Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনাকালে জাতীয় বাজেট

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০৫ এএম

জুন মাসের ১১ তারিখে সংসদে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনে কাজ করছে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। করোনাকালের সাধারণ ছুটি, ঘরে থাকার বৈশ্বিক নির্দেশনা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার ধারণা মাথায় রেখেই তারা বাজেট প্রণয়নে কাজ করছেন বলে জানা যায়। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে আছে গত চারমাস ধরে। এ অবস্থা আর কতদিন অব্যাহত থাকবে তা কেউ বলতে পারছে না। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। করোনার মাহামারীতে আমাদের সামনে জীবন ও সমাজবাস্তবতায় নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে লাখ লাখ পরিবারের খাদ্য সহায়তাসহ করোনাকালীন অর্থসহায়তার জন্য লক্ষকোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মানে হচ্ছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির বরাদ্দ কাটছাঁট করে জরুরি প্রয়োজন বহির্ভূত বরাদ্দ করোনা বাজেটে যুক্ত করার ঘোষণাও এসেছে। এহেন বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে করোনাকালের বিশেষ প্রেক্ষাপট ও পরিবর্তিত বাস্তবতা জাতীয় বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তিত বাস্তবতায় বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ৬০ ভাগই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। শতকরা ৫ ভাগের বেশি ঘাটতি নিয়ে বিশালাকৃতির বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পসহ জাতীয় বাজেট প্রণীত হলেও উন্নয়ন বাজেটের বড় অংশই যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং বছরান্তে বাজেট কাটছাঁট করে সংশোধিত আকারে প্রকাশের ট্রেন্ড চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এবারের বিশেষ প্রেক্ষাপটে বাজেট প্রণয়নে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে মত দিচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। করোনাকেন্দ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক সঙ্কটকে মাথায় রেখে সংক্ষিপ্ত বাজেটের পক্ষে মত দিচ্ছেন কেউ কেউ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহসান এইচ মনসুর ৬ মাসের জন্য একটি করোনা বাজেটের পক্ষে মত দিয়েছেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন। জাতীয় বাজেটের আগে দেশের অর্থনীতিবিদ, নাগরিক সমাজসহ যে সব স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়, করোনা দুর্যোগের কারণে এবার তা আগের মতো না হলেও বিকল্প উপায়ে সকলের পরামর্শে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা এবার অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অনেকের কাছ থেকে লিখিত মতামত জানতে চেয়েছে বলে জানা গেছে। বাজেট ঘোষণার আগে হাতে আর মাত্র এক মাস সময় আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেলিকনফারেন্সসহ বিকল্প উদ্যোগগুলোও কাজে লাগাতে হবে।
করোনা মহামারী পুরোবিশ্বকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সারাবিশ্ব একটি সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করছে। এ মন্দা গত শতকের তিরিশের দশকের গ্রেট ডিপ্রেশনের চেয়েও বেশি সঙ্কটপূর্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যেহেতু এটি একটি বৈশ্বিক সঙ্কট, প্রতিটিই দেশই যার যার মতো করে এ বিপদ উত্তরণের পথ খুঁজবে। অর্থনৈতিক অবস্থান ও সমাজ-বাস্তবতার নিরীখে সমস্যা ও সঙ্কটের ধরনও ভিন্ন হতে বাধ্য। আমাদেরকে আমাদের নিজস্ব বাস্তবতার আলোকেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের সক্ষমতার কথা বিবেচনা না করে বিশাল আকৃতির বাজেট প্রণয়নের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশাল আকারের ঘাটতি রেখে বড় বাজেট উপস্থাপন অতঃপর তা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা থেকে এখন বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করতে হবে। দেশে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস নতুন নয়। গার্মেন্ট পণ্য রফতানি, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মন্দার প্রবণতার সাথে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারীর প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগ। এই মুহূর্তে অনানুষ্ঠানিক খাত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত প্রায় ৫ কোটি মানুষ চরম অর্থ ও খাদ্য সঙ্কটে নিপতিত। করোনা সঙ্কট কেটে গেলেও কয়েক মাসের স্থবিরতা ও অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা খুব সহজ হবে না। কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের পাশাপাশি আগামীতে একটি বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য পরিহার করে খাদ্য, কৃষি ও স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।



 

Show all comments
  • Nyiamat Ullah ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৫:৫২ পিএম says : 0
    খেটে খাওয়া অসহয় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Nyiamat Ullah ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৫:৫৩ পিএম says : 0
    খেটে খাওয়া অসহয় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Nyiamat Ullah ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৫:৫৩ পিএম says : 0
    খেটে খাওয়া অসহয় মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয়-বাজেট

আরও পড়ুন