Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বিপাকে

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

সরকার প্রতিমাসেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কমর্চারীদের বেতন দিচ্ছে। ঈদের আগে উৎসব ভাতাও পাবেন তারা। তবে বিপাকে রয়েছেন নিজস্ব আয়ে চলা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ করেই গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটির ফলে আদায় হয়নি মার্চ মাসের টিউশন ফি। ফলে অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। একারণে অনেক প্রতিষ্ঠানেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। ফলে একধরনের মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে উভয় সঙ্কটে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। একদিকে করোনার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি চাইতে পারছেন না মানবিক দিক বিবেচনায়। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান বিকাশে ফি পরিশোধের আহŸান জানিয়ে এসএমএস দিয়েছিল তারাও আশাব্যাঞ্জক সাড়া পাননি। অন্যদিকে অন্যান্যদের মতো শিক্ষক-কর্মচারীরাও করোনাকালে সঙ্কটে রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতার উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের ফান্ড থেকে মার্চ মাসের বেতন দিলেও এপ্রিল ও মে মাসের বেতন এবং ঈদের উৎসব ভাতা প্রদান নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রূপনগর মডেল স্কুল এন্ড কলেজসহ রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধের জন্য নোটিশ ও এসএমএস দিয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদেরকে টিউশন ফি পরিশোধের জন্য নোটিশ দিয়েছে। রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।

এদিকে স¤প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এক আদেশে টিউশন ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিলে বা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায়ের অনুরোধ জানানো হয় আদেশে। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোটাই টিউশন ফি নির্ভর। আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করব, তারা যেন টিউশন ফি এর ব্যাপারটা বিবেচনা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৫৫ হাজার বেসরকারি ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে সঙ্কটে আছে। এগুলোর মধ্যে ৪০ হাজারই কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে ৬ লাখের মতো শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। ইতোমধ্যে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংগঠন প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা তহবিল হতে সহায়তা চেয়েছে। বেসরকারি ৯ হাজার নন-এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় আছেন আরও অন্তত ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটির সক্ষমতা রয়েছে কয়েকমাস বেতন-ভাতা চালিয়ে নেয়ার মতো। কিন্তু বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই টিউশন ফি’র ওপর নির্ভরশীল। এই সংখ্যা ৯০-৯৫টি হবে। যেখানে অন্তত : ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। কিন্তু মার্চ মাস থেকে টিউশন ফি আদায় বন্ধ থাকায় তারাও বেশ সমস্যায় রয়েছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য জানান, এভাবে চলতে থাকলে শুধু বেতন-ভাতা বন্ধ কেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলাম তা-ও ছাড়তে হবে। এছাড়া শতাধিক ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে আরও কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। সবমিলে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতনভাতা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে সঙ্কট।

জানা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা যথাযথভাবে পরিশাধের ব্যাপারে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর চাপ আছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধিভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধের তাগিদ আছে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতার সংস্থান হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিষ্ঠানের ভবনের ভাড়া, বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের বিল পরিশোধসহ অন্যান্য খরচও তারা এই অর্থে পরিশোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় বন্ধ আছে। এসব কারণে তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা চেয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করেছে। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট।

 



 

Show all comments
  • Mahfuzul Hoque ১৫ মে, ২০২০, ৩:২৬ পিএম says : 0
    সরকারি চাকরিজীরা ঘরে বসে টাকা পায় আর আমরা না খেয়ে মরি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেসরকারি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ