Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়

আব্দুল কাদের শাহ নেওয়াজ | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২০, ১২:০৯ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

তাই মানুষেরা যদি প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে মহামারী বা এজাতীয় শাস্তি উঠিয়ে নিবেন। কারণ, কার্য সমাধা হলে ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে শাস্তি বহাল না থাকার বিষয়টিই যুক্তিযুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তারা ক্ষমাপ্রার্থনারত থাকলে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন না।”(সূরা আনফাল: ৩৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, “আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতপর তাঁর দিকে ফিরে আসো। তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দিবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন।” (সূরা হুদ: ০৩)। শুধু তাই নয় বরং ক্ষমাপ্রার্থনাকারী ও তাওবাহকারীদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।
সর্তকতা অবলম্বন করা:
করোনার প্রাদুর্ভাবে অতি আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। কারণ, বেশিরভাগ মহামারীই সংক্রামক। করোনা ভাইরাসও অনুরূপ। এক্ষেত্রে হাদীসের নিদের্শনা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সংক্রমণের মুখে পড়ো না --- আর কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকো, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো। (সহীহ বুখারী: ৫৭০৭)। হাদীসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সংক্রামক ব্যাধি থেকে এমনভাবে সতর্ক থাকা যেভাবে বাঘের আক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক থাকা হয়। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আকিদা-বিশ্বাস ঠিক রাখতে হবে যে, আল্লাহর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো রোগই সংক্রমিত হতে পারে না। নিজস্ব ক্ষমতায় কোনো রোগ কারো দেহে সংক্রমণ করে না। কোনো রোগী কোনো নিরোগ ব্যক্তিকে রোগী বানাতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোনো মুসীবতই আপতিত হয় না।” (সূরা তাগাবুন: ১১)। তাই সতর্কতার জন্য স্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শতা থেকে দূরে থাকতে হবে। তবে যথাযথ সতর্কতার সহিত তার সেবা-যত্ম করতে হবে। কিছুতেই তাকে অবহেলা ও ঘৃণা করা যাবে না। আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে সে মুসলিম হলে অবশ্যই তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্য হাদীস থেকে প্রতিভাত হয়, মহামারীর সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চল থেকে পলায়ন করা অথবা অন্য অঞ্চল থেকে আক্রান্ত অঞ্চলে আগমন করা উভয়টিই নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহামারী হচ্ছে শাস্তির প্রতীক। আল্লাহ তাআলা তা দ্বারা তাঁর বান্দাদের কতিপয় ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন। তাই কোনো অঞ্চলে মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সেখান থেকে (পলায়নের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে যাবে না। অপরদিকে কোনো এলাকায় এর আক্রান্তের খবর পেলে তোমরা সেখানে যাবে না। (সহীহ মুসলিম: ৫৬৬৬)। এক্ষেত্রেও আকিদা-বিশ্বাস ঠিক রাখতে হবে যে, রোগ ছোঁয়াচে হলেই যে প্রত্যেককেই আক্রমণ করবে- তা জরুরী নয়। এসব সতর্কতা অবলম্বনের জন্য। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোনো প্রকৃত মু’মিন যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ অঞ্চল থেকে পলায়ন না করে বরং ধৈর্য ধারণ করে এবং আকিদা-বিশ্বাস ঠিক রাখে যে, আল্লাহ তাআলা তার তাকদীরে যা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তা ছাড়া আর কোনো বিপদ তার উপর আসবে না। আর এমতাবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে শাহাদাতের মর্যাদা পাবে এবং সে শহীদ হিসাবে গণ্য হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ। আর যে ব্যক্তি মহামারী ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সেও শহীদ। (সহীহ মুসলিম: ৪৮৩৫)
মাসনুন দোয়া পাঠ করা:
করোনা প্রতিরোধের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। তবে বিশুদ্ধ হাদীস থেকে প্রতিভাত হয় যে, বিপদাপদ, মুসীবত ও মহামারী থেকে বাঁচার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দোয়া পাঠ করতেন। এই পরিস্থিতিতে সেসব মাসনুন দোয়াগুলো অধিকহারে পাঠ করাই আমাদের করণীয়। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, আনাস (রা.) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নােক্ত দোয়াটি পড়তেন। তা হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊ-যুবিকা মিনাল বারছি ওয়াল জুনূনি ওয়াল জুযা-মি ওয়া মিন ছায়্যিইল আসক্বাম’। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত (মহামারী) দুরারোগ্য ব্যাধি হতে। (আবু দাউদ: ১৫৫৪)। সুনানে তিরমিযী ও বুলুগুল মারামে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়াটি পাঠ করতেন ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊ-যুবিকা মিন মুনকারতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি’। (তিরমিযী: ৩৫৯১)। তিরমিযীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। দোয়াটি হলো, ‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়ার্দ্বরু মা’আস্মিহী শাইয়ূন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়া হুয়াস্ সামী-উল আ’লীম। (তিরমিযী: ৩৩৮৮) অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিন বার করে পাঠ করবে, এটাই তার সবকিছুর নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ঠ হবে। (ভাবার্থ, আবু দাউদ: ৫০৮২)
রাষ্ট্রীয় নিদের্শনা মেনে চলা:
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় যে সিদ্ধান্ত ও দিকনিদের্শনা দিবে তা মেনে চলা। এক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন ও হোম কোয়ারেন্টাইন যথাযথভাবে রক্ষা করে চলা। সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, বিপণিবিতান ও মার্কেট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রাখা। সর্বপ্রকার সভাবেশ, গণজামায়েত ও গণপরিবহন পরিহার করা। আক্রান্ত ব্যক্তি, সন্দেহজনিত ব্যক্তি ও অসুস্থ ব্যক্তি মসজিদে গমন ও সালাতের জামাত (সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত) পরিত্যাগ করা ও জামাত সীমিতকরণ করা। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, সতর্কতা ও সচেতনতা অবলম্বন করে চলা, সাবান-পানি অথবা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ঘনঘন হাত-মুখ ধোয়া, অপরিস্কার হাত দিয়ে নাক-মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, হাঁচি অথবা কাশি দেয়ার সময় টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করা সহ চিকিৎসকদের সকল পরামর্শ মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। এক্ষেত্রে নিজে সতর্ক থাকার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও অন্যদেরও সতর্ক করা আমাদের কর্তব্য।
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা:
সর্বোপরি কথা হচ্ছে, প্রাণঘাতী এই মহামারী থেকে বাঁচার জন্য নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবাহ ও ইস্তিগফার করে সর্বদা আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। তিনিই আমাদেরকে দুনিয়াবী এই শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন। তিনিই একমাত্র রক্ষাকারী, তিনি ব্যতীত আর কোনো রক্ষাকারী নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আল্লাহ যখন কোনো জাতির অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তা প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো থাকে না। আর তখন তিনি ব্যতীত কোনো রক্ষাকারীও থাকে না।” (সূরা রা’দ: ১১)। অন্যত্র তিনি বলেন, “বলুন! আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদেরকে কোনো শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদেরকে বঞ্চিত করতে পারে? তখন তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অভিভাবক বা সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না।” (সূরা আহযাব: ১৭)। পরিশেষে দোয়া করি, হে আল্লাহ আপনি ব্যতীত আমাদের কোনো সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী নেই। আপনি আমাদেরকে এবং সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে এই মহামারীর কবল থেকে রক্ষা করুন। আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ