Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে ১০ হাজার মানুষকে টিকা দেবে অক্সফোর্ড

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২০, ১০:১৮ এএম

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধকটি পরীক্ষার প্রথম ধাপ পেরিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরির লক্ষ্যে এবার তারা পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে যাচ্ছে। এই ধাপে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের শরীরে তারা প্রতিষেধকটি পরীক্ষা করবে।

প্রাণীদের পরে হিউম্যান ট্রায়াল বা মানুষের দেহে এটির পরীক্ষা শুরু হয়েছে এপ্রিলে। প্রথম ধাপে ১০০০ জনের উপরে প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে। তার ফলাফল বিশ্লেষণ চলছে। এ বার এই পরীক্ষাটিই প্রচুর সংখ্যক মানুষ ও বয়স্কদের উপরে চালাতে চায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। জোর কদমে তার প্রস্তুতিও চালাচ্ছে সমান্তরাল ভাবে। প্রতিষেধক পরীক্ষার জন্য তারা ব্রিটেনের বিভিন্ন অংশ থেকে ১০ হাজার ২৬০ জনকে বেছে নিচ্ছে সহযোগী সংস্থাগুলির মাধ্যমে। তাদের মধ্যে ৫৬ থেকে ৬৯ বছর বয়সিরাই বেশি। অল্প সংখ্যকের বয়স ৭০-এর বেশি এবং ৫ থেকে ১২ বছর বয়সি। প্রবীণ, বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কেমন কী তারতম্য হয় তা দেখা হবে।

তৃতীয় পর্যায়ে হবে ১৮-ঊর্ধ্বদের উপরে পরীক্ষা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে সাবালকদের একটি অংশকে দেয়া হবে ছাড়পত্র পাওয়া কোনও প্রতিষেধক। অপর অংশ পাবে জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরি প্রতিষেধক চ্যাডক্স ১। উভয় দলের মধ্যে ফলের কী ফারাক হচ্ছে, দেখা হবে। জেনার ইনস্টিটিউট এই প্রতিষেধকটি তৈরি করেছে অ্যাডেনোভাইরাস থেকে। যার কারণে শিম্পাঞ্জিদের সাধারণ সর্দি হয়ে থাকে। ওই ভাইরাসের জিনকে এমন ভাবে বদলে নেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষের দেহে ঢুকে কোনও মতেই এটি সংখ্যায় না-বাড়তে পারে। এদের অল্প উপস্থিতিতেই দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ-এর প্রধান, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলছেন, ‘ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা খুব ভাল ভাবেই এগোচ্ছে। এ বার আমরা বয়স্ক ও বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে আমাদের প্রতিষেধকটি কেমন কাজ করছে, সেটা দেখতে চাই।’ জেনার ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্টের কথায়, ‘চ্যাডক্স ১-এর ক্ষমতা যাচাই ও নিরাপত্তা, উভয় দিকেই নজর রাখা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় ৫৫-ঊর্ধ্বরা অংশ নিতে পারেননি। অথচ তাদের অনেকেই পরীক্ষার অংশ হতে আগ্রহী। এ বার সেটা সম্ভব হবে। এই দফার পরীক্ষা হবে দেশের বিভিন্ন অংশে।’

এদিকে আমেরিকা জানিয়েছে, পরীক্ষার গতি বাড়াতে ও দ্রুত প্রতিষেধক উৎপাদনের পথ সুগম করতে তারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ১২০ কোটি ডলার পর্যন্ত জোগাবে। ওষুধ তৈরির সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা সাহায্য করবে। উৎপাদনের বিষয়ে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চলছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানাচ্ছে, দেড় বছরের মধ্যে তারা প্রতিষেধকের ১০০ কোটি ডোজ় তৈরি করতে ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহ শুরু করে দিতে পারবে। তবে প্রতিষেধক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই প্রথম ব্যাচের ওষুধ তৈরি করতে হবে ঝুঁকি নিয়ে। পরীক্ষায় সেটি উতরোবে কি না বা আদৌ সেগুলি ব্যবহার করা যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা থাকবে না।

প্রাণী ও মানবদেহে পরীক্ষার ফল সবে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত কিছুটা আশাব্যঞ্জক ফল মিললেও, দেখা গিয়েছে প্রতিষেধকটি ছ’টি বাঁদরকে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করেছে‌ ঠিকই, তবে প্রতিষেধক পাওয়া ও না-পাওয়া, দু’দল বাঁদরের নাকেই প্রায় সমসংখ্যক ভাইরাস বাসা বেঁধে রয়েছে। তা ছাড়া, অন্য গবেষণা বলছে, নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক পাওয়া গেলেও হয়তো তা বছর বছর নিতে হবে ফ্লুয়ের মতো। নেদারল্যান্ডসে একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার সূত্রে এমনও মনে করা হচ্ছে, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা হয়তো স্থায়ী হবে মাত্র ছ’মাস। রিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট ইয়ান জোন্স, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পোলার্ডদের আশা, দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতাই মিলবে প্রতিষেধকে। তবে অবশ্যই সব কিছু প্রত্যাশা মতো এগোলে। সূত্র: ইউরো নিউজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ