Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজশাহীর অঞ্চলের গাছে গাছে আমের দুলনি

বাজার ব্যাবস্থাপনা নিয়ে শংকা

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৭ পিএম

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বেশী আম উৎপাদনকারী রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগান গুলোয়। চারিদিকে লকডাউন। আমচাষীরা যথাযথ যতœআত্তি করতে পারছেনা আমের। এবার অনেকটা অনাদর আর অগোছালো অবস্থায় গাছে গাছে বেড়ে উঠছে আম। আর মাস খানেকের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে পাকা আমের মওসুম।
চলতি মওসুমে এবারো গাছে গাছে মুকুল এসেছিল। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে তা ফুটতে বিঘœ ঘটে। বিশেষ করে চাপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বাঘায়। মুকুল দেখে ভাল ফলনের আশা করলে পরে অনেকটা কমে যায়। তারপর গাছে গাছে যা আম আছে তা মন্দ নয়। রাজশাহী অঞ্চলে গাছে গাছে আমের দুলুনি বলে দিচ্ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ফলন মন্দ হবে না।
এসব আমের বাজারজাত করন নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে আম চাষীদের। করোনার কারনে এখন পর্যন্ত পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসেনি। অথচ অন্যসময় আমের বাগানের হাত বদল হয় দু’তিন দফা। মূলত ঢাকা চট্রগ্রাম হতে আসেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে শুরু হয়ে যায় আড়তগুলোর প্রস্তুতি। এবার তেমনটি দেখা যাচ্ছেনা। চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভীড় জমায়। লেনদেন প্রতিদিন চার/পাঁচ কোটি টাকার। ব্যাস্ত থাকে আমপাড়া শ্রমিক থেকে প্যাকেজিং আর পরিবহন কর্মীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ন। এটি করতে হলে আম বাজার ব্যবস্থাপনায় এখনি পরিকল্পনা নিতে হবে। রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার ও নওগার নিয়ামতপুর বাজার আমের বাজার। এসব বাজারেও আসে হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতা। সব মিলিয়ে আম মওসুম ঘিরে মাস খানিকের জন্য কয়েক লাখ মানুষ জড়িয়ে পড়ে। বানিজ্য হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। রাজশাহী অঞ্চলে আম বাগান রয়েছে ষাট হাজার হেক্টরের বেশী। আর আম উৎপাদন হয় সাত আট লাখ মে:টন। এখানকার আম দেশীয় বাজার ছাড়া বিদেশেও যায়। এ অঞ্চলের ধানের পাশপাশি আম অর্থনীতিও ভাল ভূমিকা রাখে।
বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দীনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন এখনি আম নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বড় বড় বাজার গুলোকে দু’তিন ভাগে ভাগ করে বসানো। পরিবহনের জন্য ট্রাক ও কার্গো প্রয়োজনে রেলের কার্গো ব্যাবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ব্যবসায়ীদের আবাসন ও খাবার হোটেল গুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে খুলে দিতে হবে। উৎসাহিত করতে হবে আম ব্যবসায়ীদের। সময় খুব বেশী নেই। মে মাসের মধ্যেভাগ থেকে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ দিয়ে আমের যাত্রা শুরু হবে। এরপর পাহাড়ী অঞ্চলের আম। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোপালভোগ দিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের আমের যাত্রা শুরু হবে। অতএব সময় খুব একটা বেশী নেই।
করোনা মহামারীর কারনে বিশ্ব টাল মাটাল। বিশ্ব বাজার ধরতে আমাদের সরকারীভাবে আম রফতানীর উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের রাশিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশে এখানকার আম যায়। ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পতুর্গাল, ফ্রান্সসহ এসব দেশে বাংলাদেশের আমের চাহিদা রয়েছে। আগেও গেছে। এবারও নিশ্চিত।
দেশীয় যেসব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আম রফতানী করে তারাও এবার চুক্তি করতে আসেনি। ফলে আম রফতানী নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আম চাষীরা। চাপাইনবাবগঞ্জে ব্যাগিং আমের চাহিদা বিশ্ব বাজারে রয়েছে। এবারো কয়েক কোটি আম ব্যাগ পড়েছে। এসব আম বিশ্ববাজারে পাঠানোর এখনি সময়।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, আমের বাজার নিয়ে আমরাও এবার দুশ্চিন্তায় আছি। রাজশাহী থেকেই মোটামুটি সারাদেশেই আম যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এবার কী হবে তা ভাবনার বিষয়। তবে পুঠিয়ার বানেশ্বরে আমের মোকামে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আমের বাজার বসানোর পরামর্শ দিয়েছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মো. শামসুল হক জানান, গতবছর ইউরোপের বাজারে গেছে গিয়েছিল রাজশাহীর আম। এবার এখনো অনিশ্চিত। প্রশাসনের সঙ্গে বসে আম বাজার ব্যাবস্থাপনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নওগার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার নওগাতেও ভাল আম হয়েছে। আম বাগানের বিস্তৃতিও বাড়ছে। কিন্তু শংকা বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ