Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রেমডেসিভির উৎপাদনে এগিয়ে বেক্সিমকো

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০২০, ৬:০২ পিএম

করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদন শুরু করছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। ইতোমধ্যে কাঁচামাল আনা হয়েছে। চলতি মাসেই উৎপাদনে যাচ্ছে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৯ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতার ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’র পরিচালক এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। পরে ১ মে সে দেশের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এফডিএ রেমডেসিভিরকে ‘জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন’ দেয়।

এরপর বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর জানায়, দেশের ৮টি ওষুধ কোম্পানিকে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর জন্য রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ওই ৮ কোম্পানির একটি হলো বেক্সিমকো। এখন পর্যন্ত এই ওষুধ উৎপাদনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে এগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি। বেক্সিমকো’র চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র দেশে ব্যবহারের জন্য এই মাসেই ওষুধটির উৎপাদন শুরু হবে।

মানুষের শিরায় প্রবেশ করিয়ে এই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি ডোজ ওষুধের দাম পড়বে ৫-৬ হাজার টাকা। আর গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মোট ৫ থেকে ১১ ডোজ প্রয়োজন হতে পারে। তবে রাব্বুর রেজা বলেছেন, রোগীর ঠিক কতটুকু প্রয়োজন হতে পারে, তা গবেষণা সম্পন্ন হলেই বলা যাবে। আমরা আশা করছি, এই ওষুধের দামে কিছু ভর্তুকি দেবে বাংলাদেশ সরকার।

রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করবে রোগীর কতটুকু ওষুধ প্রয়োজন হবে। বেক্সিমকো যেই মূল্য নির্ধারন করার পরিকল্পনা করছে, সেই অনুযায়ী একটি পূর্ণ কোর্সের জন্য একজন রোগীর খরচ হতে পারে ২৫ থেকে ৬৬ হাজার টাকা। রেমডেসিভির দাম কেমন হতে পারে, তার প্রথম আভাস পাওয়া যায় বেক্সিমকোর এই মূল্য থেকে। মূল উৎপাদনকারী গিলিয়াড তাদের ১৫ লাখ ডোজের প্রথম ব্যাচ যুক্তরাষ্ট্রের রোগীদের জন্য দান করবে। তবে এরপর এই ওষুধের দাম কেমন পড়বে, তা এখনও জানায়নি তারা।

ইন্সটিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক রিভিউ (আইসিইআর) কোনো ওষুধের কার্যকারিতার ভিত্তিতে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারন করে। সংস্থাটি বলছে, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় রেমদেসিভির ভালো কার্যকারিতা দেখালে, ১০ দিনের কোর্সের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫০০ ডলার বা ৩ লাখ ৮২ হাজার ডলার।

তবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে দাম এতটা হবে না। এই ওষুধ উৎপাদনের প্যাটেন্ট রয়েছে গিলিয়াডের। ফলে নিয়মানুযায়ী, তাদেরই এই ওষুধ প্রস্তুতের একচেটিয়া সত্ত্ব রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সহ জাতিসংঘ স্বীকৃত স্বল্পোন্নত দেশগুলো এসব প্যাটেন্ট বা সত্ত্ব অগ্রাহ্য করতে পারবে। ফলে এসব দেশ সহনীয় মূল্যে ওষুধ উৎপাদন করতে পারে।

রাব্বুর রেজা জানান, বাংলাদেশ এই ওষুধ অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও এই ওষুধ রপ্তানি করতে পারবে। এছাড়া ইউরোপের কিছু দেশ ইতিমধ্যেই এই ওষুধ আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করে বেক্সিমকোকে চিঠি লিখেছে। তবে তিনি ওই ইউরোপিয় দেশগুলোর নাম জানাতে রাজি হননি। তার ভাষ্য, আমরা জরুরী পরিস্থিতিতে এই ওষুধ রপ্তানির জন্য সরকারের অনুমোদন চাইতে পারি। তবে আমাদের আগে অবশ্যই আমাদের নিজ জনগণের জন্য সরবরাহ করতে হবে। এটি আমাদের জন্য এক নম্বর অগ্রাধিকার।

রেমডেসিভির প্রথমে ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছিল। তবে তখন খুব একটা কাজ করেনি এই ওষুধ। তবে এই ওষুধ নতুন এই করোনাভাইরাস সহ কিছু ভাইরাসের পুনঃউৎপাদনের প্রক্রিয়াকে অকার্যকর করে দেয়। ফলে রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে ব্যর্থ হয় ভাইরাস।

রাব্বুর রেজা জানান, বেক্সিমকো মে মাসের মাঝামাঝি এই ওষুধ বাজারজাতকরণের অনুমতি পাবে বলে আশা করছে। এরপর থেকে সরকারের মাধ্যমে বিতরণের জন্য এই ওষুধ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করবে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যতটুকু চায় তার ওপর নির্ভর করে আমরা ওষুধ উৎপাদন করবো। একই সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালগুলোর চাহিদা নিরূপনে কাজ চলছে। একটি চীনা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করছে। চুক্তি অনুযায়ী যেই উপকরণ আসবে, তা দিয়ে ১ লাখ ইউনিট উৎপাদন করা সম্ভব।

এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমসিডিসিভির উৎপাদনের অনুমতি পেয়ে ইতোমধ্যে কাঁচামালও এনেছে বেক্সিমকো। আপাতত, এই ওষুধ রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হবে না। দেশের চাহিদা পূরণ করার পর রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।



 

Show all comments
  • শওকত আকবর ৬ মে, ২০২০, ৯:৪৯ পিএম says : 0
    পত্রিকায় দেখলাম একজন কোরনাক্রান্ত রোগী ও ডাক্তারের কথিত মতে জানা যায় যে প্যারাসিটামল এন্টিহিষ্টামিন এ্যাজিথ্রমাইসিন রোগিকে দিয়ে ই ১১দিনে এক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন। রেমডেসিভির খুবই ব্যায়বহুল।এতটাকা গরিব রোগী পাবে কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন ৭ মে, ২০২০, ৩:৫৭ এএম says : 0
    ভাই যে রেইট বলছে যদি রুগি শুনে সাথে সাথে 80% ভালো হয়ে যাবে কারন আমরা বাংগালি ঐ সময়ে শরীরে তাপমাত্রা 100 ডিগ্রি হবে করোনা ভয়ে মারা যাবে ওষুধের দরকার হবেনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ