Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন

ইসলামফোবিয়ায় মনোযোগ দিন : ওআইসিকে কুয়েত কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ মার্কিন কমিশনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২০, ১২:০৯ এএম

ধর্মীয় স্বাধীনতা বিপন্ন বলে ভারতকে কার্যত কালো তালিকাভুক্ত করলো ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বা ইউএসসিআইআরএফ। ভারতকে তারা ‘কান্ট্রিজ অফ পারটিকুলার কনসার্ন’ বা যেসব দেশের পরিস্থিতি চিন্তাজনক, সেই তালিকায় রেখেছে। আর মার্কিন প্রশাসনের কাছে তাদের সুপারিশ, তারা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। ব্যবস্থা নেয়া মানে, ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং যাদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার বিপদ দেখা দিয়েছে, তাদের মার্কিন ভিসা না দেয়া। সংগঠনের তালিকায় ভারতসহ মোট ১৪টি দেশের নাম আছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ইরান, নাইজিরিয়া, সউদী আরব, রাশিয়া, সিরিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশ। ২০০৪ সালের পর থেকে ভারতের নাম কখনওই তালিকায় ছিলো না।

ইউএসসিআইআরএফ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস করা হয়েছে। তার ওপর সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সারা দেশে এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি করা হবে। আসামের অভিজ্ঞতা বলছে, দেশজুড়ে এনআরসি হলে প্রচুর মানুষ নাগরিকত্ব হারাবেন। অ-মুসলিমদের জন্য সিএএ-র সুরক্ষা আছে। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দেশজুড়ে এনআরসি হলে শুধুমাত্র মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন’। নরেন্দ্র মোদি সরকার অবশ্য এই রিপোর্টকে খারিজ করে বলেছে, ‘রিপোর্ট পুরোপুরি একপেশে। ভারতের বিরুদ্ধে এই সংগঠনের এই ধরনের মত নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার মিথ্যা বর্ণনা নতুন স্তরে চলে গেছে। এই সংগঠনের একেবারে নির্দিষ্ট লোকেদের জন্য উদ্বেগ রয়েছে। আমরাও এই রিপোর্টকে সেভাবে নেব’।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভারতে ২০১৯-এ ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা ভয়ঙ্করভাবে নিচের দিকে নেমেছে। মে মাসে বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে এমন আইন পাস করেছে, যার ফলে ভারতে ধর্মীয়স্বাধীনতার অবস্থা খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে মুসলিমরা তার ফল ভোগ করছেন’।

প্রশ্ন হলো, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর এই রিপোর্টের কোনও প্রভাব পড়বে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির সম্পর্ক খুবই ভালো। তাছাড়া ভোটে জেতার জন্য তার অ্যামেরিকান ইন্ডিয়ানদের সমর্থন দরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদি সেই সমর্থন তাকে পাইয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া ভারতের বিশাল বাজার অ্যামেরিকার কোম্পানিগুলি কখনওই হারাতে চায় না। এর আগেও ট্রাম্প সিএএ, এনআরসি নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গেছেন। এই রিপোর্টেরও কোনও প্রভাব তার ওপর পড়ার সম্ভাবনা কম।

মোদিকে টুইটারে আনফলো করে দিল হোয়াইট হাউস!
গত তিন সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রীর অফিস-কে ট্যুইটারে ফলো করেছিল হোয়াইট হাউস। হঠাৎ সবকটি অ্যাকাউন্ট আনফলো করে দিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন।
গত ১০ এপ্রিল নাগাদ হোয়াইট হাউস তাদের অফিসিয়াল ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রধানমন্ত্রী অফিস ও দেশের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দকে ফলো করা শুরু করে। মোদি ও প্রেসিডেন্ট কোবিন্দ দু’জনেই একমাত্র রাষ্ট্রনেতা, যাদের হোয়াইট হাউস ফলো করেছিল ট্যুইটারে।

শুধু মোদি বা প্রেসিডেন্টই নন, পিএমও, ওয়াশিংটন ডিসি-তে ভারতীয় দূতাবাস, সবই ফলো করেছিল হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউস ফলো করছে, এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ১৯। এখন তা কমে ১৩।

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে তখন একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রীতিমতো ভারতকে হুমকি দিয়েছিলেন, ভারত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন না পাঠালে পাল্টা জবাব দেয়া হবে। পরে ভারত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উপর রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।
ভারতে ইসলামফোবিয়ায় মনোযোগ দিন : ওআইসিকে কুয়েত

কুয়েত ভারতে ক্রমবর্ধমান মুসলিমবিরোধী মনোভাব মোকাবিলার জন্য ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) কাছে আবেদন করেছে। গত সোমবার জারি করা এক বিবৃতিতে কুয়েত মন্ত্রি পরিষদের মহাসচিবালয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দক্ষিণ-ডান-বিজেপির অধীনে শাসিত হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে ইসলামফোবিয়া সম্পর্কে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে এবং ওআইসিকে ‘প্রয়োজনীয় এবং জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের’ আহ্বান জানিয়েছে।

গত রোববার কুয়েতের আওকাফ ও ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল-শোরেকা যে ভারতে মুসলমানদের প্রতি দুর্ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে ট্যুইট করেছিলেন, তাতে তাদের মতো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

তিনি বলেছিলেন, ‘যারা ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন করে তারা কি ভেবেছে যে, বিশ্বের মুসলমানরা এই অপরাধ সম্পর্কে নীরব থাকবে এবং রাজনৈতিক, আইনী ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে না’?

এই মন্তব্যগুলি আমিরতের প্রিন্সেস হেন্দ আল-কাসিমির অনুরূপ যিনি গত সপ্তাহে সতর্ক করেছিলেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় করা ইসলামফোবিক মন্তব্য সহ্য করা হবে না।

তবে মিডল ইস্ট আই’র করা কুয়েতের আপিলের বিষয়ে গত সোমবারের প্রতিবেদন ভারতের ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনের বিরোধী বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এটি গতকাল দাবি করেছে যে, অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ ওমান, সউদী ও কাতারের সাথে কুয়েত সরকার বিদেশের মদদপুষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া এবং পোস্টগুলির মাধ্যমে ‘ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে’।

দৈনিকটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবকেও উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমরা কুয়েতে বেসরকারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের কিছু নির্দিষ্ট উল্লেখ দেখেছি। কুয়েত সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে তারা ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না’।

ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী এবং মুসলিমবিরোধী জনতার হামলার মুখোমুখি হয়েছিল মুসলিমরা। দাঙ্গায় নিহতদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান। মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জ্বালিয়ে দেয়া ও লুটপাট করা এবং মুসলমানদের কিছু বাড়িঘরে আক্রমণও চালানো হয়েছিল।

দি গার্ডিয়ান-এর মতে, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) পাস, বিজেপি এবং এর নেতাদের ব্যবহৃত বিপজ্জনক এবং উত্তেজক বক্তৃতা এবং ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের ফলে এ দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের মুসলমানরা আরো ষড়যন্ত্রমূলক তত্তে¡র শিকার যে, করোনাভাইরাস মহামারীটির কারণ তারাই। সূত্র : পিটিআই, এএনআই, মিডল ইস্ট মনিটর।



 

Show all comments
  • Sprrsho Khan ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    এটা ভারতের আসল মুখোশ, বাংলাদেশের হিন্দুরা স্বীকার করেও, ওরা বলে ভারতের মুসলমানদের নাকি ভারতে রাজার হালে রাখে,বাংলাদেশের হিন্দুদের নাকি মুসলমানেরা অত্যাচার করে, গালি দেয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে,কারন প্রধানমন্ত্রী মুসলমান তাই
    Total Reply(0) Reply
  • Robert Paulson ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    মিয়ানমার নাই ? আশ্চর্য এবং রহস্যজনক।
    Total Reply(0) Reply
  • Lipika Biswas ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    হ্যাঁ ক্ষুন্ন হচ্ছে, কিন্তু পাকিস্তান আর বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় আছে, সবাই ভালো আছে ওখানে,
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৮ এএম says : 0
    ভারত একটা উগ্রবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র, মুসলিম বিশ্বের এখনই দেশটির বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৯ এএম says : 0
    উগ্রবাদী বিজেপি যতদিন ক্ষমতায় আছে ততদিন ভারতের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে ওআইসিকে।
    Total Reply(0) Reply
  • হে আল্লাহ তুমি মুসলমানদের এক ও নেক হওয়ার তাওফিক দান করে।
    Total Reply(0) Reply
  • হে আল্লাহ তুমি মুসলমানদের এক ও নেক হওয়ার তাওফিক দান করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Azim ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    ভারতের বি জি পির সাথে, সব মুছলিম দেশের সম্পর্ক ছিন্ন করা ওচিদ আমি মনে করি
    Total Reply(0) Reply
  • habib ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ২:২০ পিএম says : 0
    But why muslim country did not take action ?
    Total Reply(0) Reply
  • Altaf ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৩:৩১ পিএম says : 0
    Modi,rss এর বিরোদ্ধে মুসলিম দেশ,ওআইসি, বিশ্বনেতাদের বয়কট করা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ