Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনা পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থা ও ইসলাম

ড. মুহাম্মদ আমান উদ্দীন মুজাহিদ | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

বর্তমান পৃথিবী ইতিহাসের চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিশ্ব মানবতার করুণ আহাজারি আর মৃত্যুর মিছিল পৃথিবীর সর্বত্র। করোনা নামক ভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরোবিশ্ব। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজের বিশ্ব বিখ্যাত ভাইরোলজিস্টরা স্বীকার করছেন, এ এক অদৃশ্য ভাইরাস, যা ইতিপূর্বে পৃথিবীতে কেউ দেখেনি। পারমাণবিক শক্তিধর পৃথিবীর পরাশক্তিরা এ অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটিতে পৌঁছেছে। বিশ্ব মোড়ল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। ইউরোপের পাদপিঠ লন্ডন, ইতালী, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিতেও মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। এশিয়া-আফ্রিকার অবস্থাও অবনতির দিকে। সর্বোপরি করোনা নামক এই অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অসহায় আত্মসমর্পণ বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। অথচ সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে বিশ্ব মানবতার রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে। স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের একক মোড়ল আমেরিকার নেতৃত্বে প্রায় ৫০ লক্ষ বনী আদমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু মাত্র ২০০৩ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার তারা সামরিক খাতে ব্যয় করেছে। দীর্ঘকাল ব্যাপী তাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোনো দেশ সন্ত্রাস করতে পারে কিংবা গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ করতে পারে বলে মনে করলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সে দেশে হামলা চালিয়ে দখলদারী প্রতিষ্ঠার অধিকার রাখে। বলা বাহুল্য, এই অধিকার মার্কিনীদের কেউ দেয়নি, বরং তারা গায়ের জোরেই এ অধিকারের অধিকারী হয়ে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি-এর অধ্যাপক নোয়াম চামস্কি বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র Rogue State হচ্ছে সেই সব রাষ্ট্র যারা র‌্যাডিকাল জাতীয়তাবাদের অনুসারী। কোন অপরাধ করুক বা না করুক, যে সব রাষ্ট্র মার্কিনীদের হুকুমকে অগ্রাহ্য করে তারাই দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র। অথচ অধ্যাপক নোয়াম চামেস্কির মতে, বর্তমান বিশ্বে আসল দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হলো খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। কারণ দেশটি এ যাবত আনবিক বোমা, জীবাণু বোমাসহ যত মানববিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যত শহর জনপদ ধ্বংস করেছে, যত মানুষ হত্যা করেছে, যত মানুষকে পঙ্গু-স্বজনহারা ও এতিম করেছে, যত দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করেছে, মানব সভ্যতা ও মূল্যবোধের উপর যত আঘাত হেনেছে এবং আজ অবধি আঘাত হেনে চলেছে গত ৬০ বছরে পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্র তার এক হাজার ভাগের এক ভাগও করেনি। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার ধ্বংসযজ্ঞ তার বাস্তব প্রমাণ। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একক পরাশক্তি আমেরিকা ইসলাম ও মুসলমানদেরকেই তার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী শক্তি হিসেবে ধরে নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী পুনর্জাগরণ ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামকে মৌলবাদ ধর্মান্ধ বা একটি উগ্র মতাদর্শ হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস তারা বিগত ৫০ বছর ধরে চালিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা অধ্যাপক হান্টিংটন তার The Class Of Civilization রচনা করে মূলত ইসলামকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। হান্টিংটনের থিসিসের জবাব অধ্যাপক এডওয়ার্ড ডব্লিউ সাঈদ তার The Class Of Ignorance শীর্ষক প্রবন্ধে দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বিশ্বের নির্ধারিত ‘সভ্যতা’ বিষয়ে হান্টিংটনের সংকীর্ণ প্রণালী বা বিন্যাস সংস্কৃতির গতিশীল আন্তঃনির্ভরতা ও অন্তক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। এটি একটি কল্পিত ভূগোলের উদাহরণ, যেখানে এমনভাবে একটি বিশ্বকে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট কিছু রাজনীতিকেই বৈধতা দেয়া হয়েছে। হান্টিংটন ইসলাম ও মুসলিমদের চলমান পুনর্জাগরণকে পশ্চিমা সভ্যতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ কথা অনস্বীকার্য যে, নাস্তিক্যবাদী আদর্শ সমাজতন্ত্রের পতনের পর পুঁজিবাদী পশ্চিমা সভ্যতার ধারক ও বাহকরা উৎকণ্ঠিত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নানাভাবে। ইসলামকেই তাদের ভবিষ্যৎ প্রতিদ্ব›দ্বী বলে বিবেচনা করে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহন করছে। ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত আর ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ পশ্চিমা বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। তাইতো দেখা যায়, মার্কিন আগ্রাসনের শিকার ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান। প্রায় ৫০ লক্ষ বনী আদমকে তারা হত্যা করেছে এ সব অঞ্চলে। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের দীর্ঘ সংগ্রামের এবং দুঃখ-দুর্দশার করুণ ইতিহাস বিশ্ব মানবের অজানা নয়। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় ইহুদিরা মুসলমানদেরকে তাদের জন্মভূমি থেকে উৎখাত করে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
ভারতীয় মুসলমানরা ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসক ও তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী প্রত্যহ কাশ্মিরের মুসলমানদের হত্যা করছে। আরাকানের মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর ভয়াবহতম গণহত্যা এ শতাব্দীর কলংক হয়ে আছে। সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী মুসলিম নির্যাতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের একই পরিকল্পনায় ও একই ছকে গাঁথা। ইউরোপের মুসলিম দেশ বসনিয়ার উপরে চালানো গণহত্যা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষ এখনো ভুলেনি। বসনিয়ায়, চেচনিয়ায় যখন লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পৈশাচিক উল্লাস করেছিলো তখন আজকের ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো পুলকিত হয়েছিলো। এক কথায় বিশ্বের মুসলিম বসতিগুলো আজ ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি, বৌদ্ধমৌলবাদী অথবা ইহুদিবাদী কিংবা উগ্র খ্রিস্টানদের কালো থাবায় জর্জরিত। মুসলিম ও ইসলামী পুনর্জাগরণের বিরুদ্ধে তারা বরাবরই ঐক্যবদ্ধ ও নানান চক্রান্তে লিপ্ত। আরাকান, উইঘুর, কাশ্মির, গুজরাট, ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, বসনিয়াসহ তাবৎ মুসলিম দুনিয়ায় পাইকারি মুসলিম নিধন তারই উজ্জ্বল সাক্ষী। এ ছাড়া মুসলিম সংখ্যালঘু দেশগুলোতে মুসলমানরা অত্যন্ত দুঃখ, কষ্ট ও সীমাহীন আতংকের মধ্যে দিনযাপন করছে। সাম্প্রতিককালে ভারতে এনআরসি চাপিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বাস্তচ্যুত করার ঘটনা তার উজ্জ্বল উদাহরণ। মুসলিম সম্প্রদায়কে নির্মূল করার জন্য মূলত তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইউরোপের ক্রমাগত ইসলাম ও মুসলিম কার্যক্রম নিয়ে শংকিত ইউরোপের বেশ কিছু গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। তারা ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছে বর্তমান হারে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেন, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক হবে মুসলমান। ইটালির University
Of Bologna একটি প্রজেক্ট গ্রহণ করেছে যার প্রাথমিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০, যা পর্যায় ক্রমে বাড়ানো হবে। তাদের প্রজেক্টের শিরোনাম হচ্ছে Emerging Islam in Europe। বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, কতটুকুন শংকিত হলে তারা দীর্ঘমেয়াদী এ প্রজেক্ট গ্রহণ করতে পারে। আফ্রিকা জুড়ে কয়েকশত খ্রিস্টান মিশনারী কাজ করছে দরিদ্রপীড়িত মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার জন্য। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মসলিম দেশসমূহ এর বাইরে নয়। মূলতঃ মুসলিম বিশ্ব বর্তমানে অত্যন্ত সংকটজনক সময় অতিক্রম করছে। মুসলিম উম্মাহর চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গকে এ সংকটের কারণ উদঘাটন, বিশ্লেষণ ও মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ফিকহী মাসয়ালা নিয়ে বিভক্তির সময় আর নেই। বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভাজনের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঈমানী চেতনা নিয়ে মুসলিম যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের জন্য এটা অপরিহার্য। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইসলামকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিজয়ী করতে হবে।
করোনা নামক ভাইরাসের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের দৃশ্য পৃথিবীর মানুষকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় সম্পর্কে। ভোগবাদী ও বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থা মানুষকে শিখানোর চেষ্টা করেছে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই। পৃথিবীর সব কিছুই প্রকৃতির সৃষ্টি। এই প্রকৃতির মাঝেই সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম ক্ষমতা এবং এ পৃথিবীর সব কিছু তারই সৃষ্টি এ কথা নতুন করে পৃথিবীবাসী বুঝতে পেরেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রীর জন সম্মুখে কান্নার দৃশ্য আর বলতে থাকা ‘আমাদের আর কিছুই বর্তমানে করার নেই, সব কিছুই এখন ঐ উপরওয়ালা বা আসমানের মালিকের হাতে’ই প্রমাণ করে তাদের অসহায়ত্ব। বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৭৮০ কোটি জনসংখ্যার মাঝে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ নাস্তিক বা যারা কোন ধর্মের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। ধর্মের জীবনাচারের তাদের জীবন ও সংস্কৃতিতে কোনো প্রভাব নেই। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এ বিশাল জনগোষ্ঠি নতুন করে ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে গভীর চিন্তামগ্ন হবে। খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটা বড় অংশ তাদের ধর্মের অসারতা ও বৈপরীত্য বুঝতে পেরে প্রতিনিয়ত ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করছে।
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ ও গবেষণা অতীতের চেয়ে বহুগুণে বাড়ছে। পাশ্চাত্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ইসলামের সমসাময়িক বিষয় ও অতীতের গৌরবাজ্জ্বল ভূমিকা ও আবিষ্কার নিয়ে পিএইচডি গবেষণা হচ্ছে। ইসলামের অর্থ ব্যবস্থা, সুদবিহীন ব্যাংক বীমার বিকাশ, ধর্ম ও নৈতিক মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস, ইসলামের বিভিন্ন অনুশাসন পালন, ব্যক্তিগত পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে এর ক্রমাগত কার্যকারিতা ও উপযোগিতা দিন দিন ব্যাপক আলোরণ সৃষ্টি করছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জনগোষ্ঠির মাঝে এ উপলব্ধি ব্যাপকভাবে তৈরি হচ্ছে যে ইসলাম কেবল মাত্র নিছক কোনো ধর্ম নয় বরং সমাজ পরিবর্তনে আল্লাহ প্রদত্ত এক বৈপ্লবিক জীবনাদর্শ। এ ধর্মের অনুসারী মুসলিমরাও প্রচলিত অর্থে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় নয়, বরং একটা মিশনারি জাতির নাম। যে জাতির মূল মিশন হচ্ছে ইসলামের দাওয়াতী কাজ।
করোনাকোয়ারেন্টাইনে থাকার কারণে পৃথিবীর উন্নত ও সভ্য রাষ্ট্রের দাবিদার পারমাণবিক ও তথ্য প্রযুক্তির শীর্ষে থাকা দেশগুলোর বিশাল জনগোষ্ঠির মাঝে তাদের ভোগ বিলাস, অশ্লীলতা, হতাশা নৈরাজ্য ও অপরাধ প্রবণতা, সম্পদের পিছনে অবিরাম ছুটতে থাকার মানসিকতা, বিশাল বিত্তবৈভব সর্বোপরি এ বিশাল জমিন আসমান ও তার অন্তর্নিহিত সৃষ্টির রহস্য এবং তার যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং তিনিই যে সকল ক্ষমতার আধার এ ধ্রুব ও চিরসত্য কথাটি তাদের সামনে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর বাস্তবতা দেখে চিন্তাশীল মহল বলতে বাধ্য হচ্ছেন, ভোগের পেয়ালায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত পাশ্চাত্য সভ্যতা আজ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ সভ্যতার জীবনী শক্তি ও অব্যাহতভাবে লোপ পাচ্ছে। সমাজতন্ত্রের পতনের পর বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী গণতন্ত্র সা¤্রাজ্যবাদীদের মতাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ গণতন্ত্রের মাঝে নৈতিক, আধ্যাত্মিক, অর্থনৈতিক সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ কিংবা মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আশা করেও পৃথিবীবাসী সম্পূর্ণ হতাশ। মূলত শিল্প বিপ্লব পরবর্তী যত মানব রচিত মতবাদ বা মতাদর্শ পৃথিবীতে এসেছে তার অসারতা ও চরম ব্যর্থতা বর্তমান পৃথিবীতে আদর্শ হিসেবে কালজয়ী ইসলামের প্রাধান্য ও অপরিহার্যতা অনেক বেশি সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। পৃথিবীর বর্তমান পরিস্থিতি এ কথাই স্বীকার করছে যে ইসলামই আগামী পৃথিবীর অপরিহার্য বাস্তবতা। ভারতীয় উপমহাদেশ, গোটা মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মালেশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে অনেক সংগঠন ও আন্দোলন ইসলামের ভিত্তিতে সমাজ, অর্থ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাফল্য পেয়েছে। বৃহত্তর ইউরোপ, আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়ায় ইসলাম একটি ক্রম অগ্রসরমান ধর্ম হিসেবে প্রসার লাভ করছে। অসংখ্য গির্জা, প্যাগোডা মসজিদ রূপে পরিগণিত হয়েছে। ইসলামের সৌন্দর্যে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা ইসলাম গ্রহণ করছে। মূলত ধর্ম হিসেবে ইসলাম ছাড়া আর কোনো ধর্মের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রের জন্য বিধিবদ্ধ বিধান না থাকায় ইসলাম ক্রমান্বয়ে আগামীর অপ্রতিদ্ব›দ্বী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব সংকট, অনৈক্য, শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া, ক্ষমতার মোহ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে দূরে থাকার কারণেই বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে ইসলাম পিছিয়ে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী ইসলামী পুনর্জাগরণকে স্তব্দ করে দেয়ার নানা কৌশল ও ষড়যন্ত্র চলছে। সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও পশ্চিমা কৌশল ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতের হিংস্র থাবা ইহুদিবাদী সভ্যতার দুশমন ইসরাইলের মরণাঘাত মোকাবেলা করেই দেশে দেশে ইসলাম আগ্রসর হচ্ছে এবং ইসলাম বিশ্বময় একটা নতুন সভ্যতা বিনির্মাণের শক্তিতে পরিগণিত হচ্ছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বব্যাপী যে প্রেক্ষিত সৃষ্টি হয়েছে তাতে ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রচার ও প্রসার এবং তার অপরিহার্যতা বিশ্বের বনী আদমের নিকট একমাত্র আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে তা এখন পৃথিবীর এক অনিবার্য বাস্তবতা। তাই বলা যায়, আগামী শতাব্দী হবে ইসলামের শতাব্দী। বিশ্ব গণমাধ্যম ইতোমধ্যে বিশ্লেষণ শুরু করেছে, করোনা উত্তর পৃথিবীতে কে নেতৃত্ব দিবে। বর্তমান বাস্তবতায় এ কথা অনস্বীকার্য যে, ইসলামই আগামীতে বিশ্বের বুকে বিজয়ী শক্তিরূপে আবির্ভূত হবে এটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক: অধ্যাপক ও ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব বলোগনা, ইতালি



 

Show all comments
  • Md. Monjarul Alam ১৬ মে, ২০২০, ৫:৩৮ পিএম says : 0
    well done, go ahead
    Total Reply(0) Reply
  • সালমা রহমান ২৬ মে, ২০২০, ১১:৫৬ পিএম says : 0
    হান্টিংটনের বইটির নাম The Clash Of Civilization. আর প্রত্যুত্তরে লেখা বইটির নাম The Clash Of Ignorance। দয়া করে বানান ঠিক করে দিন। ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন