Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংকের কার্যক্রম বাড়াতে ও গতিশীল করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

শাটডাউন ও লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে। গার্মেন্ট কারখানা, অন্যান্য শিল্পকারখানা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মার্কেট থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলতে শুরু করেছে। কোথাও পুর্নোদ্যমে, কোথাও সীমিত পরিসরে। তবে অর্থনীতির লেনদেনের প্রধানতম কেন্দ্র ব্যাংকিং খাত যেন স্থবির হয়ে রয়েছে। অথচ সবার আগে এ খাতটিই সচল রাখা জরুরি ছিল। শুরুর দিক থেকেই ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ কিংবা খুলেও খুলছে না’র মতো করে চলছে। করোনায় এ খাতের অনেকে আক্রান্ত এবং কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করার পরপরই যেন খাতটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রণোদনা হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা দেয়। তারপরও ব্যাংক যেন খুলতে চাইছে না। এর ফলে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা পড়েছে চরম বিপাকে। এরা না পারছে ঠিকমতো আর্থিক লেনদেন করতে, না পারছে ব্যবসায়িক কর্যক্রম চালাতে। সরকার ব্যাংকের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিলেও অনেক ব্যাংক তা মানছে না। কোনো ব্যাংক কার্যক্রম চালালেও তার সব শাখা খোলেনি। এতে ব্যাংকের গ্রাহকদের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় ছুটাছুটি করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কোনো মাথাব্যথা আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
এখন স্বল্প পরিসরে হলেও ঈদ মৌসুম চলছে। স্বাভাবিক সময়ের ঈদের পরিস্থিতি না থাকলেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড একেবারে থেমে নেই। ব্যাংকের এটিএম বুথ চালু থাকলেও তা কেবল অর্থ উত্তোলন করার জন্য। ব্যাংকের গ্রাহকরা শুধু অর্থ উত্তোলনই করে না, তারা অর্থ জমা থেকে শুরু করে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও করে থাকে। ব্যবসায়ীদের থাকে নানামুখী ব্যাংকিং কাজ। ঈদের সময় হলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্ট কারখানা থেকে শুরু করে কর্পোরেট জগতের প্রায় সবার বেতন-বোনাস ব্যাংকের মাধ্যমেই প্রদান করা হয়ে থাকে। ঈদ উপলক্ষে স্বাভাবিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস দেয়া শুরু হয়েছে এবং তা ঈদ ছুটির শেষ দিন পর্যন্ত চলবে। অথচ এ সময়েও ব্যাংকগুলোর সেবা কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত করে রাখা হয়েছে। গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই ব্যস্ততম সময়ে ব্যাংকের কাজ সারতেই যদি হাতের সময় চলে যায়, তবে তারা বাকি কাজ করবে কখন? করোনার কারণে এমনিতেই পুরো অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে এর কার্যক্রম চালু এবং গতিবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো থাকবে সবার সামনে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এ খাতটিই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। যেন হাত-পা গুটিয়ে খোলসবন্দি হয়ে আছে। করোনায় আক্রান্ত হয়নি এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, তাই বলে কি সেসব ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে আছে? করোনার মধ্যেই এবং এর বাস্তবতা মেনেই জীবনের তাকিদে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সেসব ক্ষেত্রের লোকজন কাজে নেমে পড়েছে। করোনার মধ্যেই কীভাবে কাজ করবে, তার প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতি ঠিক করেই তারা কাজ করছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত করোনা নির্মূল না হবে, ততদিন পর্যন্ত তারা সীমার মধ্যেই বন্দী হয়ে থাকতে ইচ্ছুক। অথচ কেউই বলতে পারছে না, করোনা কবে নির্মূল হবে বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। তাই বলে কি সবকিছু অচল করে দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে? আমরা দেখেছি, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলো করোনার মধ্যেই লকডাউন তুলে দিয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনৈতিক অবনমনের বাস্তবতা বিবেচনা করেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলেছেন, লকডাউন করা উচিত হয়নি। কারণ এর প্রতিক্রিয়া অনেক দেশের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি হার্ড ইমিউনিটি বা করোনার মধ্যে অভিযোজিত হয়ে বসবাসের কথা বলেছেন। যেহেতু করোনার হাত থেকে মুক্ত হওয়ার আশু কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে এই অভিযোজন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল করার দায়িত্বই হচ্ছে ব্যাংকের। অথচ এ খাতটি প্রায় অচল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক তার ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। এমনকি সরকারের তরফ থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে প্রণোদনামূলক কর্মসূচি নিয়েছে তাও ব্যাংক খাতটির অদূরদর্শীতার কারণে গতি পাচ্ছে না।
ঈদের এ সময়ে অর্থের লেনদেন যেমন বৃদ্ধি পায়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ সময়েও যদি ব্যাংকের কার্যক্রম সংকীর্ণ রাখা হয়, তবে মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। তাছাড়া এ সময়ে জাল টাকার বিস্তার ঘটে। জালনোট কারবারি চক্র সক্রিয় থাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা নিয়েই মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে, আর্থিক লেনদেন করছে। এ অবস্থায় জালনোটের কারবারিদের খপ্পড়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ও প্রাচারণা চালানো হয়নি। ব্যাংকের সময়সূচি ও সেবা বৃদ্ধি করে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নেয়নি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। যতই জরুরী পরিস্থিতি হোক, তা মোকাবেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকের কার্যক্রম সীমিত করে রাখা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শাটডাউন-লকডাউন
আরও পড়ুন