Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাহে রমজানে অধিকহারে দান খয়রাত করা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৩ এএম

ইসলামী বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। এই মাসের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য আল কোরআন ও আহাদিসে নাববীতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম মিল্লাতকে এই মাসে অধিকহারে দান খয়রাত করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা, এই মাসের একটি নেক আমলের সওয়াব অন্যান্য মাসের সত্তরটি নেক আমলের সমপরিমাণ হবে। এতদপ্রসঙ্গে: মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন; ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত কর, আর তোমাদের হস্তসমূহ ধ্বংসের দিকে সম্প্রসারিত করো না, আর অন্যের প্রতি সহৃদয়তা প্রদর্শন কর, নিশ্চত আল্লাহ সহৃদয়ক প্রদর্শনকারীকে ভালোবাসেন। সূরা বাকারাহ : আয়াত, ১৯৫।

এই আয়াতে কারীমার অর্থ ও ধর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে উপলব্ধি করা যায় যে, এখানে আল্লাহপাক তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এর একটি হলো- আল্লাহর পথে দান খয়রাত করা এবং দ্বিতীয়টি হলো- দান খয়রাত করার সমর্থ থাকা সত্তে¡ও বখিলী বা কৃপণতা প্রকাশ করা এবং তৃতীয়টি হলো- দুস্থ, অভাবগ্রস্ত, ব্যক্তিদের প্রতি উপকারীসুলভ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা, বা তাদের প্রতি সহৃদতায়তার দ্বার উন্মুক্ত রাখা। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে প্রথম বিষয়টির ব্যাপারে সুভানুধ্যায়ী পাঠক ও পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আজ আমরা প্রয়াস পাব। সকল অবস্থায় আল্লাহপাকই শ্রেষ্ঠ সহায়তাকারী।

বস্তুত: আল্লাহর রাস্তায় দান করার পরিধি খুবই বিশাল বিস্তৃত। মুমিন মুসলমানগণ ব্যক্তি জীবন হতে শুরু করে পরিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, দেশ ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র। যা কিছু খরচ করেন, তার সবই আল্লাহর রাস্তায় দানের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে জীবন ও জগতের আপদকালে নেক নিয়তে খরচ করার ফযিলত অনেক বেশি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক দিক-নির্দেশনা প্রদান করে ইরশাদ করেছেন; আর তোমরা যা কিছু সম্পদ হতে খরচ কর কিংবা যা কিছু মান্নত কর আল্লাহপাক তা জানেন। আর যালেমদের সাহায্যকারী কেউ নেই। আর তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা উত্তম, কিন্তু সংগোপনে গরিবদেরকে দান করা আরও উত্তম, আল্লাহ তোমাদের গোনাহ মাফ করবে, আল্লাহপাক তোমাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত। (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৭০-২৭১)। আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেছেন, ‘না তারা কম পরিমাণে খরচ করে, না বেশি পরিমাণে, না মরু-প্রান্তর অতিক্রম করে, কিন্তু তাদের জন্য সবই লেখা হবে, যাতে আল্লাহপাক তাদের উত্তম কর্মের পারিশ্রমিক দিতে পারেন, যা তারা সম্পাদন করেছে।’ (সূরা তাওরাহ : আয়াত ১৩১)। এই আয়াতের আলোকে বোঝা যায় যে, দানের বস্তু যে ধরনেরই হোক না কেন, অথবা দান প্রকাশ্যে ও গোপনে যেভাবেই হোক না কেন, অথবা দানের পরিমাণ বেশি ও কম যাই হোক না কেন, আল্লাহপাক তা জানেন এবং তিনি দানকারীদের গোনাহ ক্ষমা করে দেন ও তাদেরকে উত্তম বিনিময় প্রদান করেন।

এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, দানের বস্তুটি হালাল ও পবিত্র উপায়ে অর্জিত হতে হবে। অন্যথায় তা আল্লাহপাকের দরবারে দান বলে গৃহীত হবে না। আল কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে : হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন কর তা হতে পবিত্র বস্তু দান কর, আর তা হতে যা আমি তোমাদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করি, তোমরা নিকৃষ্ট কিছু ব্যয় করার সংকল্প করো না, কারণ তোমরা নিজেরাও তা চক্ষুবন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাইবে না, আর জেনে রাখ, অবশ্যও আল্লাহপাক সম্পদশালী ও প্রশংসনীয়। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৭)।

আর যে ব্যক্তি দানগ্রহীতাকে খোঁটা দেয়া, কথায় বা ব্যবহারে হেয় মনে করা, অথবা দেখমত লওয়া দ্বারা সে মনে কষ্ট পায়, এ সকল উদ্দেশ্যে দান করে তার দান বাতিল বলে পর্যবশিত হবে। আল কোরআনে আল্লাহপাক স্পষ্টতই ঘোষণা করেছেন : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের দানকে আত্ম-অহঙ্কার ও কষ্ট দেয়া এবং লোক প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে ব্যয়কারী মতো বিনষ্ট করো না, যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার অবস্থা ধূলা বিমলিন ঐ পাথরের মতো, যার উপর বারিপাত হলো, সুতরাং তাকে পরিচ্ছন্ন করে রেখে গেল। তারা নিজেদের রোজগার হতে কিছুই উপকৃত হতে পারে না, অবশ্যই আল্লাহপাক কাফেরদেরকে পথ দেখান না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৪)।

সূতরাং করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ ও জাতির এই সঙ্কটময় মুহূর্তে দুস্থ, গরিব, দুঃখী, অসহায় ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং পরিবারসমূহের প্রতি সামর্থ্য অনুসারে সকলেরই উচিত দানের হস্ত সম্প্রসারিত করা। আল্লাহপাক আমাদেরকে এর প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ