Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শীর্ষ প্রশিক্ষকসহ ৪ জেএমবি আটক বিপুল বিস্ফোরক-অস্ত্র উদ্ধার

টঙ্গীতে নতুন আস্তানায় র‌্যাবের হানা

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর জেলা ও টঙ্গী সংবাদদাতা : টঙ্গীতে নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর আগেই র‌্যাবের জালে আটকা পড়েছে জামাতুল মোজাহিদিন (জেএমবি) সদস্যরা। গত বুধবার দিবাগত ভোর রাতে জেএমবির টঙ্গীর নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হানা দেয় র‌্যাব-১ সদস্যরা। এসময় জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান মাহমদুদুল হাসান তানভীরসহ ৪ জেএমবি সদস্যকে আটক করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ১টি পিস্তল, ১৩৩ রাউন্ড গুলি, ৩টি নান চাকু, ৩টি ছুরি, ২টি কুড়াল, ১টি চাপাতি, ৭টি ককটেল, ১৩টি ইলেক্ট্রিক ডেটোনেটর, ৭টি পাওয়ার জেল, ২ কেজি পটাশিয়াম, ০.৫০০ কেজি সোডা, ১টি ডামি টার্গেট, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম এবং জিহাদী বই।
আটকৃতরা হলÑ জেএমবির শীর্ষ প্রশিক্ষক ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান মাহমদুদুল হাসান তানভীর (২৭)। তানভীরের পিতার নাম বাবুর আলী। তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার রশিদপুর গ্রামে। তানভীরের সহযোগী আশিকুল আকবর ওরফে আবেশ (২২)। আবেশের পিতার নাম খলিলুর রহমান। তাদের বাড়ি  রংপুর জেলা সদরের কোবারু বুড়িরহাট গ্রামে। নাজমুস সাকিব ওরফে তাহমিদ (১৯)। তার পিতার নাম আকরাম হোসেন। তাদের বাড়ি যশোর জেলার কালীগঞ্জ থানার সাইটবাড়িয়া গ্রামে। এবং শরিয়ত উল্লাহ শুভ ওরফে সানি (১৯)। তার পিতার নাম শামসুল ঘশ। তাদের বাড়ি নড়াইল জেলা সদরের শেখহাটি গ্রামে। তবে সাকিবকে গত ১৪ জুলাই ভোরে সাদা পোশাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
র‌্যাবের মিডিয়া ওইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, র‌্যাব-১ গত ১৪ জুলাই জেএমবির দুই সদস্য কামরুজ্জামান ওরফে সাগর (২৪) ও রাশেদ গাজী ওরফে রাশেদকে (২২) গ্রেফতার করে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা যশোর শহরের পাঠশালা কোচিং সেন্টারে অবস্থান করতো এবং সেখান থেকে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই তথ্যের পর র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ঐ মেসের উপর নজরদারী শুরু করে। গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার পর যশোরের ঐ মেস থেকে বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে চলে যায়। তাদেরকে তখন নজরদারীর আওতায় আনা হয় এবং রাজধানীর পাশে টঙ্গীর অভিজাত আবাসিক এলাকা আউচপাড়ায় তাদের নতুন আস্তানার অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।
র‌্যাব আরো জানায়, গুলশান হামলার পর রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ও সাঁড়াশি অভিযানের কারণে এবং ভোটার আইডি কার্ডসহ বাড়ি ভাড়ার নিয়ম চালু হওয়ায় আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা রাজধানীতে নাশকতার জন্য একত্রিত হতে না পেরে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান নবম শ্রেণীতে থাকতেই জেএমববি’র ‘বড় ভাই’ এর মাধ্যমে জেএমবিতে দীক্ষা নেয়। সে দীর্ঘদিন জেএমবি’র বড় ভাইদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। সে এইচএসসি পাস করার পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। যশোরে ভর্তি হওয়ার সুবাদে জেএমবির বড় ভাইয়েরা তাকে দক্ষিণ অঞ্চল দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়। সংগঠনের প্রতি আনুগত্য ও কাজের দক্ষতা তাকে বড় ভাইদের খুব কাছাকাছি নিয়ে যায়। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সংগঠনের সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, প্রত্যেক ব্যাচে ৮/১০ জন করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সবগুলো ট্রেনিং সেন্টারের সমন্বয়ক ছিল এই মাহমুদুল হাসান। সেন্টার থেকে ট্রেনিং প্রাপ্তদেরকে বিভিন্ন গ্রেডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হতো। এই গ্রুপ সিলেকশনের অন্যতম দায়িত্বপালন করতেন হাসান। জেএমবি’র মাধ্যমে সংঘটিত সাম্প্রতিকালে প্রায় সবকটি হত্যাকা-ের নীলনকশা রচিত হয় এই হাসান ও অন্যান্য বড় ভাইদের তত্ত্বাবধানে।
র‌্যাব আরো জানায়, মাহমুদ হাসানের মাধ্যমে জেএমবিতে আসে শরিয়ত উল্লাহ শুভ এবং নাজমুস সাকিব। শরিয়ত উল্লাহ যশোর সরকারি এমএম কলেজের রসায়ন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র। সে কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের জেএমবি আমীর তাকে খুব পছন্দ করত এবং তাকে দিয়ে বিভিন্ন অ্যাপস এর মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখত। নাজমুস সাকিব ২০১৪ সালে সাধারণ বিভাগে এ+ গ্রেডে আলিম পাস করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঝিনাইদহ সাকসেস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। তার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের জেএমবি আমীরের সাথে ভাল সর্ম্পক ছিল। এই সাকিব ঢাকায় হাসানের তত্ত্বাবধানে সামরিক এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ নেয়। আশিকুল আকবর রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজের ৩য় বর্ষের ছাত্র। তার উপর দায়িত্ব ছিল রংপুর অঞ্চলের জেএমবির দাওয়াতি কাজকে সংগঠিত করা। সে মেডিকেলের ছাত্র হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করে সংগঠনের ভাইদের হাতে-কলমে শিক্ষা দিতো। যাতে কোন ভাই কোন ডাক্তারের কাছে না গিয়েই কাজের সময় আহত হলে নিজেরাই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারে।
বাড়িওয়ালার বক্তব্য ঃ এদিকে টঙ্গীর যে ৬ তলা বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়েছে সেই বাড়ির মালিক ছিলেন জেসমিন আক্তার। জেসমিনের মৃত্যুর পর তার একমাত্র মেয়ে নাসরিন স্বামী-সন্তান নিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে বাস করেন। নাসরিন জানান, গত ৫ জুলাই সহোদর ভাই পরিচয়ে দুই যুবক চার তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। ভাড়া নেয়ার সময় কথিত বড় ভাই জানান, তিনি নতুন বিবাহ করেছেন। আগামী ২৪ জুলাই নতুন বউ নিয়ে বাসায় উঠবেন। বাসাটি ভাড়া নেয়ার সময় তারা অগ্রিম হিসেবে দুই হাজার টাকাও জমা রাখেন। গত ১৫ জুলাই কথিত দুই ভাই বাসায় উঠেন। ২৪ জুলাই ফ্যামিলিসহ বাসায় উঠার সময় তাদের ভোটার আইডি কার্ডসহ পরিচয়পত্র বাড়িওয়ালার কাছে জমা দেয়ার কথা ছিল। নতুন আস্তানায় উঠার ছয়দিনের মাথায় র‌্যাবের জালে আটকা পড়েন তারা।
সাকিব নিখোঁজ হয় ১৪ জুলাই ঃ এদিকে গ্রেফতারকৃতদের একজন নাজমুস সাকিব নিখোঁজ হয়েছেন মর্মে তার বড় বোন শামীমা আক্তার গত ১৫ জুলাই টঙ্গী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী নং- ৬৩৭ করেন। পরে শামীমা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সাকিব গত ১০ জুলাই তার (শামীমার) টঙ্গীর আউচপাড়ার বাসায় বেড়াতে আসেন। সে গত ১৪ জুলাই ভোর সাড়ে ৪টায় ফজরের নামাজ আদায় করতে বাসার পাশের মসজিদে যায়। এর পর সে আর বাসায় ফিরেনি। তাকে সাদা পোশাকের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় বলেও শামীমা অভিযোগ করেন। সাকিব এবছর যশোর আমিনিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষার্থী। শামীমার এই অভিযোগের ভিত্তিতে সাকিবের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে সংবাদপত্রে রিপোর্টও প্রকাশিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীর্ষ প্রশিক্ষকসহ ৪ জেএমবি আটক বিপুল বিস্ফোরক-অস্ত্র উদ্ধার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ