিষয়ে চিন্তা ও আলোচনার উপযোক্ততা অর্জন করে। অতএব, তাদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এ সময় তাদের মনে ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগ্রত হয় যার সুচিন্তিত জবাব দেয়া হলে তা তারা ধারণ করতে পারে। তাই এ সময় তাদের কাছে যুক্তি প্রমাণ সহকারে ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলা প্রয়োজন। এতে তাদের সমঝ-শক্তি, জ্ঞান ও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।
বলা যায়, এ বয়সে উপনীত হওয়ার পূর্বেই ছেলে-মেয়েদেরকে ইবাদত বন্দেগী ও দীনের অন্যান্য করণীয় বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান প্রদান করতে হবে যাতে তারা তাদের করণীয় সমূহ আঞ্জাম দেয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতির অধিকারী থাকে। অর্থাৎ এ পর্যায়ের জ্ঞান প্রধানত কর্তব্য জ্ঞান। কিন্তু ১৩ বছর বয়স থেকে যে জ্ঞানগত পর্যায় শুরু হবে তা হচ্ছে ধর্মকে সঠিকভাবে অনুধাবনের পর্যায়। এ সময় তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। তারা জানতে চায় কেন, কিভাবে ইত্যাদি। তারা যেমন কারণ জানতে চায়, প্রমাণ পেতে চায়, তেমনি খুঁটিনাটি ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াদির দিকেও তাদের দৃষ্টি নিপতিত হয়। তারা হিকমাত বা পরম জ্ঞান বা প্রকৃত তত্ত্ব জানতে চায়।
ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের রূপ পরিগ্রহণ : উল্লিখিত তিন পদক্ষেপ অর্থাৎ কিশোরকে বুদ্ধিবৃত্তিক চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান দান সম্ভব হলে তার মধ্যে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করা সম্ভব হবে এবং তা স্থায়িত্ব লাভ করবে। প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে যখন তার কথা, কাজ, আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা সব কিছু ধর্মীয় হয়ে যাবে তখন সে একটি আদর্শ মানবে পরিণত হবে।
স্বতঃস্ফুর্ত ধর্মীয় উদ্দীপনা : একজন কিশোরের মধ্যে যখন পুরোপুরিভাবে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে তখন তার মধ্যে একটি বিশেষ ধর্মীয় ও আত্মিক শক্তির সৃষ্টি হয় যা স্বতঃস্ফুর্ত ধর্মীয় উদ্দীপনা আকারে প্রকাশ পায়। তখন তার মধ্যে ধর্মের প্রতি গভীর মহব্বত জন্ম নেয় এবং সে ব্যাপকতরভাবে ধর্মীয় তৎপরতা শুরু করে। অতঃপর সে একজন সাধারণ মুসলমান নয় বরং সে একজন আন্তরিক দেশ প্রেমিক ও সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠে। এরপর তার মধ্যে গভীর ধর্মীয় উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাসের জন্ম নেয় এবং সে যেন কোনো হারানো সম্পদের পিছনে ছুটে বেড়ায়। তার মধ্যে এক উন্নততর প্রেমের উদ্ভব হয় যা হচ্ছে মহান আল্লাহর প্রতি প্রেম। আর যখন সে এই খোদাপ্রেমের স্তরে উপনীত হয়, অতঃপর খুব সহজে সে প্রবৃত্তির তাড়নায় পরাভূত হয় না। পার্থিবতার দ্বারা আকৃষ্ট হয় না। ফলে তার আর পথচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, মানুষের দেহের খাদ্যের মধ্যে এক ধরনের পর্যায়গত মিল রয়েছে। শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে এক ধরনের সহজ-সরল খাবার দেয়া হয়, তা হচ্ছে দুধ। তারপর শিশুটি যখন বড় হতে থাকে তখন তাকে অধিকতর পূর্ণ খাবার দেয়া হয়ে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টিও তদ্রুপ পর্যায়ক্রমে  পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শিশুর ধর্মের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার সূচনা করতে হবে এবং ধাপে ধাপে তাকে এমন এক স্তরে নিয়ে যেতে হবে যখন তার মধ্যে সঠিক পথ স্বতঃস্ফুর্ততা সৃষ্টি হবে। আর তাহলে কিশোরের পথহারা, সন্ত্রাস, ইভটিজার, নিষ্ঠুর ইত্যাদি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। শিশুদের সুন্দর জীবন গঠনে এটাই সত্য এবং সঠিক পথ।
ষ লেখক : প্রাবন্ধিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদর্শ সন্তান গড়তে শিশুদের ধর্মীয় প্রশিক্ষণ দিন
আরও পড়ুন