Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোজা তাকওয়া অর্জনের উপায়

মো. আমিনুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৫ এএম

আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ক্ষমার অবারিত সুযোগ নিয়ে আবারো আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে পবিত্র রমজান। রমজানের মূল সাধনা রোজার অন্যতম লক্ষ্য উদ্দেশ্যই হলো মহান আল্লাহতায়ালার তাকওয়া অর্জন করা। যেমনটি মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে নিজেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল বাকারাহ: ১৮৩)
কুরআনুল কারীমে তাকওয়া শব্দটি সরাসরি ৯ বার এসেছে। এছাড়াও ‘ইত্তাকু’ এবং ‘তাত্তাকুন’-সহ কতিপয় শব্দ দ্বারা মহান আল্লাহতায়ালা তাকওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনুল কারীমে অনেকবার উল্লেখ করেছেন। তাকওয়া শব্দটির অর্থ হলো খোদাভীতি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকওয়া হলো মহান আল্লাহতায়ালা যা আদেশ করেছেন তা পালন করা আর যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। তাফসীরে আহসানুল বায়ানের ভাষ্য মতে, ‘আল্লাহতায়ালা যে সমস্ত কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তা সম্পাদন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তার না করার নামই হলো তাকওয়া।’ আবার কেউ কেউ বলেন, তাকওয়া হচ্ছে যে সমস্ত কাজ পরকালের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা ।
মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি আদেশের মাঝেই কোনো না কোনো হিকমত অবশ্যই নিহিত আছে। আমরা কখনও কখনও তার কিয়দাংশ বুঝতে পারি আবার কখনও কখনও সে পর্যন্ত আমাদের বিবেক-বুদ্ধি পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। রমজানের রোজা ফরয হওয়ার হিকমত সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা নিজেই ইরশাদ করেছেন, ‘যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
সহীহ বুখারীর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা এবং সে অনুযায়ী আমল করা থেকে বিরত থাকল না, তার পানাহার থেকে বিরত থাকার মধ্যে মহান আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে এর কোনো মূল্য নেই। (বুখারী: ১৯০৩)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক (ধ্বংস হোক) যার কাছে আমার নাম উল্লেখিত হলো কিন্তু সে আমার ওপর দুরদ পাঠ করেনি। ধুলায় ধূসরিত হোক (ধ্বংস হোক) তার নাক যার নিকট রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই রমজান মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। আর ধুলায় ধূসরিত হোক তার নাকও যার নিকট তার মা-বাবা বৃদ্ধে উপনীত হলো কিন্তু সে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে জান্নাত অর্জন করেনি। (জামে আত তিরমিজি: ৩৪৪৫)
কাজেই রমজানে রোজাদারদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো তাকওয়া সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে অবহিত হওয়া। মহান আল্লাহতায়ালার নিকট অত্যধিক দামী জিনিসসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হলো তাকওয়া। আর পবিত্র রমজানের রোজার সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনের চমৎকার অনুশীলন হয়ে থাকে। একজন রোজাদার ব্যক্তি সারাদিন খুব সতর্কতার সহিত তার রোজার অনুশীলন করে থাকে, যাতে কোনো কারণে তার রোজা ভঙ্গ না হয়ে যায়। নির্জন গৃহে পিপাসায় কাতর হয়েও একজন ব্যক্তি একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার ভয়ে রমজানের রোজা রাখা কালীন সময়ে পানি পান করে না। এমনকি স্ত্রীর একান্ত সান্নিধ্য পেয়েও একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র রমজানের রোজার কারণে তার সঙ্গে একান্ত সংশ্রব এড়িয়ে চলে। আর এটা হয়ে থাকে শুধুমাত্র তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির কারণে।
আর এভাবেই একজন ব্যক্তি একটি মাস মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী তার প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় সকল বস্তুসমূহের ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার স্বভাব প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার তাকওয়া অর্জনের জন্য। রমজানের রোজা যেটি মহান আল্লাহতায়ালার নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন না করে তা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে প্রতিটি মানুষকে সাহায্য করে থাকে, যার মাধ্যমে আমরা তাকওয়াবান হতে পারি। আর এ রোজাই মনের চাহিদা পূরণে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে মানসিকভাবে আল্লাহতায়ালার ভীতি বা তাকওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রতিটি বছর মৌসুম শেষে রমজান আমাদের মাঝে ফিরে আসে স্বমহিমায়। আবার আমাদের ছেড়ে চলেও যায়। আমরা কি মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশনা অনুযায়ী তাকওয়া অর্জন করতে পারি?
এখনই সময় আমাদের অনুশোচনার। সময় এখনই আমাদের পূর্বের সকল গুনাহ থেকে রুজু করে তাওবার দ্বারা নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন তথা তাকওয়া অর্জন করা মানেই হলো জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়া। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও। যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন। যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান: ১৩৩)
লেখক: পোস্ট গ্রাজুয়েট রিসার্চার, নেজমুদ্দিন এরবাকান ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজা


আরও
আরও পড়ুন