Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ হচ্ছে জোরদার

সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত : ভ্যাপসা গরমে মৌসুমী রোগের প্রকোপ : করোনাকালে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বিপদ মাথায় উপকূলবাসীর ভয়-শঙ্কা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২০, ২:০৮ পিএম

বঙ্গোপসাগরে গর্জে উঠেছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’। এটি শক্তি বৃদ্ধি করছে। আজ রোববার সকাল থেকে আরও ঘনীভূত ও জোরদার হচ্ছে। শনিবার মাঝ রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় গভীর নিম্নচাপটি। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের ‘আমফান’ নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই ‘আমফান’ শব্দটির অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি, শক্তিমত্তা ইত্যাদি
সর্বশেষ আজ দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র অবস্থান বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ থেকে বেশ দূরে। সাড়ে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর খুবই উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
সঙ্কেত আরও বেড়ে গেলে বন্দর ও নৌ-পরিবহন কার্যক্রম ক্রমেই সঙ্কুচিত এবং আপাতত বন্ধ রাখা হবে। করোনাকালে ঘূর্ণিঝড় আরও কী বিপদাপদ দুর্ভোগ বয়ে আনে এ নিয়ে উপকূলবাসীর মাঝে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণরোধে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে হলে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া আ যাওয়া-আসা কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘আমফান’র গতিপথ-
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র গতিমুখ এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের উপকূল-ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এরপরই ধেয়ে আসতে পারে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা ও আংশিক দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল বরাবর। ‘আমফান’ আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবার বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। এর আগে-পরে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে তার গতিপথে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ আজ রাতের মধ্যে অথবা সোমবার নাগাদ সমুদ্রে প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তবে উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় অতিবৃষ্টি বা প্রকৃতিগতভাবে শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়েও যেতে পারে। বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ ও বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদগণ এ ধরনের পূর্বাভাস দিচ্ছেন।
‘বুলবুল’র মতোও ঘটতে পারেÑ
তাদের কেউ কেউ আভাস দেন, এরআগে সর্বশেষ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র সঙ্গে বর্তমান ‘আমফান’র গতিপথ ও আঘাতের প্রায়ই মিল থাকতে পারে। ‘বুলবুল’ ভারত হয়ে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরার উপর দিয়ে স্থানভেদে দুর্বল থেকে মাঝারি ধরনের আঘাত হানে গত বছর ৯ ও ১০ নভেম্বর-২০১৯। তখন দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ সমুদ্রে ঘোরপাক খাবে আরও অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন। এরফলে এটি ঠিক কবে কখন ধেয়ে এসে কোথায় আঘাত করবে, কিংবা সুনির্দিষ্ট কোন দিক বরাবর যাবে তা নির্ভর করছে আরও অনেক সময় ধরেই ঝড়টি সমুদ্রে গড়ানো বা ঘূর্ণনের উপর। তাছাড়া অনেক সময়েই ঘূর্ণিঝড় গতিপথে তার মর্জি, শক্তি, সম্ভাব্য দিক পরিবর্তন করতে পারে। আবার তা নাও করতে পারে। ‘আমফান’ এক পর্যায়ে সমুদ্রে ভয়াল শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। আবার আঘাতের সময়কালে শক্তি হারিয়েও ফেলতে পারে।
অসহ্য ভ্যাপসা গরম : উপকূলবাসীর আরেক বিপদ-
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র সক্রিয় প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরমে ঘামে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অন্যদিকে করোনাকালে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বাড়তি বিপদ মাথায় নিয়ে উপকূলবাসীর মাঝে বিরাজ করছে ভয়-শঙ্কা। উপকূলের অনেক জেলায় গুমোট আবহাওয়া যেন আসন্ন দুর্যোগের জানান দিচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি-
আজ দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র সর্বশেষ অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আমফান সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টি আজ দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৩০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
খরার দহনে মৌসুমী রোগের প্রকোপ-
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র ঘনঘটাকে ঘিরে বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই খরার দহন বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিনের হঠাৎ ভ্যাপসা ঘাম ঝরানো গরমের দাপটে সর্দি-কাশি, জ্বর, গলাব্যাথা, ডায়রিয়া, আমাশয়, হাঁপনিসহ মৌসুমী রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। যা করোনাকালে জনস্বাস্থ্যের উপর বাড়তি চাপ ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিয়েই পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়ছেন মানুষজন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়া

২৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ